দোয়ারাবাজার(সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
দোয়ারাবাজারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভূমি জবর দখলের পায়তারায় ঘরবাড়ি নির্মাণ চেষ্ঠার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। জবর দখল থেকে রেহাই পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে ভোক্তভোগী পরিবার।
জানা যায়, দেয়ায়ারাবাজার উপজেলাধীন এস.এ, ৯৮ ও আর.এস, ৫ নং জে.এল, সংক্রান্ত সুড়িগাও মৌজার ১ম তপশীলের অন্তর্গত নালিশা ২য় তপশীল বর্ণিত ভ’মিতে রেজমিনা আক্তারের শান্তিপূর্ণ ভোগ দখলে যাতে কেউ বাঁধা ও জোরামূলে গৃহনির্মাণ না করতে পারে সেজন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সম্প্রতি গৃহনির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে বলে মামলায় উল্ল্যেখ করা হয়েছে।
এছাড়া এস.এ, ৯৮ নং জে.এল, সংক্রান্ত সুড়িগাও মৌজার এস.এ, ৫০০ নং খতিয়ানের মালিকগণ বিগত এস.এ, রেকর্ডের পূর্বেই এই খতিয়ানের সাকুল্য ভূমি পারিবারিকভাবে ভাগ বন্টন করে নেন। এরই প্রেক্ষিতে বর্ণিত খতিয়ানের স্ব-স্ব দাগের বিপরীতে মন্তব্যের কলামে রেকর্ডীয় মালিকগণের নাম লিপিবদ্ধ হয়ে এস.এ, ৫০০ নং ফাইনাল খতিয়ান প্রকাশিত হয়। নালিশা ১০৩৫ নং দাগের ০.১৫ একর, ১১০৩৬ নং দাগের ০.২৩ একর, ১০৩৭ নং দাগের ০.৫২ একর ও ১০৩৮ নং দাগের ০.২৫ একর ভ’মির বিপরীতে মন্তব্যের কলামে হারিচের নাম লিপিবদ্ধ আছে। রেকর্ডীয় মালিক হারিছ উল্লা নালিশা ও অনালিশা ভ’মি দখলে থাকা অবস্থায় তার ৫ পুত্র ও ৩ কন্যাকে উত্তরাধিকারী রেখে মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে নালিশা এস.এ ১০৩৫, ১০৩৬, ১০৩৭, ১০৩৮ নং দাগের ০.৬০ একর ভ’মি দখলে থাকা অবস্থায় চলমান আর.এস ২২৮৫ নং দাগে আর.এস ৫২৩ নং খতিয়ানে তাদের নাম রেকর্ডভ’ক্ত হয়ে দখলে থাকা অবস্থায় নিয়ামত আলী মোট ভ’মি ০.৬০ এর চার ভাগের এক ভাগ অর্থ্যাৎ ০.১৫ একর ভ’মিসহ অনালিশা ভ’মি তার ভাই রোছমত আলীর নিকট গত ০৪.০৩.২০১৫ সালে বিক্রিয় করে দখল ত্যাগী হন। তবে বর্ণিত দলিল সম্পাদনকালে ওই মৌজার গেজেট প্রকাশ না হওয়ায় আর.এস, দাগ নং, ও আর.এস, খতিয়ান নং লিপিবদ্ধ করা সম্ভব হয় নি। পরবর্তীতে ২০২২ সালে মৌজার গেজেট প্রকাশিত হলে নামজারি করার পর অদ্যাবধি দখল পরিচালনা করে আসছিলেন।
তবে ইদানিং নিয়ামত আলী গংরা ভ’মি গ্রাসের লক্ষ্যে মিথ্যা মামলা দিয়ে ভ’মির মালিককে হয়রানি করে আসছে। ওই মিথ্যে মামলার হাত থেকে বাঁচতে ভ’মির মালিক ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র থাকার সুবাধে নিয়ামত আলী গংরা ওই ভ’মিতে গৃহনির্মাণের লক্ষ্যে ইট,বালু-পাথরসহ যাবতীয় সামগ্রী এনে স্তুপাকারে রেখেছেন এবং জোরপূর্বক গৃহনির্মাণ করার হুমকি প্রদান করে আসছেন। নিয়ামত আলী গংরা এলাকার দাঙ্গাবাজ ও দুষ্টু প্রকৃতির লোক হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন ভ’মির প্রকৃত মালিক।
জানা যায় গত ২৮ জুলাই বাড়ির দেয়াল নির্মাণকালে এলাকার লোকজনকে বিষয়টি দেখাতে নিয়ে গেলে নিয়ামত আলী গংরা বাদীনির বোন জামাই জাকির হোসেন বাবুল (৩৫), কে অপহরণের চেষ্ঠায় আটক করে বাদীনির ভাবী রাজিয়া বেগম (৩৭) সহ তার দুই শিশু সন্তানকে মারধর করে। পরবর্র্তীতে দোয়ারাবাজার থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করেন। মারধরের শিকার জাকির হোসেন ও রাজিয়া বেগম মারাত্মকভাবে জখমপ্রাপ্ত হলে তাদের চিকিৎসার জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে অবস্থা আশঙ্কাজনত হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
এভাবে মারধর ও হুমকি দামকি প্রদান করে নিজেদের কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে নিয়ামত আলী গংরা। আইন আদালতের তোয়াক্কা না করে নিয়ামত আলী গং দের গৃহ নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় আদালতে মামলা দায়ের করেন রোজমত আলী গং।
এরই প্রেক্ষিতে নালিশা ভ’মি সরজমিন পরিদর্শনের জন্য নির্দেশ দেন আদালত। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে নালিশা ভ’মি সরজমিনে পরিদর্শনে যান এডভোকেট জান্নাতুল ফেরদৌস আফসানা। পরিদর্শনের পর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তিনি। সরজমিনে পরিদর্শনকালে ১ম বিষয় ভ’মির আকার আকৃতি ও প্রবৃত্তি নিরুপন করেন তিনি।
সেই সাথে বাদী-ও বিবাদী ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে ভ’মি চিহিৃত করার পর দেখতে পান বাড়ি, বরন্ডি ও পুকুর রকম ভ’মি। পরিদর্শনের ২য় বিষয় ওই নালিশা ভ’মিতে পূর্ব পশ্চিমে লম্বমান ১৬টি পিলার বিশিষ্ঠ নির্মানাধীন একটি গৃহ নির্মাণের কাজ চলছে বলে প্রতিবেদনে উল্ল্যেখ করেন তিনি।
ওই প্রতিবেদন আদালতের দাখিল করার পর আদালত ওই ভ’মিতে গৃহ নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার ঘোষনা প্রদান করলেও আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম। তাই ন্যায় বিচারের আশায় ওই নালিশা ভ’মিতে গৃহনির্মাণ কাজ বন্ধে যেন আদালত দোয়ারাবাজর থানার অফিসার ইনচার্জকে আদেশ প্রদান করেন এই দাবী জানান ভ’মি মালিক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বিবাদী সোবহান মিয়া জানান, আমরা যে ভ’মিতে গৃহনির্মাণ করছি সেখানে আদালতের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। এটা সম্পূর্ণ ভ’ল তথ্য। সেই সাথে অপহরণের বিষয়টাও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এ ধরনের কোন কার্যক্রমের সাথে আমরা জড়িত নয়।
এ ব্যপারে দোয়ারাবাজার থানার (ওসি) বদরুল হাসান জানান, আদালতের নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার আগে তারা গৃহনির্মাণ কাজ করেছিলো। পরবর্তীতে আদালত নিষেধাজ্ঞা প্রদান করলে গৃহনির্মাণের চলমান কাজ পুলিশের হস্তক্ষেপে বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও জায়গা সংক্রান্ত বিরোধে তাদের একটি হত্যা মামলা চলমান রয়েছে।