Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the td-cloud-library domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/sylheterkagoj/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
সুনামগঞ্জে নদী ভাঙনে দিশেহারা ১০০ পরিবার - Sylheter Kagoj : সিলেটের কাগজ |
Saturday, April 19, 2025
Homeসিলেট বিভাগসুনামগঞ্জসুনামগঞ্জে নদী ভাঙনে দিশেহারা ১০০ পরিবার

সুনামগঞ্জে নদী ভাঙনে দিশেহারা ১০০ পরিবার

 

 

প্রকাশিত: ১৩:২৩, ২১ আগস্ট ২০২৪,

 

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ধোপাজান নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে নদীতীরের শতাধিক বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। ঘরবাড়ি, জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে প্রায় ১০০ পরিবার। নদীর গর্ভে বিলীন চার গ্রামের একমাত্র সড়কটিও। অব্যাহত নদী ভাঙনে দিশেহারা স্থানীয় বাসিন্দারা।

 

স্থানীয় লোকজন জানান, সীমান্ত নদী ধোপাজান হয়ে জেলার প্রধান নদী সুরমায় প্রতিদিন বাল্কহেড, টাঙ্গুয়ার হাওরের হাউসবোট, স্পিডবোটসহ শত শত নৌযান যাতায়াত করে। এ কারণে সবসময় নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ থাকে। এছাড়া উজান থেকে নেমে আশা পাহাড়ি ঢলের কারণে এই সীমান্ত নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকে, যা সরাসরি আঘাত হানছে নদীর পাড়ে।

 

 

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতে নদীতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করায় ভাঙন দিনদিন বাড়ছে। সরেজমিনে সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সদরঘর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নদী ভাঙনের ভয়ঙ্কর চিত্র। ভাঙন আতঙ্কে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বাড়িঘরের সব জিনিসপত্র।

 

 

ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে সুরমা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা বাসিন্দাদের। সংশ্লিষ্টদের কাছে বারবার জানালেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্লক ফেলে ভিটেমাটি রক্ষার কথা বলে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা গ্রামবাসীর কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

 

 

স্থানীয় বাসিন্দা মো. কিবরীয়া বলেন, ব্লক ফেলার কথা বলে হাজার হাজার টাকা নিয়েছে। অথচ কাজ করেনি। নদী ভেঙে বিলীন হচ্ছে। আমরা না পেরে ঘরবাড়ি ভেঙে এখান থেকে চলে যাচ্ছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড টাকা খেয়েছে, কিন্তু কাজ করেনি।

 

 

তিনি আরো বলেন, হেমন্ত এলে নদীর মুখ থেকে রাতের বেলা ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে অবৈধভাবে বালি ও মাটি উত্তোলন করা হয়। এ কারণে নদী ভাঙন তীব্র হচ্ছে।

 

 

আরেক ভুক্তভোগী রিপা বেগম বলেন, নদী ভাঙনের জন্য বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে আমরা বড় অসহায়। এই যে আমরা হুমকির মুখে, সরকার এতদিনে কিছুই করল না। ২০ বছর আগে একবার নদী ভাঙনে সব হারিয়েছি। এখন যে বাড়িতে আছি, সেটাও যেকোনো সময় নদীতে চলে যাবে। চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারি না। এখন অন্য কোথায়ও যে যাব, সেই ক্ষমতাও আমাদের নেই।

 

 

মোহাম্মদ আব্দুল রহমান নামে একজন বলেন, আমরা কোথায় যাব? এই জায়গা ছাড়া আর কিছু নেই। অন্য কোনো জায়গায় গিয়ে যে একটা ঘর করব, সেই টাকা-পয়সাও নেই। নদী ভাঙনে আমাদের সব জমি শেষ। কেউ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না।

 

 

সদরঘর গ্রামের আয়াতুন নেছা (৫০) অসুস্থ স্বামী আর দুই মেয়েকে নিয়ে নদী ভাঙন কবলিত এলাকায় থাকছেন। জায়গা জমি, বসতবাড়ি রক্ষার আশায় সুদে টাকা এনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাকে দিয়েছিলেন। কিন্তু টাকা নিয়েও আয়াতুন নেছার সেই আশা আর পূর্ণ করেননি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেই কর্মকর্তা।

 

 

আয়াতুন নেছা বলেন, সুদে টাকা এনে সরকারের ঘরে (পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিসের এক কর্মকর্তাকে) দিয়েছিলাম এই নদীতে ব্লক দেওয়ার জন্য। তিন হাজার করে ৬ হাজার টাকা দিয়েছি। আমাদের এলাকার আরো মানুষ ৫ হাজার, ৬ হাজার টাকা করে দিয়েছে। তারা বলেছিল ব্লক দিয়ে দেবে, কিন্তু আর দিল না।

 

 

সুনামগঞ্জ সদর সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. আফসান পারভেজ বলেন, নদী ভাঙন রোধে বিভিন্ন সময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড, এমপির কাছে আবেদন জানিয়েছি; কিন্তু তারা আমাদের নদী ভাঙনের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেননি। শহরতলী ওয়ার্ডটি খুবই অবহেলিত। এখানে চারটা গ্রাম আছে, সদরঘর-আমিরগঞ্জ, আমিরপুর, কুরুতলা।

 

 

তিনি আরো বলেন, নদী ভাঙনে এরমধ্যে শতাধিক বাড়িঘর ভেঙে গেছে। এখনো ভাঙন চলমান। এখন নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। কোনো রাস্তাঘাটও নেই। তবে নদী ভাঙনের কারণ হিসেবে চলতি বছরের তিন দফা বন্যাকে দায়ী করেন তিনি।

 

 

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, সুনামগঞ্জে এ বছর তিন দফায় বন্যা দেখা দিয়েছিল। এই তিন দফা বন্যার কারণে সুনামগঞ্জের নদ-নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে আমরা প্রায় ১১টি স্থান চিহ্নিত করেছি। এসব স্থানে প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমাদের সাতশ মিটার। এই সাতশ মিটারে কাজ করার জন্য আমরা ৪৫ কোটি টাকার একটা চাহিদা দিয়েছি। যদি অর্থ বরাদ্দ পাই, তাহলে আমরা এখানে কাজ করব।

 

 

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, এই ধরনের অভিযোগ আমরা পূর্বে পাইনি। এখন যেহেতু এ অভিযোগটি এসেছে, আমরা বিষয়টি দেখব।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments