স্বাস্থ্যসেবা প্রতিবেদক :
প্রায় সবই মানুষই ডিম খান। এরা বিভিন্ন উপায়ে ডিম খান। যারা নিরামিষভোজী, তারাই ডিম খান না। তবে খুব কম মানুষই প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার ডিম খান না কিম্বা স্বাস্থ্যগত কারণে নিষেধ থাকলে খেতে পারেন না। একটি ডিমে সাধারণত ৭ গ্রাম প্রোটিনসহ আছে মাত্র ৭৫ ক্যালরি। ডিমে থাকা প্রোটিন ও চর্বির মিশ্রণ অন্য কিছু খাওয়ার ইচ্ছা কমিয়ে দেয় বলে এটি ওজন কমাতে সহায়তা করে। আর সকালের নাশতায় ডিম খেলে বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত হয়। তবে রান্না করা ডিমে শতভাগ পুষ্টি গুণ পাওয়া যায় না। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ডিম খাওয়া বা না খাওয়া নির্ভর করবে যিনি খাচ্ছেন, তার স্বাস্থ্যের ওপরে। কিন্তু এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, সুস্থ শরীরে রোজ দু’টি করে সিদ্ধ ডিম খেলে তা শরীরের ১০ রকম পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে পারে। চলুন এই বিষয়ে জেনে নিই।
১. প্রোটিন :
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কতটা প্রোটিন জরুরি, তা নির্ভর করে তার ওজনের ওপরে। শরীরের ওজনের কিলোগ্রাম পিছু ০.৮ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ, কারও যদি ওজন ৭৫ কেজি হয়, তবে তার দিনে প্রোটিন প্রয়োজন ৬০ গ্রাম। যে হেতু একটি ডিমে ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে, তাই নিয়মিত দু’টি করে ডিম খেলে ১২ গ্রাম প্রোটিন যাবে শরীরে। এটা নিয়মিত প্রয়োজনের অনেকটাই পূরণ করবে।
২. ভিটামিন এ :
দু’টি সিদ্ধ ডিমে রয়েছে ৫৪০ আইইউ (আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট) ভিটামিন এ। চোখ এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে এই ভিটামিন জরুরি। পাশাপাশি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ভাল রাখে ভিটামিন এ। কোষবৃদ্ধি, প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও এই ভিটামিন উপযোগী। এক জন প্রাপ্তবয়স্কের নিয়মিত ৩০০০ আইইউ ভিটামিন এ প্রয়োজন। ডিম তার অনেকটাই পূরণ করে।
৩. ভিটামিন ডি :
হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অতি প্রয়োজনীয় হল ভিটামিন ডি। আবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও উপযোগী এটি। শরীরের প্রতি দিন ৬০০ আইইউ ভিটামিন ডি প্রয়োজন। দু’টি ডিমে থাকে ৮২ আইইউ ভিটামিন ডি।
৪. ভিটামিন বি ১২ :
মস্তিষ্ক সঞ্চালনে সাহায্য করে ভিটামিন বি ১২। আবার স্নায়ুর কাজেও এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এর পাশাপাশি, রক্তে লোহিতকণিকা বৃদ্ধি, দৈনন্দিন কাজে চনমনে ভাব বজায় রাখতেও ভিটামিন বি ১২ দরকারি। সাধারণত রোজ ২ মাইক্রোগ্রাম এই ভিটামিনের প্রয়োজন। দু’টি সিদ্ধ ডিমে থাকে ১.৬ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি ১২।
৫. ভিটামিন বি ২ :
ফ্যাট, প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট পরিপাকের জন্য দরকার হয় এই ভিটামিন। তাছাড়া, ত্বক আর চোখের স্বাস্থ্যও ভাল রাখতে সাহায্যে করে ভিটামিন বি ২। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি দিন ১.৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি ২ প্রয়োজন। ডিমে এই ভিটামিন থাকে ০.৬ মিলিগ্রাম।
৬. ফোলেট :
ডিএনএ সংশ্লেষ এবং ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ সচল রাখতে সাহায্য করে ফোলেট। কোষের স্বাস্থ্যের জন্যও ফোলেট প্রয়োজনীয়। এই কারণে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের নিয়মিত ফোলেটের চাহিদা পূরণ করার কথা বলে থাকেন চিকিৎসকেরা। প্রাপ্তবয়স্কদের নিয়মিত ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট জরুরি। প্রতিটি ডিমে ২৪ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট থাকে।
৭. স্যালেনিয়াম :
এটি একটি জরুরি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। কোষের স্বাস্থ্য, থাইরয়েড, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল রাখতে কাজে লাগে। প্রতি দিনের প্রয়োজনের ৫৫ মাইক্রোগ্রাম স্যালেনিয়ামের মধ্যে ২৮ মাইক্রোগ্রামেরই জোগান দিতে পারে দু’টি সিদ্ধ ডিম।
৮. কোলাইন :
দু’টি ডিমে ২৯৪ মিলিগ্রাম কোলাইন থাকে, যা দৈনিক প্রয়োজনের অর্ধেক। কোলাইন মস্তিষ্ক এবং লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য দরকারি।
৯. আয়রন :
হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়ক আয়রন। দু’টি সিদ্ধ ডিমে থাকে ১.২ মিলিগ্রাম আয়রন।
১০. জিঙ্ক :
দু’টি সিদ্ধ ডিমে ১.১ মিলিগ্রাম জিঙ্ক থাকে। জিঙ্ক শরীরের ক্ষত নিরাময়ে সহযোগী। কোষের ক্ষয় রোধ করতে এবং প্রোটিন তৈরি করতে সাহায্য করে। প্রতি দিন ১১ মিলিগ্রাম জিঙ্ক জরুরি একজন প্রাপ্তবয়স্কের।