Sunday, November 17, 2024
Homeসিলেট বিভাগমৌলভীবাজারকমলগঞ্জ মহারাসলীলা উদযাপন 

কমলগঞ্জ মহারাসলীলা উদযাপন 

 

 

পিন্টু দেবনাথ, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি :

 

বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভ্যের্য্য এবং

কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শনিবার সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ঊষালগ্নে সাঙ্গ হলো মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মণিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলা। কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের শিববাজারস্থ জোড়ামন্ডবে ১৮২ তম ও

ও আদমপুর ইউনিয়নের তেতইগাঁওস্থ সানা ঠাকুরের মন্দিরে ৩৯ তম রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

 

মাধবপুরে রাত ৮টায় আলোচনা সভা মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সভাপতি প্রকৌশলী যোগেশ্বর সিংহের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ ও নির্মল এস পলাশের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো: ইসরাইল হোসেন, পুলিশ সুপার এম, কে, এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন পিপিএম-সেবা, লক্ষ্মীপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পদ্মাসন সিনহা, মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদর্শন রায়, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবেদীন, কমলগঞ্জ থানার ওসি সৈয়দ ইফতেখার হোসেন প্রমুখ।

 

অপরদিকে রাত ৯ টায় আদমপুরে মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্সে রাসোৎসব উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের।

 

মণিপুরী মহারাস উদযাপন কমিটির আহবায়ক রাজকুমার সিংহের সভাপতিত্বে ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক

সমরেন্দ্র কুমার সিংহ ও অয়েকপম অঞ্জু দেবীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো: ইসরাইল হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন, আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন ও মনিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্সের সভাপতি জয়ন্ত কুমার সিংহসহ আরো অনেকে। পরে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠিত হয়।

 

মণিপুরী সম্প্রদায়ের এ বৃহত্তম উৎসব উপলক্ষে উভয় স্থানে বসেছিল রকমারি আয়োজন ও বিশাল মেলা। রাসোৎসবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দসহ দেশী-বিদেশী পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত হয়েছিল কমলগঞ্জের মণিপুরী অঞ্চল।

 

জানা গেছে, মণিপুরে রাসলীলা প্রবর্তনের একটি গল্প প্রচলিত আছে। মণিপুরের মহারাজা ভাগ্যচন্দ্র যখন কাঞ্চিপুর নামের এক অঞ্চলে বাস করতেন, তখন এক রাতে তিনি স্বপ্ন দেখলেন, শ্রীকৃষ্ণ নিকটবর্তী ভানুমুখ পাহাড়ে কাঁঠালগাছ হয়ে রাজার জন্য অপেক্ষা করছেন। পরদিনই রাজা সেই পাহাড়ে গিয়ে কাঁঠালগাছ খুঁজে পেলেন। গাছটি কেটে রাজধানীতে আনা হলো। রাজধানীর খ্যাতনামা শিল্পীকে রাজা তার স্বপ্নে দেখা কৃষ্ণমূর্তির অনুকরণে কাঠের মূর্তি গড়তে আদেশ দিলেন।

এই মূর্তি প্রতিষ্ঠা উপলক্ষেই তিনি ওই বছর অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লা পূর্ণিমাতে মহারাসলীলা উৎসব প্রবর্তন করেন। মেয়ে বিম্বাবতীও সেই রাসে অংশ নেন। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৭৭৯ সালে। রাসলীলার গানগুলো বিখ্যাত বৈষ্ণব পদকর্তা জয়দেব, বিদ্যাপতি, চ-ীদাস, জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাস প্রমুখের পদাবলি থেকে সংগৃহীত। বাংলা, ব্রজবুলি, মৈথিলি ও সংস্কৃত ভাষার পদ সংকলিত হলেও সাম্প্রতিক কালে মণিপুরি ভাষাতেও (বিষ্ণুপ্রিয়া ও মৈতৈ) রাসলীলার পদ বা গান রচিত হচ্ছে।

সবশেষে রাধা-কৃষ্ণের যুগলরূপের আরতি করা হয়। কিন্তু পরমাত্মা কৃষ্ণ তো জীবাত্মা রাধার সঙ্গে চির-একাত্ম হতে পারেন না। ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’র মতো তার আসা-যাওয়ার লীলা। তাই নিশান্তে কৃষ্ণের বচনানুসারে রাধা ও গোপিণীরা নিজ নিজ গৃহে ফিরে যায়। এই প্রত্যাবর্তন গভীর বেদনাবহ, পরমপুরুষের বিচ্ছেদের সুরে ঘেরা। রাধার চোখের জলে ফেরার সে পথ ধোয়া। রাসলীলায় কৃষ্ণসঙ্গ লাভের এই একটি রাত রাধার জীবনে একটি কালেরই প্রতীক, যার আঁধারে প্রতিটি বৈষ্ণব খুঁজে চলে পরমসত্তাকে অনুভবের স্পন্দন। তার আঁচ নিয়ে ভোরবেলা ভক্তবৃন্দ ফিরতে থাকে নিজ নিজ ঠিকানায়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments