ধর্ম ও জীবন ডেস্ক,
হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম ইসলামে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ মাস, হাদিসে এ মাসটিকে আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। আর এই মাসের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ দিন হলো মহররম মাসের দশম দিন। এই দিনটি আশুরা নামে পরিচিত। এই দিনে রোজা রাখার অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে।
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (স.) হিজরত করে মদিনায় এলেন এবং তিনি মদিনার ইহুদিদের আশুরার দিন রোজা রাখতে দেখলেন। এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, এটা সেই দিন—যেদিন আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে মুক্তি দিয়েছেন এবং ফেরাউন ও তার জাতিকে ডুবিয়ে মেরেছেন। তাঁর সম্মানার্থে আমরা রোজা রাখি। তখন রাসুল (স.) বললেন, ‘আমরা তোমাদের চেয়েও মুসা (আ.)-এর অধিক নিকটবর্তী।’ এরপর তিনি এ দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। (সহিহ মুসলিম: ২৫৪৮)
আশুরার রোজা রাখার ক্ষেত্রে শরিয়তের বিধান হলো- মহররমের ৯ তারিখ ও ১০ তারিখ অথবা ১০ ও ১১ তারিখ দুটি রোজা রাখা। কেননা ইহুদিরা একটি রোজা রাখে। তাদের বৈসাদৃশ্যের জন্য দুটি রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে। (মুসনাদে আহমদ: ২১৫৪)
অবশ্য কেউ যদি শুধু ১০ মহররম রোজা রাখে, সেটিও আশুরার রোজা হিসাবেই গণ্য হবে। তবে হাদিসের নির্দেশনার ওপর আমল না করার কারণে মাকরুহ তথা অনুত্তম হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখ এবং তাতে ইহুদিদের বিরোধিতা করো, আশুরার আগে একদিন বা পরে একদিন রোজা রাখো।’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা: ২০৯৫)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, ‘আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি, তাহলে ৯ তারিখেও অবশ্যই রোজা রাখব।’ (সহিহ মুসলিম: ১/৩৫৯)
এ বছর তথা ২০২৪ সালের পবিত্র আশুরার দিনটি হলো- ১৭ জুলাই, বুধবার। যারা দুইটি রোজা রাখার নিয়ত করেছেন, তারা ১৬ ও ১৭ জুলাই তথা মঙ্গল ও বুধবার রোজা রাখবেন। অথবা ১৭ ও ১৮ জুলাই তথা বুধ ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখবেন।
আশুরার রোজার ফজিলত
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুল (স.)-কে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।’ (সহিহ বুখারি: ১/২১৮) আশুরার রোজার ব্যাপারে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবী কারিম (স.) বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর মাস মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ।’ (সহিহ মুসলিম: ২/৩৬৮; জামে তিরমিজি: ১/১৫৭)
আলী (রা.)-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল, রমজানের পর আর কোনো মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এই প্রশ্ন আল্লাহর রাসুল (স.)-এর নিকট জনৈক সাহাবি করেছিলেন, তখন আমি তার খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তবে মহররম মাসে রাখ। কারণ, এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তাআলা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।’(জামে তিরমিজি: ১/১৫৭)
অন্য হাদিসে নবী (স.) বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহ তাআলা অতীতের এক বছরের (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (সহিহ মুসলিম: ১/৩৬৭; জামে তিরমিজি: ১/১৫৮)