ইসলাম প্রতিদিন,
যিনি রিজিক যোগান তিনি অবশ্যই মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা। তিনি নিজের উপর এটা বাধ্যতামূলক করে নিয়েছেন যে, তিনি তার বান্দাদের জন্য যে রিজিক লিখে রেখেছেন তা তিনি তাদের নিকট পৌঁছে দেবেন।
প্রতিটি প্রাণীর জীবনধারণের জন্য আল্লাহ তাআলার এমন বিশেষ দানকে রিজিক বলা হয়, যা নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী প্রদান করা হয়; আর তার মাধ্যমে প্রাণীটির সার্বিক উপকার সাধিত হয়। রিজিক সেটাই, যা বান্দার উপকারে আসে। উপকারে আসার বিষয়টিও ব্যাপক—ইহকাল ও পরকাল তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
প্রিয় পাঠক, এখন আমরা কোরআন ও হাদিস থেকে রিজিকের সর্বনিম্ন থেকে সর্বোচ্চ স্তরসহ সংক্ষেপে জানার চেষ্টা করবো-
> রিজিকের সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে: টাকা, পয়সা, অর্থ এবং সম্পদ।
> রিজিক এর সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে: শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা।
> রিজিকের সর্বোত্তম স্তর হচ্ছে: পুণ্যবান স্ত্রী এবং পরিশুদ্ধ নেক সন্তান এবং
> রিজিক এর পরিপূর্ণ স্তর হচ্ছে: মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি।
> রিজিক খুব গভীর একটি বিষয়, যদি আমরা তা বুঝতে পারি।
> আমি পুরো জীবনে কত টাকা আয় করবো সেটা লিখিত, কে আমার জীবনসঙ্গী হবে সেটা লিখিত, কবে কোথায় মারা যাবো সেটাও লিখিত এবং কতটা খাবার ও পানীয় গ্রহণ করবো তাও লিখিত বা নির্দিষ্ট।
> আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, আমি কতগুলো দানা বা ভাত দুনিয়াতে খেয়ে তারপর মারা যাবো সেটা লিখিত। একটি দানাও কম না এবং একটিও বেশি না।
> ধরুন এটা লিখিত যে আমি সারাজীবনে এক কোটি টাকা আয় করবো, এই সিদ্ধান্ত আল্লাহ্ তাআলা নিয়েছেন।
> কিন্তু, আমি হালাল উপায়ে আয় করবো না হারাম উপায়ে আয় করবো সেই সিদ্ধান্ত একান্তই আমার।
> যদি ধৈর্য ধারণ করি, আল্লাহ তাআলার কাছে চাই, তাহলে হালাল উপায়ে ঐ এক কোটি টাকা আয় করেই আমি মারা যাবো। আর হারাম উপায়ে হলেও ঐ এক কোটিই… নাথিং মোর, নাথিং লেস!
> আমি যেই ফলটি আজকে টেকনাফ বসে খাচ্ছি, সেটা হয়ত ইতালি কিংবা থাইল্যান্ড থেকে ইমপোর্ট করা। ঐ গাছে যখন মুকুল ধরেছে তখনই নির্ধারিত হয়েছে যে, সেটি আমার কাছে পৌঁছাবে। এর মধ্যে কত পাখি ঐ ফলের উপর বসেছে, কত মানুষ এই ফলটি পাড়তে গেছে, দোকানে অনেকে এই ফলটি নেড়েচেড়ে রেখে গেছে, পছন্দ হয়নি বা কিনেনি। এই সব ঘটনার কারণ একটাই, ফলটি আমার রিজিকে লিখিত। যতক্ষণ না আমি কিনতে যাচ্ছি, ততক্ষণ সেটা ওখানেই থাকবে। এর মধ্যে আমি মারা যেতে পারতাম, অন্য কোথাও চলে যেতে পারতাম, কিন্তু না! রিজিকে যেহেতু লিখিত আমি এই ফলটি না খেয়ে মারা যাবো না।
> রিজিক জিনিসটা এতোটাই শক্তিশালী!
> কিংবা যেই আত্মীয় কিংবা বন্ধু-বান্ধব আমার বাসায় আসছে, সে আসলে আমার খাবার খাচ্ছে না। এটা তারই রিজিক, শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলা আমার মাধ্যমে তার কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। হতে পারে এর মধ্যে আমাদের জন্য মঙ্গল রয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ!
> কেউ কারোটা খাচ্ছে না, যে যার রিজিকের ভাগই খাচ্ছেন।
> আমরা হালাল না হারাম উপায়ে খাচ্ছি, সেটা নির্ভর করছে আমি আল্লাহ তাআলার উপর কতটুকু তাওয়াক্কাল আছি, কতটুকু ভরসা করে আছি। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘দুনিয়ায় বিচরণকারী এমন কোনো প্রাণী নেই, যার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর নেই। তাদের স্থায়ী এবং অস্থায়ী অবস্থানস্থল সম্পর্কে তিনি অবহিত। সব কিছুই একটি সুস্পষ্ট কিতাবে লেখা আছে’। (সূরা: হুদ. আয়াত: আয়াত: ৬)
> আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য কোনো না কোনো পথ বের করে দেবেন। আর তাকে (এমন উৎস থেকে) রিজিক দেবেন, যা সে ধারণাও করতে পারবে না’। (সূরা: ত্বালাক, আয়াত: ২-৩)
> মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সঠিক পথ এবং হালাল ও প্রশস্ত কামাই রোজগার ও রিজিক এর ব্যবস্থা করে দিন এবং সব ধরনের হারাম কামাই রোজগার ও রিজিক থেকে হিফাজত করুন এবং আমাদের সবাইকে ক্ষমা ও হেফাজত করুন। আমিন।