ইসলামী জীবনঃ
মাদক সমাজ ও সভ্যতাকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মাদক ও নেশাদ্রব্য জাতির যুবশক্তি ও আর্থিক সামর্থ্য ধ্বংস করে। মাদকাসক্তি চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসসহ বহু অপরাধের জন্ম দেয়। যা মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে।
ইসলাম সর্বপ্রকার মাদক ও নেশাদ্রব্য হারাম করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্যই মদ আর যাবতীয় মদ হারাম।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫৫৮৬)
মাদকের ভয়াবহতা,
মাদকের পার্থিব ও অপার্থিব ক্ষতির পরিমাণ অনেক। যেমন—
১. সব অকল্যাণের চাবি : মাদক নানাবিদ অকল্যাণ ও মন্দের দুয়ার খুলে দেয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মদ পান কোরো না। কেননা তা সকল অকল্যাণের চাবিকাঠি।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩৭১)
২. অশ্লীলতার উৎস : মাদক মানুষকে বিভিন্ন প্রকার অশ্লীল কাজে প্রলুব্ধ করে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা মদ থেকে বেঁচে থাকো।
কেননা তা অশ্লীল কাজের মূল।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫৬৬৭)
৩. জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়া : মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে বঞ্চিত হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সর্বদা মদ পানকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩৭৬)
৪. অভিশপ্ত হওয়ার কারণ : মদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অভিশাপ রয়েছে। মদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে এমন ১০ শ্রেণির লোকের প্রতি রাসুল (সা.) অভিশাপ করেছেন : ১. যে লোক মদের নির্যাস বের করে, ২. প্রস্তুতকারক, ৩. মদপানকারী, ৪. যে পান করায়, ৫. মদের আমদানিকারক, ৬. যার জন্য আমদানি করা হয়, ৭. বিক্রেতা, ৮. ক্রেতা, ৯. সরবরাহকারী, ১০. এর লভ্যাংশ ভোগকারী।
(মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ২৭৭)
মদ নিষিদ্ধের ক্রমধারা,
ইসলাম শুরুতেই মদ হারাম ঘোষণা করেনি; বরং ধারাবাহিকভাবে এটি নিষিদ্ধ করেছে। ইসলাম প্রথমে মদের মন্দ দিকগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরেছে। মদের অপকারিতা ও পাপ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করেছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন! এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্য উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২১৯)
দ্বিতীয় পর্যায়ে নামাজের সময় মদ পান হারাম করা হয়। আল্লাহর নির্দেশ দেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাকো, তখন নামাজের নিকটবর্তী হয়ো না। যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৪৩)
চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে মদ পুরোপুরি হারাম করা হয়। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরগুলো শয়তানের কাজ ছাড়া কিছু নয়। অতএব এগুলো থেকে বেঁচে থাকো, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। অতএব তোমরা এখন কি নিবৃত্ত হবে?’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৯০-৯১)
সাহাবিদের ভেতর মদ নিষিদ্ধের প্রতিক্রিয়া,
রাসুল (সা.)-এর ঘোষক যখন মদিনার অলিগলিতে প্রচার করতে লাগল যে মদ্যপান হারাম করা হয়েছে, তখন যার হাতে মদের যে পাত্র ছিল, তা তারা সেখানেই ফেলে দিয়েছিল। যার কাছে মদের কলস বা মটকা ছিল, তা ঘর থেকে তত্ক্ষণাৎ বের করে ভেঙে ফেলেছিল। আনাস (রা.) এক মজলিসে মদ পরিবেশন করছিলেন। আবু তালহা, আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ, উবাই বিন কাব, সুহাইল (রা.) প্রমুখ নেতৃস্থানীয় সাহাবিরা সে মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। প্রচারকের ঘোষণা কানে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে সবাই সমস্বরে বলে উঠলেন, এবার সমস্ত মদ ফেলে দাও। এর পেয়ালা, মটকা, হাঁড়ি ভেঙে ফেলো। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৬৬২; সহিহ বুখারি,।