নিজস্ব প্রতিবেদক,
টানা ১৬ বছর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে থাকা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। এ সংবাদ শোনার পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চলছে ছাত্রজনতার আনন্দ মিছিল। পাশাপাশি দেশজুড়ে ভাঙচুর করা হয়েছে দেশের নানা স্থাপনা। শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপর লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে আসা। তারা বিজয় প্রকাশের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায়।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে আগুন,
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। সোমবার (৫ আগস্ট) বিকাল পৌনে ৪টার দিকে সেখান দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
সুধা সদনে আগুন,
বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ধানমন্ডির সুধা সদনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এর আগে সুধা সদনে ভাঙচুর চালানো হয়। বাড়ি থেকে জিনিসপত্র বের করে যে যার মতো নিয়ে চলে যায়।
আওয়ামী লীগের কার্যালয়-বিজয় সরণির বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ভাঙচুর,
রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। রাজধানী ঢাকার বিজয় সরণিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হচ্ছে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে একদল মানুষকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে হাতুড়ি দিয়ে ভাঙার চেষ্টা চলে।
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা-ভাঙচুর,
রাজধানীর হেয়ার রোডে অবস্থিত প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের বাসভবনে ভাঙচুর ও হামলা হয়েছে। সোমবার বিকেলে মিছিল নিয়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েন বহু মানুষ। বাসভবন ভাঙচুরের পাশাপাশি সেখান থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া হয়।
আদাবর থানায় আগুন,
ঢাকা মহানগর পুলিশের আদাবর থানায় আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা৷ একই সঙ্গে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে থানার মালামাল-কাগজপত্র। এ সময় শুরুতে সাধারণ মানুষকে প্রতিহত করার চেষ্টা চালায় পুলিশ। তবে জনতার রোষানলে কাছে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি পুলিশ। পরে থানা ছেড়ে চলে যান পুলিশ সদস্যরা।
উত্তরা পূর্ব থানায় আগুন,
সোমবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকেও উত্তরা পূর্ব থানা ঘিরে রেখেছে কয়েকশ মানুষ। থানার নিচে আগুন দেওয়া হলে সেখানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় প্রচুর মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের অনেককে নেওয়া হয় কাছের উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় আগুন,
রাজধানীর ধানমন্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করেছেন আন্দোলনকারীরা। ফটক ভেঙে হাজারো আন্দোলনকারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় ঢুকে পড়েন। বাড়ির ভেতর থেকে ধোঁয়াও বের হতে দেখা যায়। ভেতরে ভাঙচুরও চলে।
পুলিশ সদর দফতর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে আগুন,
রাজধানী ঢাকার গুলিস্তানে পুলিশ সদর দফতর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ভবনে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় দুটি ভবনে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। সোমবার রাত পৌনে ৮ টার দিকে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
সাভার থানায় হামলা,
শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরের পর থেকেই সাভার মডেল থানায় হামলা করেছেন আন্দোলনকারীরা। বিকেল ৩টার দিকে সাভার পৌর এলাকার থানা রোড়ে স্লোগান দিতে দিতে কয়েকশ আন্দোলনকারী প্রবেশ করে। এ সময় সাভার প্রেসক্লাবে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট করে তারা। পরে তারা সাভার মডেল থানার দিকে এগিয়ে আসে। পরে সাভার মডেল থানার সামনে আন্দোলনকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়।
বাড্ডা থানায় হামলা,
রাজধানীর বাড্ডা থানায় আক্রমণ চালায় উত্তেজিত জনতা। পরে জনরোষ থেকে বাঁচতে একের পর এক গুলি ছুড়ছে পুলিশ। হামলা ও গুলির ঘটনায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনের হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। বিকেল ৩টার দিকে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।
চট্টগ্রামে থানায় থানায় হামলা,
চট্টগ্রামে একাধিক থানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। নগরের কোতোয়ালি, পতেঙ্গা, পাহাড়তলী ও চান্দগাঁও থানায় হামলা করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় পুলিশের অস্ত্র, গুলি ও মালামাল লুট করা হয়। একই সঙ্গে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। এসব ঘটনায় কয়েকজন হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।
যশোরে শাহীন চাকলাদারের হোটেলে আগুন,
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধরা। শহরের চিত্রার মোড়ে অবস্থিত ১৪ তলা ওই হোটেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নেত্রকোণায় পুলিশের গাড়িতে হামলা,
নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার শ্যামগঞ্জ বাজারে পুলিশের গাড়িতে হামলা করে ৭টি অস্ত্র ও ৪২০ রাউন্ড গুলি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উত্তেজিত আন্দোলনকারীরা ছয়জন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে আহত করেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে পুলিশের একটি গাড়ি।
খুলনার বিভিন্ন অফিস, বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর-আগুন,
খুলনায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিনের বাড়িসহ বিভিন্ন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
চুয়াডাঙ্গায় পুড়েছে আওয়ামী লীগের অনেক কার্যালয়,
চুয়াডাঙ্গা শহরের বিভিন্ন রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ব্যানার ফেস্টুন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙচুর করা হয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতার কার্যালয়।
ময়মনসিংহে নানা স্থাপনা ভাঙচুর,
ময়মনসিংহ নগরের শিববাড়ি রোডে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, সার্কিট হাউজ সংলগ্ন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর, রাইফেলস ক্লাব ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এছাড়া কোতোয়ালি মডেল থানাতেও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর করা হয়।
সিলেটে লুটপাট,
সিলেট নগরের ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিল এবং ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। এছাড়া আড়ং, ফুলকলি, মাহাসহ নগরের বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট করা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের বাসভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে জনতা। জেলা পরিষদ ভবনেও ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া কোতোয়ালি থানা, গোলাপগঞ্জ থানাসহ বিভিন্ন থানা, লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।