বিশেষ প্রতিনিধি,
হবিগঞ্জে গণমিছিলে উত্তেজিত শিক্ষার্থী ও বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে একজন পথচারীর মৃত্যু হয়।
শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ শেষে হবিগঞ্জ শহরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম মোস্তাক আহমেদ। তিনি পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান ছিলেন। তার বাড়ি সিলেটে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, দুপুরে হবিগঞ্জ কোট মসজিদ এলাকায় সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে গণমিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। অপরদিকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এর উদ্যোগে হবিগঞ্জ চৌধুরী বাজারের খোয়াই মুখ এলাকায় গণমিছিল টাউন হল এলাকার দিকে আসছিল।
সে সময় টাউন হল এলাকায় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী অবস্থান নেন। মিছিলটি টাউন হল এলাকায় আসলে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ সময় কোর্ট মসজিদ থাকা সাধারণ ছাত্ররা বিষয়টি জানতে পারলে তারাও টাউন হল এলাকার দিকে রওনা করেন। এ দিকে শহরের শায়েস্তানগর এলাকা থেকে জেলা যুবদলের সদস্য সচিব শফিকুর রহমান সিতুর নেতৃত্বে একটি মিছিল নিয়ে ছাত্রদল, যুবদলের নেতাকর্মীরা সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে।
এ সময় তারা টাউন হল এলাকায় পৌঁছে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুন, হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্যের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ৮ থেকে ১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর, ১টি প্রাইভেট কারসহ ৪টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় এবং সংসদ সদস্যের বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
এ সময়ে সংসদ সদস্যের ছোট ভাই হবিগঞ্জ জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বদরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আলমগীর চৌধুরী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাচ্ছিরুল ইসলামকে লাঞ্ছিত করা হয়। পরে সংসদ সদস্যের ভাতিজা মো. মহসিন তার নিজের পিস্তল থেকে ফাঁকা গুলি ছোড়েন বলে জানা গেছে।
পরবর্তীতে আন্দোলনকারীরা তিনকোনা পুকুর পাড় এলাকায় বানিয়াচং সার্কেলের অফিসে আগুন, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ভাঙচুর, সেন্ট্রাল হসপিটালে ভাঙচুর করে। এ সময় জেলা বিএনপি অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আন্দোলনকারীরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় আগুন জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখে।
পরবর্তীতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টায় কয়েকশ’ রাবার বুলেট ছুড়ে আন্দোলনকারী ছাত্রদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় আন্দোলনকারীদের ৭০ থেকে ৮০ জন এবং পুলিশের ১৬ জন সদস্য আহত হন। এছাড়া পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হন। তার নাম মো. মোস্তাক মিয়া। তিনি সিলেটের টুকেরবাজার এলাকার বাসিন্দা।
জানা গেছে, নিহত মোস্তাক মিয়া পিডিবির অস্থায়ী লাইনের কাজ করতেন। তিনি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ভাঙ্গা পুল এলাকায় থাকতেন।
এ সময় আন্দোলনকারীদের একজনকে গ্রেফতার করা হয়।
পরে সন্ধ্যায় সাতটারদিকে পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয় এবং যান চলাচল শুরু হয়। বর্তমানেও এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।