Friday, November 8, 2024
Homeইসলামইসলামের দৃষ্টিতে ‘সি*ন্ডিকেট’ চ*ক্রের শেষ পরিণাম 

ইসলামের দৃষ্টিতে ‘সি*ন্ডিকেট’ চ*ক্রের শেষ পরিণাম 

 

ধর্ম ডেস্ক,

ছবি: প্রতীকী

 

বর্তমান সময়ে পত্র-পত্রিকায় ও টিভি চ্যানেলে চোখ বুলালেই দেখা যাচ্ছে ‘সিন্ডিকেট’ চক্রের বাজার দখলের কথা। এছাড়াও সিন্ডিকেট শব্দটা আমাদের সমাজে বহুল পরিচত এবং প্রসিদ্ধ হয়ে পড়েছে। ছোট থেকে বড় প্রায় সবার মুখেই এখন সিন্ডিকেট শব্দটা উচ্চারিত হয়। কেউ উচ্চারণ করে এ থেকে লাভবান হয়ে আবার কেউ এর জাঁতা কলে পিষ্ট হয়ে এর থেকে পরিত্রাণের জন্য।

 

তাছাড়া সিন্ডিকেট চক্র যখন ইসলামি হুকুম অমান্য করে পণ্য বা মালপত্র গুদামজাত করে তখন সাধারণ জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে যায় বিভিন্ন পণ্য সংগ্রহ করার জন্য। এর কারণ হলো, সরকার প্রতিটা পণ্যের অল্প মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। তখন সেই সিন্ডিকেট চক্ররা একজোট হয়ে বেশি লাভের আশায় পণ্যগুলো গুদামজাত করে রাখে। পড়ে যখন বাজারে পণ্যের সংকট দেখা দেয় তখন পণের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে এতটা আকাশচুম্বী হয়ে যায় যে, ক্রয়মূল্য সাধারণ জনগণের সাধ্যের বাইরে চলে যায়, ফলে সাধারণ জনগণের ভোগান্তির শেষ থাকে না।

 

এ সিন্ডিকারীদের গ্যারাকলে পরে সবচে বেশি ভোগান্তির শিকার হয় নিম্ন, নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক জনগণ। তারা না পারে চড়া দামে কিনে নিতে না পারে না কিনে থাকতে। অথচ ইসলামে এমনটি করাকে সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম বলেছে।

 

বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করে সে পাপিষ্ট’। (মুসলিম ও মেশকাত) অপর হাদিসে রাসূল (সা.) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি বেশি মূল্যের আশায় মাল জমা রাখে, সে ব্যক্তি গুনাহগার’। (মুসলিম ও আবু দাউদ)

 

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এর যুগে একবার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেল। লোকেরা বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিন। রাসূল (সা.) বললেন, মূলত আল্লাহ তাআলাই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকারী, রিজিক সঙ্কীর্ণকর্তা, প্রশস্তকর্তা ও রিজিকদাতা। আমি আমার রবের সঙ্গে এভাবে সাক্ষাতের আশা রাখি যে, তোমাদের কারো যেন আমার বিরুদ্ধে রক্ত বা সম্পদ, কোনো বিষয়ে কোনোরূপ দাবি না থাকে। (তিরমিজি : ২৪৫)

 

কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি থেকে সাধারণ জনগণকে বাঁচাতে সরকার দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারেন। পণ্য গুদামজাত করার কারণে জনগণ সঠিক মূল্যে দ্রব্য পায় না। অসাধু ব্যবসায়ীরা সে সমস্ত পণ্যগুলোকে গুদামে রেখে দিয়ে বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। যারফলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়।

 

আর যখনই পণ্যের দাম বেড়ে যায়, তখনই ব্যবসায়ীরা সেই গুদামে মজুদ করে রাখা অতিরিক্ত পণ্য বেশি দামে বাজারে ছাড়ে। আর এই ঘটনাটা হলো এক প্রকারের সিন্ডিকেটের উদাহরণ। তাছাড়া বাজেট ঘোষণার আগে ও পড়ে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস জিনিসও এরকম সিন্ডিকেট করে রাখে এবং যখন সেটার দাম বৃদ্ধি পায়, তখনই সেটা বাজারে ছাড়ে।

 

ইসলামে এধরণের ব্যবসায়ীদের জন্য রয়েছে পরকালীন শাস্তি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মূল্যবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন পর্যন্ত খাদ্যশস্য মজুদ করে রাখে সে ব্যক্তি আল্লাহর দায়িত্ব থেকে মুক্ত এবং তার প্রতি আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন’। (মিশকাত :১৩১৬)

 

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি চল্লিশদিন পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করে রাখবে, সে তার মাল পরবর্তীতে সদকা করে দিলেও তার গুনাহ ক্ষমার জন্য যথেষ্ট হবে না। অন্যত্র বর্ণিত আছে, আমদানিকারক মুনাফা অর্জন করবে, সে যেন গুদামজাতকারী অভিশপ্ত হিসেবে চিহ্নিত হবে। (ইবনে মাজাহ)

 

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ন্যায্যমূল্যে জিনিস সরবরাহকারী রিজিকপ্রাপ্ত আর মজুদ করে সংকট সৃষ্টিকারী অভিশপ্ত’। (বোখারি: ৩৭১২)

 

গুদামজাতকারীদের জন্য দুনিয়াতেও রয়েছে কঠিন রোগ-শোক, বালা-মুসিবত। ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মুসলমানদের খাদ্য গুদামজাত করে রাখবে, আল্লাহ তাকে দারিদ্র্য ও কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত করবেন’। (ইবনে মাজাহ)

 

যেসব অবস্থায় মাল গুদামজাত করা নিষেধ। ১. স্বল্পমূল্য চলাকালীন খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে বেশি লাভের আশায় এমনভাবে গুদামজাত করা যে বাজারে তার প্রতিক্রিয়া পড়ে। ২. কোনো দ্রব্য এমন পরিমাণে গুদামজাত করা, যে কারণে ক্রেতা সাধারণত সে পণ্যের চরম সংকটের সম্মুখীন হয়। ৩. মানুষের খাদ্যদ্রব্য সংকট অবস্থায় যেকোনো পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করা। ৪. বাজারে কৃত্রিম খাদ্য সংকট সৃষ্টির জন্য গুদামজাত করা। উল্লেখিত অবস্থায় মাল গুদামজাত করা নিষিদ্ধ ও গুনাহের কাজ।

 

এই সিন্ডিকেট যে শুধু ব্যবসার ক্ষেত্রে হয় তা কিন্তু নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে। যেমন, গাড়ির টিকিটের বিষয়টাই বলি। টিকিট থাকা সত্ত্বেও টিকিট নেই এরকম অজুহাত দেখিয়ে গাড়ির মালিকরা যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়ার জন্যও কিন্তু সিন্ডিকেট করে।

 

সর্বোপরি জনসাধারণকে ভোগান্তিতে ফেলতে পণ্য গুদামজাত করা বা বিভিন্ন জিনিসে সিন্ডিকেট করা ইসলামে চরম ঘৃণিত কাজ। কেননা ব্যবসায়িদের স্বার্থের জন্য গরিব দুঃখী ও অসহায় মানুষ কষ্টের মধ্যে পতিত হয়। আল্লাহর কাছে তাদের ফরিয়াদ বয়ে আনতে পারে সমাজ ও রাষ্ট্রের দুর্ভিক্ষসহ নানান কঠিন আজাব।

 

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যেসব লোক বিনা দোষে মুমিন পুরুষ ও নারীকে কষ্ট দেয়। তারা অতি বড় একটা মিথ্যা অপবাদ ও সুষ্পষ্ট গুনাহের বোঝা নিজেদের মাথায় তুলে নেয়’। (সূরা: আহজাব, আয়াত: ৫৮)

 

আ তাই আমাদের সবাইকে এ বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। ইসলামকে বুঝতে হবে এবং তা মানার চেষ্টা করতে হবে।

 

ইয়া আল্লাহ! আমাদেরকে সিন্ডিকেটকারীদের কবল থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। এবং সিন্ডিকেটকারীদের হেদায়েত দান করুন। আমিন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments