বিশেষ প্রতিনিধি,
সিলেটে লিঙ্গ কেটে হিজড়া বানানো চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, ছিনতাই রাহাজানি, নেশাদ্রব্য সেবন ও বিক্রিসহ নানা অভিযোগে সোমবার (১৫ জুলাই) সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন সিলেটের অন্যতম নেতৃস্থানীয় হিজড়া, বর্তমানে দক্ষিণ সুরমার খোজারখলা এলাকার বাসিন্দা ভান্ডারি রানা ভুঁইয়া (৫২)। তিনি ১৩ জনকে অভিযুক্ত করেছেন।
তারা হলেন, দক্ষিণ সুরমার কদমতলী বালুর মাঠ এলাকার কালি ওরফে আব্দুল্লাহ (৪০), মোগলাবাজার থানার গোটাটিকর এলাকার লিমা ওরফে লিমন (৩০), শিববাড়ি এলাকার ইমা (২৫), সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের বাজিতপুর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আদুরী ওরফে আবেদ আলী (২৪), দক্ষিণ সুরমার সাধুরবাজারের আলেয়া (৬০), হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের গুনই গ্রামের সমশের আলীর ছেলে লিপি ওরফে অলিউর রহমান (৩৫), দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলার পাখি (৪৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের জমিলা (৩৮), কোম্পানীগঞ্জের টুকেরবাজার এলাকার শান্তা ওরফে লিটন (২৮), মোগলাবাজারের শিববাড়ি এলাকার চাঁদনী (৩০), একই এলাকার সানজিদা (৩২), দক্ষিণ সুরমার সাধুরবাজারের চাঁদনি (২৮), গোয়াইনঘাটের জাফলং এলাকার দিলারা বেগমসহ (৩০) অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার (১২ জুলাই) কালি, লিমা, ইমা হিজড়াসহ কয়েকজন হিজড়া আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে সুবিদবাজার এলাকায় রানা ভুঁইয়ার উপর হামলা চালায়। এতে তিনি কিছুটা আহত হলেও পালিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন।
পরদিন শনিবার (১৩ জুলাই) রাত ১১টার দিকে নগরীর মেন্দিবাগ এলাকার গার্ডেন টাওয়ারের সামনা থেকে তার গ্রুপের রত্না হিজড়াকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কালি লিমা ইমা হিজড়ার গ্রুপের কয়েকজন হিজড়া মিলে অটোরিক্সায় অপহরণ করে নিয়ে যায়। তাকে কদমতলি বালুর মাঠে একটি নির্জন কক্ষে আটকে রাখে।
পরে অপহরণকারীরা ০১৭২৩৭৩৬৬৯৮ নম্বর থেকে রানার ব্যবহৃত মোবাইলে কল দিয়ে ১ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অন্যতায় তাকে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। রানা টাকা দিতে অস্বীকার করেন অপহরণকারীরা রত্নাকে মারধোর করে। এতে তিনি মারাত্মক আহত হন। তারা রত্নার গলার ১ ভরি স্বর্ণের চেইনসহ প্রায় দেড়লাখ টাকার স্বর্ণালংকার ও মোবাইল সেট কেড়ে নেয়। অপহরণের বিষয়টি কোতোয়ালি থানা পুলিশকে অবগত করলে তারা কদমতলী বালুর মাঠ থেকে তাকে উদ্ধার করে।
অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, অভিযুক্তরা ছিনতাই রাহাজানি নেশাদ্রব্য সেবন ও বিক্রি, লিঙ্গ কর্তন করে হিজড়া তৈরিসহ আরও নানা অপকর্মে লিপ্ত। এরা লিঙ্ক কর্তনকারী। তারা লিঙ্ক কর্তন করে নিজেদের হিজড়া পরিচয় দিয়ে অসামাজিকতা করে আসছে। এ অবস্থায় তিনি অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মঈন উদ্দিন শিপন বলেছেন, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্ল্যেখ্য, সিলেটে হিজড়াদের অভ্যন্তরিন কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়েই এই কোন্দল। সম্প্রতি নেতৃস্থানীয় এক হিজড়ার উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং অপর একজনকে প্রতিপক্ষ অপহরণ করেছে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করলেও অপহরণকারীদের মারধরে তিনি মারাত্মক আহত হয়েছেন। তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
সিলেটের হিজড়াদের অভ্যন্তরীন কোন্দল অনেক পুরানো। চাঁদাবাজীসহ বিভিন্ন স্বার্থে তারা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই কোন্দল। কখনো কখনো তা সংঘর্ষেও রূপ নেয়। হয় থানা পুলিশ। কিন্তু এতেও হচ্ছেন কোন সমাধাণ।