Friday, November 8, 2024
Homeশিক্ষাশাবিপ্রবির সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে শপথ পড়ালেন শিক্ষার্থীরা

শাবিপ্রবির সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে শপথ পড়ালেন শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক,

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সহ-উপাচার্য মো. সাজেদুল করিম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. ইসমাইল হোসেনকে শপথবাক্য পাঠ করাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ এর পক্ষে মত দিয়েছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন শপথবাক্য পাঠ করানোর এখতিয়ার শিক্ষার্থীদের নেই।

 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সহ-উপাচার্য হিসেবে মো. সাজেদুল করিম ও কোষাধ্যক্ষ হিসেবে অধ্যাপক মো. ইসমাইল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। পরে বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলনকক্ষে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক দল ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে নতুন সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে শপথবাক্য পাঠ করানো হয়।

 

শপথবাক্য পাঠ করানোর ভিডিওটি সন্ধ্যার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।

 

ভিডিওতে দেখা যায়, সম্মেলনকক্ষে দাঁড়িয়ে নতুন সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে শপথবাক্য পাঠ করাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও থিয়েটার সাস্টের সভাপতি পলাশ বখতিয়ার। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের ওই শপথবাক্য পড়তে শোনা যাচ্ছিল। শপথবাক্য পাঠকালে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মো. আবদুল কাদির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব, আবু সালেহ মো. নাসিমসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি এবং কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

 

শপথবাক্য পাঠের সময় মো. সাজেদুল করিম ও মো. ইসমাইল হোসেনকে বলতে শোনা যায়, ‘মহান সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া যে আমরা ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি লাভ করেছি। আজ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসি (সহ-উপাচার্য) ও ট্রেজারার (কোষাধ্যক্ষ) পদে যোগদানের মুহূর্তে ২৪ জুলাইয়ের সব শহীদদের স্বশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। মহান জুলাই বিপ্লবের মূল লক্ষ্য ও আদর্শকে সমুন্নত রাখতে আমরা শপথ করছি যে, বিপ্লবী সরকার কর্তৃক যে দিকনির্দেশনা আমরা পেয়েছি এবং জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের স্পিরিট ধারণ করে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসকে শিক্ষার্থীবান্ধব ও শিক্ষা এবং গবেষণা উন্নয়নে সর্বোচ্চ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে সচেষ্ট থাকব। দলীয় লেজুড়বৃত্তি ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ও শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার জন্য আপসহীনভাবে নিয়োজিত থাকব। আমাদের বিদ্যা, গবেষণা সৎকাজের মাধ্যমে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাবিপ্রবি দেশের জনগণ এবং বিশ্ববাসীকে আলোর পথ দেখাতে যেন অগ্রণী ভূমিকা পালন করে, তা নিশ্চিত করব।’

 

শপথবাক্যের এই অংশের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার দিয়েছেন গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমার কাছে আজকের শপথের ঘটনাকে লজ্জাজনক মনে হয়েছে। অপমানের থেকে কোনো অংশেই কম হয়নি শিক্ষকদের সঙ্গে। নিজের কাছেই লজ্জা লাগছে।’

 

হেঁয়ালির সুরে আহনাফ রাদ নামের আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘ভিসি (উপাচার্য) স্যার আসলে উনাকেও কী একই শপথ পাঠ করানো হবে? নাকি নতুনত্ব থাকবে কিছু? সঙ্গে পুরো শপথ অনুষ্ঠানটি টিভি চ্যানেলগুলোতে সরাসরি সম্প্রচার করা যায় কি না, একটু দেখিয়েন।’

 

শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য পাঠ করানোর পক্ষেও মত দিয়েছেন কেউ কেউ। জুনায়েদ আহমেদ নামের একজন লিখেছেন, ‘শপথ পাঠ কি ব্যক্তিস্বার্থ জড়িত কোনো বাক্য ছিল যে, এইটা নিয়া ছি ছি করা লাগবে? যাদের এইটা নিয়ে…আছে তারা বোমা ফরিদের সময় আর জুলাই বিপ্লবের সময় স্যারদের ভূমিকা নিয়ে কই ছিল?’

 

এ বিষয়ে কথা বলতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাখা সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 

তবে শপথবাক্য পাঠ করানো থিয়েটার সাস্টের সভাপতি পলাশ বখতিয়ার বলেন, ‘স্যারদের সম্মতি নিয়ে শপথবাক্য পাঠ করানো হয়েছে, স্যারদের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি ছিল না।’

 

বিষয়টি নিয়ে নতুন সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সাজেদুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি পরিকল্পিত কোনো শপথবাক্য পাঠ না। শিক্ষার্থীদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পুরো পরিবেশটি হয়ে পরে শোকাবহ। এ ছাড়া ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় ক্ষোভ, দেশের চলমান প্রেক্ষাপট, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের উচ্চ প্রত্যাশা এবং নতুন প্রশাসন আসায় অতিমাত্রায় আবেগে আপ্লুত হওয়া ইত্যাদি পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ বাক্যগুলো সবার মুখে উচ্চারিত হয়েছে।

 

তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি যেভাবে সমালোচিত হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে এমনটি হয়নি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments