স্পোর্টস ডেস্ক,
২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। এরপর চারটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ম্যাচ জিততে না পারার দুঃখ ঘোচানোর প্রত্যয় নিয়ে উদ্বোধনী ম্যাচে নিগার সুলতানা জ্যোতিরা আজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে নেমেছিল। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। বিশ্বকাপে টানা ১৬ ম্যাচ হারের পর বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা।
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে আগের চারবারের মুখোমুখিতে বাংলাদেশ হারেনি। অপরাজিত থাকার আত্মবিশ্বাস নিয়েই বৃহস্পতিবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল। ব্যাটিংয়ে হতশ্রী পারফর্ম করলেও শেষ পর্যন্ত জয় পেতে সমস্যা হয়নি নিগার সুলতানাদের। তবে স্কটিশ বোলিংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের এমন ব্যাটিং নিশ্চিত ভাবেই আত্মবিশ্বাসে বড় ধাক্কা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার আগে ব্যাটিং করে ৭ উইকেটে ১১৯ রান তোলে তারা। জবাবে খেলতে নেমে স্কটল্যান্ডের ইনিংস থামে ৭ উইকেটে ১০৩ রানে। তাতে ১৬ রানের জয়ে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ শুরু করেছে।
এমন ম্যাচে বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটার দুটি মাইলফলক ছুঁয়েছেন। বাংলাদেশের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি ক্যারিয়ারের একশতম ম্যাচ খেলেছেন। যা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পক্ষে সর্বোচ্চ।
এছাড়া বাঁহাতি স্পিনার নাহিদা আক্তার প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে একশ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। ৮৮ ম্যাচে নাহিদার শিকার ১০০ উইকেট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সালমা খাতুনের। ৯৫ ম্যাচ খেলে সালমা শিকার করেছেন ৮৪ উইকেট।
প্রত্যাশিত জয় পেলেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় স্কটিশদের খুব বড় লক্ষ্য দিতে পারেনি লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। জবাবে পাওয়ার প্লেতে দুই উইকেট হারালেও দ্রুত রান তুলে ফেলেছিল স্কটল্যান্ড। ৬ ওভার শেষে তাদের রান দাঁড়ায় ৩১। পাওয়ার প্লে শেষ হতেই ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ।
স্কটল্যান্ডের ব্যাটারদের মধ্যে কেবল ওপেনার সারাহ ব্রাইস প্রতিরোধ গড়তে পেরেছেন। যোগ্য সঙ্গীর অভাবে বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে পারেনি তারা। স্কটিশ এই ওপেনার দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৯ রানের ইনিংস খেলেছেন। ক্যাথরিন ব্রাইস ও আলিসা লিস্টার দুইজনের ব্যাট থেকে ১১ রান করে এসেছে। বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে স্কটল্যান্ড ৭ উইকেট হারিয়ে ১০৩ রান করতে পারে। যদিও কিছু মিস ফিল্ডিং ও স্ট্যাম্পিং মিস না হলে স্কটিশদের একশর নিচে আটকে রাখা যেত।
বাংলাদেশের বোলাদের মধ্যে পেসার রিতু মনি সর্বোচ্চ দুটি উইকেট নিয়েছেন। ম্যাচসেরাও তিনি। একটি করে উইকেট নেন মারুফ আক্তার, নাহিদা আক্তার, ফাহিমা খাতুন ও রাবেয়া খান প্রত্যেকে একটি করে উইকেট নিয়েছেন।
শারজায় বাংলাদেশ দল টস জিতে শুরুতে ব্যাটিং করেছে। দুই ওপেনার মোর্শেদা খাতুন ও সাথী রানি মিলে ভালোই শুরু করেছিলেন। তবে পঞ্চম ওভারে মোর্শেদা ১২ রানে আউট হলে ভাঙে জুটি। এরপর সোবহানা মোস্তারিকে নিয়ে সাথী ৪৪ বলে ৪২ রানের জুটি গড়েন। দারুণ খেলতে থাকা সাথী ৩২ বলে ২৯ রান করে আউট হন। স্কোরবোর্ডে আরও এক রান যোগ হতেই অভিষিক্ত তাজ নাহার ‘শূন্য’ রানে রান আউট হন।
৬৯ রানে তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। দলকে চাপ থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেন সোবাহানা ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। কিন্তু ১৬ বলে ১৭ রানের জুটি গড়ে অলিভিয়া বেলের বলে স্ট্যাম্পড হন সোবাহানা। আউট হওয়ার আগে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ৩৮ বলে ২ চার চারে সোবহানা নিজের ইনিংসটি সাজান।
এদিকে অধিনায়ক জ্যোতি নিজের একশতম ম্যাচটি খেলতে নেমেছিলেন। যদিও নিজের মাইলফলকের ম্যাচটিতে সুবিধা করতে পারেননি। ১৮ বলে ১৮ রান করে আউট হন বাংলাদেশের অধিনায়ক। এরপর লেজের ব্যাটাররা ব্যর্থ হওয়াতে বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যায় ১১৯ রান। ফাহিম খাতুন (১০), স্বর্ণা আক্তার (৫) ও রিতু মনি (৫) রানের ইনিংস খেলেছেন।
স্কটিশ বোলারদের মধ্যে সাসকিয়া হরলি ১৩ রানে তিনটি উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া ক্যাথরিন ব্রাইস, ক্যাথরিন ফ্রেজার ও অলিভিয়া বেল প্রত্যেকে একটি করে উইকেট নিয়েছেন।