ডেস্ক নিউজ,
সিলেটের কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদে বাংলা ও আরবি ভাষায় খুৎবা পাঠ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদের পাশাপাশি মহানগরের কাজিরবাজারস্থ জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়ায় শুক্রবার সন্ধ্যার পর আলেমদের এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এতে কুদরত উল্লাহ মসজিদ পরিচালনা কমিটিকে ‘বিতর্কিত’ খুৎবা পাঠ নিয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন আলেমরা।
এছাড়া শনিবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর সিলেটের জামিয়া কাসিমুল উলুম দরগাহ মাদ্রাসায় সর্বস্তরের আলেমদের নিয়ে বৈঠক আয়োজনের এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
জানা যায়, কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদ কর্তৃপক্ষের দাওয়াতে শুক্রবার (৪ অক্টোবর) জুমার নামাজে উপস্থিত হন ইস্ট লন্ডন জামে মসজিদের প্রধান ইমাম শায়খ আব্দুল কাইয়ুম।
নামাজের আগে মসজিদের সেক্রেটারি সিলেটের সিনিয়র সাংবাদিক মুকতাবিস উন নূর ঘোষণা দেন শায়খ আব্দুল কাইয়ুম জুমার নামাজের খুৎবা প্রদান করবেন ও জামাত পড়াবেন। ওই ইমাম মিম্বরে উঠে আরবিতে প্রথম খুৎবা দিলেও একপর্যায়ে বাংলায় বক্তব্য দিতে শুরু করেন। তবে দ্বিতীয় খুৎবা তিনি আরবিতেই দেন।
এদিকে, খুৎবার লাইভ ভিডিও সম্প্রচার করছিল ‘আধুনিক টিভি’ নামের একটি ফেসবুক পেইজ। সেই ভিডিও নামাজের পরেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। সিলেটের আলেম-সমাজ বিষয়টিকে ‘বিভ্রান্তিমূলক’ দাবি করে প্রতিবাদ শুরু করেন।
এ বিষয়ে কাজির বাজার মাদ্রাসায় জরুরি বৈঠকে বসারও সিদ্ধান্ত হয় এবং এ অনুযায়ী শুক্রবার সন্ধ্যার পর ‘সিলেট মহানগর কওমি মাদ্রাসা ঐক্য পরিষদ’র উদ্যোগে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ উলামা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মাওলানা রেজাউল করিম জালালীর সভাপতিত্বে এবং ‘সিলেট মহানগর কওমি মাদ্রাসা ঐক্য পরিষদ’র অন্যতম সমন্বয়ক ও কাজিরবাজার জামেয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা শাহ মমশাদের পরিচালনায় বৈঠকে বক্তারা বলেন, দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশের আলেম-উলামাসহ ধর্মপ্রাণ সকল মানুষের মাঝে যখন ঐক্যের বাতাস বইছে, ঠিক তখন সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদে এমন একটি বিতর্কিত কাণ্ড ঘটানো একেবারেই সমীচীন হয়নি।
হক্কানি আলেমদের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এ দেশে জুমার নামাজের খুৎবা আরবিতে প্রদানের মীমাংসিত বিষয়কে নিয়ে আজ যেভাবে হানাফি মাসলাকি কুদরত উল্লাহে মসজিদে বিভ্রান্তি-ফিতনা ছড়ানো হলো এর জন্য আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই বিতর্কিত কাজের মাধ্যমে ঐক্যের নির্মাণাধীন প্রাচীরে ধরানো হলো ফাটল। কুদরত উল্লাহ মসজিদ কমিটিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে। তা না হলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সিলেটের আলেম-সমাজ।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা রেজাউল করিম জালালী বলেন, শনিবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর দরগাহ মাদ্রাসায় সিলেটের সর্বস্তরের আলেমদের নিয়ে এ বিষয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকটিতে আলেমদের মতামতের ভিত্তিতে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
কাজিরবাজার জামেয়ার বৈঠক উপস্থিত ছিলেন ‘সিলেট মহানগর কওমি মাদ্রাসা ঐক্য পরিষদ’র সমন্বয়ক ও সোবহানীঘাট মাহমুদিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আহমদ কবির, ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক ও ঝালোপাড়া মহিলা মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা রফিকুল ইসলাম মোশতাক, কাজিরবাজার জামেয়া মাদানিয়ার সহকারী শিক্ষাসচিব মাওলানা আসিফুল ইসলাম, ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক ও ফরিদাবাদ মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা ফখরুজ্জামান, ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক ও দারুল হুদা মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি মুজিবুর রহমান ক্বাসেমি, ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক ও জামেয়া দারুস সুন্নাহ খাসদবির মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়ামতুল্লাহ ক্বাসেমি এবং কাজিরবাজার জামেয়া মাদানিয়ার শিক্ষক মাওলানা আব্দুল খালিক প্রমুখ।