ইসলামী জীবন,
মুমিনদের জন্য জান্নাতের অন্যতম নেয়ামত হলো হুর। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে হুরদের ব্যাপারে বলেছেন, ‘যারা আবরণে রক্ষিত মোতির মতো।’ (সুরা ওয়াকেয়া:২৩) ‘তাদেরকে এর পূর্বে কোনো ইনসান বা জ্বিন স্পর্শ করেনি।’ (সুরা রহমান: ৫৬)
আল্লাহ তাআলা জান্নাতি পুরুষদের সঙ্গে তাদের বিয়ে দেবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘..আর আমরা তাদেরকে বিয়ে দিয়ে দেব ডাগর নয়না হুরদের সাথে’ (সুরা দুখান: ৫৩-৫৪)। ‘..এবং তারা সেখানে থাকবে চিরকাল।’ (সুরা বাকারা: ২৫) হাদিসে এসেছে, ‘..জান্নাতি কোনো মহিলা যদি দুনিয়াবাসীদের প্রতি উঁকি দেয় তাহলে আসমান ও জমিনের মাঝের সব কিছু আলোকিত এবং সুরভিত হয়ে যাবে। আর তার মাথার ওড়না দুনিয়া ও তার সবকিছু চেয়ে উত্তম।’ (সহিহ বুখারি: ২৭৯৬)
হুরদের চেয়েও অনেক বেশি সুন্দরী হবেন জান্নাতি মুমিন নারীরা। তাদের হুরের চেয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্য দেওয়া হবে। তারা বৃদ্ধা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেও জান্নাতে তারা যুবতি হয়ে যাবেন। দুনিয়ায় যেমনই থাকুন, আখেরাতে অপরূপ সৌন্দর্য লাভ করবেন।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হাসান (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার এক বৃদ্ধা মহিলা নবী (স.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। তিনি বলেন, ওহে! কোনো বৃদ্ধা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বর্ণনাকারী বলেন, (তা শুনে) সে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।
নবী (স.) বলেন, তাকে এ মর্মে খবর দাও যে তুমি বৃদ্ধাবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করবে না। কারণ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি তাদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করেছি। আর তাদেরকে করেছি কুমারী।’ (সুরা ওয়াকেয়া: ৩৫-৩৬; শামায়েলে তিরমিজি: ১৭৯)
জান্নাতি নারীরা জান্নাতে স্বামীভক্ত হবেন, যা নারীদের শ্রেষ্ঠ চরিত্র। পাশাপাশি তারা তাদের সমবয়স্কা হবেন, যা তাদের মধ্যে বোঝাপড়া ও প্রেমময় সম্পর্ক দৃঢ় রাখতে সাহায্য করবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(জান্নাতি নারী হবে) সোহাগিনী ও সমবয়সী।’ (সুরা ওয়াকেয়া: ৩৭)
জান্নাতি নারীদের দুনিয়ার স্বামী যদি জান্নাতি হন, তবে তাকেই স্বামী হিসেবে পাবেন, তবে সেখানে সেই স্বামীর কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকবে না, যা দেখে নারীদের আফসোস হতে পারে। কোনো নারীর যদি একাধিক বিয়ে হয়, তাহলে তার শেষ স্বামী জান্নাতেও তার স্বামী হবেন। হাদিসে এসেছে, হুজায়ফা (রা.) তার স্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘যদি তোমাকে এই বিষয়টি আনন্দিত করে যে তুমি জান্নাতে আমার স্ত্রী হিসেবে থাকবে, তাহলে আমার পর আর বিয়ে করো না। কেননা জান্নাতে নারী তার দুনিয়ার সর্বশেষ স্বামীর সঙ্গে থাকবে। এ জন্যই রাসুলুল্লাহ (স.) মৃত্যুর পর তার স্ত্রীদের জন্য অন্য কারো সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম করা হয়েছে। কেননা তারা জান্নাতে তারই স্ত্রী হিসেবে থাকবেন।’ (বায়হাকি, সুনানে কুবরা: ১৩৮০৩)
যে জান্নাতি নারী বিবাহিতা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, কিন্তু তার স্বামী যদি জাহান্নামি হয়, তখন সে জান্নাতে প্রবেশের পর সেখানে অনেক পুরুষ দেখতে পাবে, যারা বিয়ে করেনি অথবা বিয়ে করেছে; কিন্তু তাদের স্ত্রী জাহান্নামি। তাদের থেকে পছন্দমাফিক একজনকে স্বামী হিসেবে বেছে নিতে পারবে। (মাজমু ফতোয়া ওয়া রাসায়েলে ইবনে উসাইমিন: ২/৩৮)
কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, জান্নাতে পুরুষদের কমপক্ষে ৭০টি হুর দেওয়া হবে, যাদের রানি হবেন দুনিয়ার স্ত্রী। কিন্তু জান্নাতি এই স্ত্রীদের নিজেদের মধ্যে কোনো দূরত্ব বা ঝামেলা থাকবে না। কারণ মহান আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করানোর আগে মানুষকে হিংসা-বিদ্বেষ থেকে পবিত্র করে নেবেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি তাদের অন্তর থেকে হিংসা-বিদ্বেষ বের করে ফেলব, তারা সেখানে ভাই ভাই হয়ে আসনে মুখোমুখি বসবে।’ (সুরা হিজর: ৪৭)
এখানে আয়াতের দ্বারা শুধু পুরুষ উদ্দেশ্য নয়, বরং সব জান্নাতি উদ্দেশ্য। জান্নাতে প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের মায়া ও ভালোবাসা থাকবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে দল প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মতো উজ্জ্বল হবে। তারা সেখানে থুতু ফেলবে না, নাক ঝাড়বে না, মলমূত্র ত্যাগ করবে না। সেখানে তাদের পাত্র হবে স্বর্ণের; তাদের চিরুনি হবে স্বর্ণ ও রৌপ্যের, তাদের ধুনুচিতে থাকবে সুগন্ধি কাষ্ঠ। তাদের গায়ের ঘাম মিসকের মতো সুগন্ধময় হবে। তাদের প্রত্যেকের জন্য এমন দুজন স্ত্রী থাকবে, যাদের সৌন্দর্যের কারণে গোশত ভেদ করে পায়ের নলার হাড়ের মজ্জা দেখা যাবে। তাদের মধ্যে কোনো মতভেদ থাকবে না; পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের সবার অন্তর এক অন্তরের মতো হবে। তারা সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করতে থাকবে। (বুখারি: ৩২৪৫)
জান্নাতের নারীরা চরিত্রের দিক থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র হবেন, তাদের মনে স্বামী ছাড়া অন্য কেউ থাকবে না। তারা কখনো অন্যের স্বামীর দিকে দৃষ্টিও দেবেন না। জান্নাতি হুরদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘সেখানে থাকবে সতীসাধ্বী সংযত-নয়না কুমারীরা, পূর্বে যাদের স্পর্শ করেনি কোনো মানুষ বা কোনো জ্বিন।’ (সুরা আর রহমান: ৫৬)