স্টাফ রিপোর্টার,
সুনামগঞ্জে শীত মৌসুমে সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম কমছে না -ছবি: সিলেটের কাগজ
সুনামগঞ্জে শীত মৌসুমে সবজির সরবরাহ বেড়েছে। তবে দাম না কমায় মৌসুমি সবজি কিনতে পারছেন না অনেকেই। সোমবার সকালে শহরের জেল রোড, জগন্নাথবাড়ি রোড, কিচেন মার্কেট, ষোলঘর, ওয়েজখালী বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্ট ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
শহরের বাজারগুলোতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি আকারভেদে প্রতি কেজি ৬০-৮০ টাকা, ছোট আকারের লাউ ৪০-৫০ টাকা, মাঝারি আকারের লাউ প্রতি পিস ৫০-৬০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। এদিকে প্রতিকেজি শিম ৭০-১০০-১২০ টাকা, বেগুন মানভেদে ৫০-৬০-৮০ টাকা, বরবটি ৬০-৮০ টাকা, পেঁপে ৫০-৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ১২০-১৫০-১৬০ টাকা, টমেটো ১৫০-১৮০ টাকা, করলা ৬০-৮০ টাকা, দেশি গাজর ১০০ টাকা, চায়না গাজর ১৫০ টাকা, পটল ৫০-৬০ টাকা, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়স, শসা, ঝিঙা, কচুর মুখি, মুলা, ধুন্দল, ৪০-৫০-৬০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।
এছাড়া লেবুর হালি ২০ থেকে ৫০ টাকা, ধনেপাতার কেজি ৬০-৮০ টাকা, কলার হালি ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। অপরদিকে লাল শাক ২০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ২০-৩০ টাকা, মুলা শাক ২০-৩০ টাকা, পালং শাক ২০ থেকে ৩০ টাকা, কলমি শাক ২০ টাকা, পুঁইশাক ৫০ টাকা আঁটি দরে বিক্রয় করতে দেখা গেছে।
বাজারে প্রতি ডজন সাদা ফার্মের ডিম ১৪০ টাকা, লাল ফার্মের ডিম ১৪৫-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া হাঁসের ডিম প্রতি ডজন ২২০ টাকা, দেশি মুরগির ডিম প্রতি ডজন ২৪০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
মুরগির বাজার ঘুরে দেখা, যায় প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা থেকে ৫৩০ টাকা এবং লেয়ার প্রতি পিস ৭০০ দরে বিক্রি করা হচ্ছে। গরুর মাংস কেজি প্রতি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস কেজি প্রতি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে কেজি প্রতি দেশি পেঁয়াজ ১৫০ টাকা, এলসি পেঁয়াজ ১০০-১১০-১২০ টাকা, আলু ৭০-৮০ টাকা, মানভেদে নতুন আলু ১০০-১১০-১৩০ টাকা, রসুন ২২০ টাকা এবং আদা ১২০-২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে পাঁচ কেজি সয়াবিন তেল ৮১৮ টাকা, দেশি মসুর ডালের কেজি ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে।
চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেজি প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৬-৫০ টাকা, আটাশ চাল ৬১-৬২ টাকা, নাজির শাইল ৬৪-৬৬ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। সুগন্ধী চিনিগুড়া পোলাওয়ের চাল ১৩০ টাকায় বিক্রয় করা হচ্ছে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাষের শিং মাছের কেজি (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, ছয় কেজি ওজনের রুই মাছ ৪০০ টাকা, এক কেজি ওজনের রুই মাছ ২৮০-৩০০ টাকা, কার্ফু মাছ ২২০-২৪০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা, পাঙাশ ১৬০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়, বোয়াল ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা, কাতলা ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০-৭০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, মলা প্রকারভেদে ২৫০-৩০০- ৬০০ টাকা, টেংরা ৩০০-৬০০-৮০০ টাকা, কাচকি ৪০০-৫০০ টাকা, পাঁচমিশালি ২২০ টাকা, বাইম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, দেশি কই ১ হাজার ২০০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, আইড় ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, কাইক্ক্যা ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে।
শহরের কিচেন মার্কেটে সবজি বাজারে বাজার করতে এসেছেন সরকারি কর্মচারী রাকু চৌধুরী। তিনি বলেন, সিজন অনুযায়ী সবজির দাম আশানুরূপ কমেনি। এতে নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য এবং দিনমজুরদের পক্ষে সবজি কিনে খাওয়া খুবই কষ্ট হবে। আজকে ফুলকপি ৭০ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। শিমের দামটাও বেশি। শীত মৌসুমে দামটা আরও কমানো দরকার ছিল। বাজার মনিটরিং হলে হয়তো সবজির দাম কেন এতো বেশি জানা যাবে।
প্রাইভেট কোম্পানির চাকরিজীবী রিপন মিয়া বলেন, আমি আজকে ৭০ টাকা কেজি দরে ফুলকপি কিনেছি। এছাড়াও হাফ কেজি করলা ৩০ টাকা, এক আঁটি লালশাক ২০ টাকা এবং দশ টাকার ধনিয়া পাতা কিনেছি। এসব সবজি কিনতে আমাকে ১১০ টাকা দিতে হয়েছে। অথচ গত বছর এই সময়ে এসময় সবজিগুলো ৫০/৬০ টাকায় কিনেছি। এছাড়াও পেঁয়াজ, রসুন,আলু, সয়াবিন তেল যখন কিনতে হয়, তখন মাথা গরম হয়ে যায়। একসঙ্গে বাজার করা আমাদের জন্য কঠিন।
সাজু মিয়া রিকশা থামিয়ে এক কেজি তেলাপিয়া মাছ কিনছিলেন। তিনি জানান, আমাদের গরিবের পাঙাশ মাছ আর তেলাপিয়া মাছ হচ্ছে ভরসা। বাসায় পাঁচ সদস্য নিয়ে আমার সংসার। নিত্যদিন বাজার করি। মাছ কিনলে পরে সবজি কেনা যায় না। সবজি কিনলে চাল কেনা যায় না। এভাবেই দিন চলে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশি। কিন্তু আমরার রুজি কম। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে আমাদের।
খুচরা সবজি বিক্রেতা গোপী রঞ্জন সরকার বলেন, কয়দিন ধরে সবজির দাম উঠানামা করছে। আজকে ফুলকপির দামটা বেশি। আমরা কম লাভেই সবজি বিক্রি করি। কাঁচা মাল থাকলে সমস্যা, নষ্ট হয়ে যাবে।
পাইকারি বিক্রেতা প্রসেনজিৎ দে জানান, আজকে আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে। পেঁয়াজ (এলসি) প্রতিকেজি ৯৫/৯৬ টাকা কেজি, রসুন ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচের কেজি ৯০ টাকা, আদা প্রতি কেজি ১০০ টাকা, শিম প্রতিকেজি ৭০ টাকা, বেগুন ৩৫- ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহির মিয়া বলেন, বাজারে ডিমের চাহিদা কমেছে। কারণ এই সময়ে সবজি বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
ডিমের দামটা কেন বেশি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়দিন আগে ১১৭০/১২০০ টাকায় একশ ডিম বিক্রি হয়েছে। এখনও একই দামে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রি কমলেও ডিমের দাম কমেনি।
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আহমদ আশিফুর রব বলেন, আমরা নিয়মিতই বাজার মনিটরিং করছি। দামটা নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা মনিটরিং বাড়াবো।
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সুনামগঞ্জে সবজির সরবরাহ বেড়েছে। দামটা অন্যান্য জেলার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেখে তারা বিক্রি করছে। বাইরের জেলাগুলোতে দাম কমলে সুনামগঞ্জেও সবজির দাম কমে আসবে। তারপরও যদি অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে থাকলে আমরা বাজারে খোঁজ নেব।