বিশেষ প্রতিনিধি,
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর সব এমপি-মন্ত্রী ও দলীয় নেতাকর্মীও আড়ালে চলে যান। গা ঢাকা দেন আলোচিত সমালোচিত সাবেক এমপি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
শুরু থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমর্থন করেননি সুমন।এছাড়া সরকার পতনের আগের কয়েকদিন ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের বিরুদ্ধে তার ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। বিশেষ করে ৪ আগস্ট ছাত্রলীগ ও যুবলীগের উদ্দেশে দেওয়া সুমনের বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় উঠে।
এরপর ৪ আগস্টের পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় আর দেখা যায়নি ব্যারিস্টার সুমনকে। তিনি বাংলাদেশে আছেন নাকি বিদেশে পালিয়ে গেছেন সে বিষয়েও সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যেই সোমবার (১৯ আগস্ট) রাতে নিজের ফেসবুকে ভিডিওবার্তা পোস্ট করেন সুমন। তবে বর্তমানে তিনি কোথায় অবস্থান করছেন সে বিষয়ে কিছুই জানাননি ভিডিওবার্তায়।
২ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা যারা আমার সমর্থক কিংবা শুভাকাঙ্ক্ষী বিভিন্ন সময় নানাভাবে আমার ওপর কষ্ট পেয়েছেন, তাদের উদ্দেশে একজন সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে কিছু কথা বলতে চাই। এই কোটা সংস্কার বা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে সবসময় ছিলাম আমি। এই আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন, তাদের পক্ষেও আমি ছিলাম। কিন্তু আমার ব্যর্থতা হচ্ছে আপনাদের সেটি বোঝাতে পারিনি। এ জন্য সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছি। এই ব্যর্থতার জন্য সব সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন, তাদের সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা এখন যে কাঠামোগত সংস্কার চাচ্ছেন, অথচ এই সংস্কারের জন্য দীর্ঘ বছর আগে থেকে কাজ করে যাচ্ছি আমি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ, গত ১৫ বছরে যে দুই-তিনজন মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, তাদের মধ্যে হয়তো আমাকে একজন পাবেন। আমি এস আলমের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে টাকা পাচারের জন্য মামলা করেছি।’
‘আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির যিনি প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, আমেরিকাতে তার ৯টি বাড়ি থাকা নিয়ে আমি নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছি। পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে নিজে বাদী হয়ে দুদকে মামলা করেছি। জাতীয় সংসদে তার বিরুদ্ধে আমি বক্তব্য দিয়েছি। কর কমিশনার মতিউরের বিরুদ্ধে মামলা করেছি, সালাম মুর্শেদীর বাড়ি নিয়ে মামলা করেছি, ফুটবলের দুর্নীতি নিয়ে কাজী সালাউদ্দিন সম্পর্কে কথা বলেছি। অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে আমি নিজে মামলা করেছি, পরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার ৮ বছরের সাজা হয়েছে।’
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমার জীবনে কত ঝুঁকি ছিল। কোটা আন্দোলন শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে সংবাদ সম্মেলন করে বলতে বাধ্য হয়েছি, জিডি করেছি যে আমার জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। সুতরাং এই যুদ্ধে সবসময় আমি চেষ্টা করেছি। এখন আপনারা যে যুদ্ধ শুরু করেছেন, ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে যে যুদ্ধ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ, এই যুদ্ধে সবসময় আমি দোয়া করি। এই যুদ্ধে সবসময় আমার জায়গা থেকে শরিক থাকার চেষ্টা করব।’
ব্যারিস্টার সুমনের ভিডিওবার্তা পোস্ট করার পর পর নেটিজেনবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়েন। অধিকাংশ মানুষ তার সমালোচনা করে গ্রেফতার দাবি করেন।
ইমরান শাওন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘কখনোই ছাত্রদের পক্ষে ছিলেন না আপনি। দুমুখো সাপের ভূমিকায় ছিলেন। লজ্জা শরম থাকলে এ মুখ নিয়ে আর সাফাই গাইতে আসতেন না। মিথ্যাবাদী, দুর্নীতিবাজদের দোসর আপনি। তলে তলে ঠিকই তাদের আকাম কুকামের সঙ্গী ছিলেন, আছেন, থাকবেন। সরকার পতনের আগে নিজের বক্তব্যগুলা দেখেন একটু, কেমন ভেজা শয়তান আপনি নিজেই বুঝবেন’।
চৌধুরী এম মাশুক বলেন, ‘আপনি নিজেকে শেখ হাসিনার দালাল বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করতেন। এই খুনি হাসিনা এতোগুলো মানুষ মেরে ফেললো বিভিন্ন সময়ে, আয়নাঘরে নিয়ে মানুষকে গুম খুন করলো, এগুলো আপনি জানতেন, জেনেও চুপ ছিলেন! সুতরাং এখন জনসাধারণের সাপোর্ট পাওয়ার প্রশ্নই আসে না’।
শেখ হাসিনার গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা না বলায় ব্যারিস্টার সুমনের সমালোচনা করেন মোহাম্মদ কাউসার নামে এক ব্যক্তি। তিনি লিখেছেন, গুম, খুন ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে টু শব্দও করেননি আপনি। বরং শেষ দিন পর্যন্ত স্বৈরাচারকে রক্ষার জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করে গেছেন। একদিকে পুলিশ এবং সরকার দলীয় ক্যাডার বাহিনী পাখির মতো গুলি করে নিষ্পাপ ছাত্রদের হত্যা করছিল। অপরদিকে আপনি সেই গুলির বিপক্ষে রিট খারিজ করতে পেরে বিজয়ের হাসি হাসছিলেন। ৪ আগস্ট হাইকোর্ট চত্বরে আপনার দেওয়া বক্তব্য জাতি ভুলে নাই। যেখানে আপনি বলেছিলেন, ‘আপনাদের যদি নেত্রীর পদত্যাগ দাবির রাইট থাকে তাহলে আমারও নেত্রীকে রক্ষা করার রাইট আছে’। কিন্তু দুঃখের বিষয় এ বক্তব্যের পরদিনই আপনার নেত্রী পালিয়েছে আর আপনারা গর্তে ঢুকে গেলেন। দুর্নীতির গোড়ায় সব সময় পানি ঢেলেছেন আর একটা দুইটা আগার বিরুদ্ধে লোক দেখানো মামলা করেছেন। ছি.. ছি.. আপনার লজ্জা থাকলে এখন এসব কথা বলতেন না।
মিজানুর রহমান টিপু লিখেছেন, ‘আপনি ভালো মানুষ ঠিক আছে, আপনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার তাও ঠিক আছে, কিন্তু আপনি প্রকাশ্যে ছাত্রদের দাবির প্রতি সরাসরি সমর্থন না দিয়ে শেখ হাসিনার পক্ষে বক্তব্য দিয়েছিলেন, আপনাকে এ দেশের ছাত্রসমাজ কখনো ক্ষমা করবে না’।
আমিন নামের একজন লিখেছেন, ‘আপনি কাজটা ঠিক করেন নাই। অবশ্য এ বিষয় আপনাকে বলে লাভ নাই। আপনি ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দিয়ে ভাইরাল হওয়ার নেশায় ছিলেন। কিন্তু আপনার মধ্যে নূন্যতম দেশপ্রেম আছে বলে মনে করি না’।
এমএ মনজুর লিমন লিখেছেন, ‘আপনারে ছাত্র-জনতার পাশে দরকার নেই। আপনি ফ্যাসিবাদের সহচর’।
চুনারুঘাটের বাসিন্দা নিশাত তাসনিম লিখেছেন, ‘অনেক ভাবনা চিন্তা করে হা হা রিয়্যাক্ট দিলাম। যৌবনের প্রথম ভুল ছিল আপনাকে ভোট দেওয়া। হাসিনাকে নিয়ে কিছু বললেন না যে। কী বললেন কোনো মাথামন্ডু পেলাম না। খালি গাইলেন কী করেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে! হাসিনার দুর্নীতি চোখে লাগলো না’?
বরকত উল্লাহ বলেছেন, গত ৩ আগস্ট এ কথাগুলো বলছিলেন, ‘আমি ছাত্রলীগের কর্মী। আমি শেখ হাসিনার পাশে আছি এবং থাকব! আমি দেশ ছেড়ে পালাব না। এখন যারা আন্দোলন করে তারা সবাই জামায়াত-শিবির’। আর আজকে আসছে নতুন নাটক করতে! দেশ থেকে পালাইছেন কেন ভাই? আপনার সাহস নিয়ে দেশে থাকা উচিত ছিল!
ওমর ফারুক লিখেছেন, ‘নাটক কম করো পিও। আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেছো আর তোমাদের সাজানো কোর্টে অত্যাচার করতে সহযোগিতা করেছো। মজলুমের আর্তনাদ বৃথা যায় না ইনশাআল্লাহ। তোমাদের পরিণাম মাত্র শুরু’।
আরিফুর রহমান নামের একজন লিখেছেন, ‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। আপনি শেষ মুহূর্তে এসে খুনি স্বৈরাচার হাসিনার দালালি করে ধরা খেয়ে গেছেন। আর কাজ হবে না’।
ব্যারিস্টার সুমনের শাস্তি দাবি করে ফাইজুল ইসলাম লিখেছেন, ৬ জুলাইয়ের ২ দিন আগে আপনি বলছিলেন, ‘এই আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে আপনার ছাত্রলীগকে ভূমিকা রাখতে। সেই আপনি আজকে এ ভিডিওবার্তা দিচ্ছেন, কীভাবে পারেন আপনারা? গণহত্যাকে সাপোর্ট করার জন্য আপনিও সমান অপরাধী। আপনারও শাস্তি হোক এ দেশের আইনে- এই কামনা করি আমরা সাধারণ মানুষ।
ইফতেখার ফয়সাল লিখেছেন, ‘আপনি স্বৈরাচার শেখ হাসিনার একনিষ্ঠ দালাল ছিলেন। সংসদে ৫ মিনিট কথা বললে ৪ মিনিট শেখ হাসিনাকে তেল মারতে চলে যাই তো আপনার। আপনি কোনো কিছুই বোঝাতে ভুল করেন নাই। এ গণহত্যার দায় আপনারও। আপনাদের মতো কালপ্রিটদের জন্যই শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠেছিল। আপনার যদি এতই দুর্নীতিবিরোধী মন থাকে হাসিনার পদ্মা সেতু আর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কথা ভিডিওতে এসে বলুন‘।
পারভেজ তরফদার বলেছেন, ‘এখন আর নাটক করে লাভ হবে না। তারপরও যেহেতু কিছু দুর্নীতির কথা উল্লেখ করেছেন সেটা না হয় গ্রহণ করলাম। কিন্তু পতিত সরকারের প্রধান মাফিয়া হাসিনার দুর্নীতির কথা যে নিয়মিতভাবে গণমাধ্যমে আসতেছে সেটা সম্পর্কে তো কিছু বললেন না!
আসলে আপনি মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা করেছেন এবং একটি দলের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। আসলে আপনি মনে করেছিলেন আওয়ামী লীগ বহুকাল থাকবে এবং আপনি মানুষকে বোকা বানিয়ে আপনি সুলতান সোলেমানের আসনে অধিষ্ঠিত হবেন। আর আপনি এটাও কল্পনা করেননি জনসম্মুখে আপনার মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যাবে। আপনার ফলোয়ারস ও ভিউয়ারস কমে যাবে। আপনার এখন মাথা ব্যথার মূল কারণ হলো আপনাকে আর বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। আপনি মানুষের কাছে আর গ্রহণযোগ্যতা পাবেন না। কিছু বললেই মানুষ আপনাকে নিয়ে ট্রল করবে’।
ব্যারিস্টার সুমনের আসনের বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন লিখেছেন, ‘আপনি চুনারুঘাট/মাধবপুরে এতগুলো ব্রিজ করলেন, গরিব মানুষকে সহযোগিতা করেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা করেছেন। এত ভালো কাজ করার পরও আপনি নিজ এলাকার মানুষের প্রতি বিশ্বাস না রেখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন! এর মানেই আপনার ভেতরের রূপ আর বাইরের রূপ ভিন্ন ছিল’।
নায়েম হাসান লিখেছেন, ‘সব বুঝলাম কিন্তু দিনশেষে আপনি খুনি হাসিনার পক্ষ নেওয়া লোক! সাধু সাজবেন না, দেশ থেকে পালানোর আগেও ছাত্র হত্যার দায়ে খুনি বঙ্গবন্ধু কন্যার পক্ষে থাকার জোরালো আওয়াজ তুলেছিলেন। এখন ভিন্ন সুর তুলছেন। আপনি যদি ছাত্রদের সঙ্গেই থাকতেন তাহলে ছাত্র-জনতার গণহত্যা নিয়ে কথা বলতেন, খুনি হাসিনার বিচার চাইতেন। শেষ বিচারে আসলে আপনি মানুষ না আওয়ামী লীগ’।
জামান তোফায়েল বলেছেন, ‘আমরা মানি ক্ষমতা পাবার জন্য তুমি অনেক অভিনয় করেছ। এটাও দেখেছি ক্ষমতা পাওয়ার পর তোমার আসল চেহারা। তুমি যে একটা দালাল, তোমার মুখোশ উন্মোচন হয়ে গেছে, আর অভিনয় করা লাগবে না’।
ডা. শেখ ফরিদ লিখেছেন, ‘আপনি সব সময় লাইম লাইটে থাকার জন্য যা যা করা দরকার তাই করে গেছেন। মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে সেলেব্রেটি হয়ে পড়ে এমপি বনে গেছেন। যদিও আপনার টার্গেট আরও অনেক বড় কিছু ছিল। শেষমেশ দালালি করতে গিয়ে ধরা খেয়ে গেলেন। মানুষ আপনাকে ক্ষমা করবে না মি. সুমন। কারন আপনি তাদের বিশ্বাসের জায়গায় আঘাত করেছেন’।
খোকন খান বলেছেন, ‘আপনি স্বতন্ত্র এমপি হয়ে শেখ হাসিনার এত পা চাটেন কেন। শেখ হাসিনা স্বৈরাচার জানার পরও তার দালালি করছেন। আপনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, তাহলে পালাইছেন কেন। শেখ হাসিনাও পালাইছে। এখন আপনি শেখ হাসিনার নামে মামলা করেন, তাহলে আপনাকে ক্ষমা করা হবে’।
শাহিদুল ইসলাম বলেছেন, সুমন ভাই, তোমার সব ঠিক আছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলো ঠিক আছে। কিন্তু তুমি আওয়ামী লীগের চামচামি করেছো- এইটাই তোমার সবচেয়ে বড় অপরাধ। কারণ আওয়ামী লীগকে দেশের কেউ দেখতে পারে না‘।
মোহাম্মদ কাওছার হোসেইন প্রশ্নে করেছেন, ‘আপনি এত ভালো হলে দেশ থেকে পালালেন কেন?’
সায়েদ আনোয়ার বলেছেন, ‘আপনি একজন দলকানা লোক। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে ভালোবাসি। কোটা সংস্কার আন্দোলনে আপনার কার্যক্রম দেখে বড়ই হতাশ হয়েছি। একজন ভালো মানুষ হিসেবে আপনাকে অনুরোধ করছি, আগামী নির্বাচনে আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আপনি আবার দাঁড়াবেন এবং দেশ ও দশের সেবা করবেন’।
ব্যারিস্টার সুমনকে ট্যাগ করে ইয়াসির আল ইমরান লিখেছেন, ‘আপনি লাস্ট দিন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মিটিংয়ে যেভাবে কথা বলেছেন! এটা কোনো এমপির কথা না, সন্ত্রাসীর কথা। আর সবচেয়ে বড় বড় দুর্নীতি অপকর্মে লিপ্ত খুনি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কিছু না বলায় মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করে না। মনে করে আপনি নাটকবাজ। আপনি যেগুলো নিয়ে কথা বলেছেন, সেগুলো নাটক এবং জালিমকে আড়াল করতে করেছেন’।
জামিল বিন আলাউদ্দিন বলেছেন, ‘আপনি ছাত্রদের একদফার ব্যাপারে কী বলেছিলেন মনে আছে? আপনি স্পষ্ট ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছিলেন। যে তারা সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দিয়েছে আপনি এটা সমর্থন করেন না, ছাত্রদেরকে ঘরে ফিরে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। আপনারা মিয়া হাসিনার চেতনাবাজরা হাসিনার বিরুদ্ধে যাওয়াকে গোনাহ মনে করতেন, অন্যায় মনে করতেন এখন এসব নাটক কম কর পিও’।
মোহাম্মদ নুরুল্লাহ বলেছেন, ‘আপনি আপনার দৃষ্টিতে অনেক কিছু করলেও বাস্তবে আপনি ছিলেন শেখ হাসিনার দুর্নীতির পক্ষের একজন মানুষ। এ কারণে আপনার চোখে কখনো শেখ হাসিনার ভুল ধরা পড়েনি, আপনার চোখে সজীব ওয়াজেদের ভুল ধরা পড়েনি, আপনি দেখতে পারেননি সালমান এফ রহমান কিংবা পলকের দুর্নীতি। আপনি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেলেও শুধু নিজের আসন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। আপনার চোখে যারা আন্দোলনে নেমেছিল তারা জামায়াত-শিবির, তারা দুষ্কৃতকারী। ১৮ জুলাইয়ের ঘটনার পর আপনি কথা বলার সাহস করতে পারেননি। আপনি ৪ আগস্ট যে স্টেটমেন্ট দিয়েছেন, এরপর আপনাকে আর বাংলার মানুষ রাজনীতিতে দেখতে চায় না’।
আব্দুল মুকিত বলেছেন, আর হবে না, ন্যাড়া বেলতলা দ্বিতীয় বার যায় না। তাই আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আপনাকে আর অন্তত এমপি বানাব না।
শামীম আহমেদ লিখেছেন, ‘আবারো ভাওতাবাজি শুরু’!
মোহাম্মদ জিয়া বলেছেন, ‘সব ঠিক আছে কিন্তু আন্দোলনের সময় ওপেন ছাত্রদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করেছেন।
মামুন মিজি বলেছেন, ‘মানুষের সিমপ্যাথি নিয়ে খেলার দিন শেষ, দালাল’।
ব্যারিস্টার সুমনকে স্বৈরাচারের অন্যতম সহযোগী ও বৈধতা প্রদানকারী উল্লেখ করে তাকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল মনসুর নামে এক নেটিজেন।
অপরদিকে ব্যারিস্টার সুমনকে চ্যালেঞ্জ করে সাইয়্যেদ আব্দুল্লাহ নামে একজন লিখেছেন, ‘ফাইজলামির জায়গা পান না? আপনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত খুনি ও স্বৈরাচারী হাসিনার দালালি করে গেছেন। শেখ হাসিনা যেখানে ছিল দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা, আপনি তারেই পীর মেনে অন্য কোথায় কী করেছেন, সেই ফিরিস্তি আর ম্যাটার করে না! আপনার সব দালালির ফিরিস্তি কিন্তু আছে আমার কাছে। একে একে সবগুলো উন্মোচন করে করে জবাব চাইলে, তখন ধুতি খুলে যাবে কিন্তু! সাহস থাকলে কোনো দিন আমার সঙ্গে হেড-টু-হেড বইসেন অনলাইন ডিবেটে, আপনার দালালির যেসব ফিরিস্তির নজির দেখাব, পারলে ডিফেন্ড কইরেন সেগুলো! আপনি যদি ডিফেন্ড করতে পারেন, তাহলে ধরে নেবো আপনি দালালি করেন নাই কখনো! রাজি’?
তানভীর আহমেদ আরজেল বলেছেন, ৪ আগস্ট কে বলেছিল ‘আমার গাড়ির পেছনে ২০ রাউন্ড (গুলি) আছে! ছাত্ররা আক্রমণ করলে সেগুলো ইউজ করব!’ তুমি দেশে আসো ভাইয়া। কিচ্ছু ভুলি নাই! কোনোদিন ভুলব না ইনশাআল্লাহ।
সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, ‘আপনার শেষ বক্তব্যটা একটু শুনুন, আপনি কত বড় দালাল। নিজেকে প্রশ্ন করেন, আপনি ভালো মানুষের চেহারার পেছনে বড় চাটুকারিতা ও দালালির লালসা লুকিয়ে ছিল। আপনি ক্ষমতার লোভে আন্দোলনকারীদের নিয়ে প্রশ্ন আছে, সন্দেহ আছে, বলেছেন। দালালের এক মহানায়ক আপনি। ফেরাউনের সঙ্গে পালিয়েছেন। আপনি যদি ভালো মানুষ হতেন তা হলে পালাতেন না’।
মেহরাজ মোহাম্মদ বাপ্পি লিখেছেন, আপনি অনেক দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে মামলা করছেন, কিন্তু এই দুর্নীতিবাজদের মায়ের (শেখ হাসিনা) পক্ষে সাফাই গাইলেন! বাঙালিকে এত বোকা মনে করেন কেন?
সোহান নামের একজন লিখেছেন, সমস্যা হচ্ছে শেষ দিন পর্যন্ত এই লোক চামচামি করে গেছে। এমনকি এটা ও বলেছিল- ‘কোটা নিয়ে যে যা চেয়েছো তার থেকে বেশি পেয়েছো’।
শামীম আহমেদ বলেছেন, আপনাকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতো এই দেশের তরুণ প্রজন্ম, তার ভেতর আমি নিজেও একজন ছিলাম কিন্তু আফসোস এ দেশের তরুণ প্রজন্মের ছাত্র-জনতার সবচেয়ে ক্রান্তিলগ্নে আপনাকে তারা পাশে পায়নি। এ প্রজন্ম আপনাকে নিয়ে ভীষণভাবে হতাশ সুমন সাহেব। যার প্রমাণ আজকের এ ভিডিওবার্তায় হা হা রিয়্যাকশনে। বিবেকের জানালা যখন খোলার দরকার ছিল তখনই আপনি বলেছেন ‘আপনার এ সস্তা জনপ্রিয়তা দরকার নেই’।আপনি দলকানা হিসাবে তখন আবির্ভূত হয়েছেন, যেটা খুবই হতাশজনক ছিল। আপনার বিবেকের দরজা খুলে যাক, সেই প্রত্যাশা। না হলে সারা জীবন এই ছাত্র-জনতার ঘৃণা নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে আপনাকে।
মিজান শিকদার লিখেছেন, ‘মি. দালাল, সবাই বুঝে গেছে আপনাকে আর আপনার চাপাবাজি মানুষ নেবে না। মানুষের বিবেক বলতে কিছু আছে’।
আনোয়ার রাজ বলেছেন, ‘ব্যারিস্টারের সবচেয়ে বড় ভুল এবং অন্যায় হচ্ছে- ছাত্রদের দাবির প্রতি সরাসরি সমর্থন না দিয়ে শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের পক্ষে দালালি করে বক্তব্য দেওয়া’।
রাশেদ হোসাইন নামে একজন লিখেছেন, ‘Don’t come back. We don’t need you’.
মিসবাহুল ইসলাম লিখেছেন, ‘এ বক্তব্যটা আন্দোলনের সময় দিলে কমপক্ষে মেনে নিতে পারতাম। দুঃখিত এখন পারলাম না। ধন্যবাদ’।
মহসিন পারভেজ লিখেছেন, মুরুব্বি মুরুব্বি মুরুব্বি আহো, আপনি আর বইলেন না। আপনি লাস্টের দিনে যে কী বলেছিলেন মনে আছে? কার আদর্শের কথা যে বলেছিলেন। ‘আন্দোলন আর আন্দোলন নাই এইটা জামায়াত-শিবির-বিএনপির আন্দোলন’।
এইচ আর জুনায়েদ লিখেছেন, ‘আপনার ভালো মানুষের চেহারার পেছনে বড় চাটুকারিতা ও দালালির লালসা লুকিয়ে ছিল’।
তাসলিয়াত তাবিন লিখেছেন, ‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। আপনার অতীত ঠিকই ছিল, কিন্তু শেষ সময়ে এসে যদি ছাত্রদের পক্ষে একটা স্ট্যান্ডবাজি নিতেন, তাহলে আজকে উপদেষ্টা পরিষদে ঠাঁই পেতেন। তা না করে তেলবাজি করে করে নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন। খারাপ লাগে ভাই, আপনার একজন ফ্যান ছিলাম, সেটা বিশ্বাসঘাতকতা করলেন’!
তবে বেশির ভাগ মানুষ তার সমালোচনা করলেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় ব্যারিস্টার সুমনের প্রশংসা করেছেন অনেকেই।