নিজস্ব প্রতিবেদক,
ভারত থেকে নেমে আসা ঢল আর অতিবৃষ্টিতে সিলেটে চলমান বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। মাস খানেকের ব্যবধানে তিনদফা বন্যার ধাক্কায় লন্ডভন্ড সিলেট। কোনো এলাকায় বন্যার পানি কমছে আবার কোনো এলাকায় এখনও বাড়ছে। ফলে দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে বানভাসি মানুষের।
বুধবার (১০ জুলাই) রাতে জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, এখনো জেলার এক হাজারের বেশি গ্রাম পানিতে তলিয়ে রয়েছে। পানিবন্দি প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ। আর আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
এদিকে তৃতীয় দফা বন্যার ১০ দিন পরও সুরমা-কুশিয়ারা নদীর তিনটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার বিকেল থেকে ভারী বর্ষণের কারণে কোনো কোনো পয়েন্টে পানি আরও বেড়েছে। এতে বন্যা আরও দীর্ঘস্থায়ী রূপ ধারণ করছে।
সিলেট জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী গত ২৯ মে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটে প্রথম দফায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ৮ জুনের পর পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়। পরে ১৬ জুন ঈদুল আজহার আগের দিন ফের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দ্বিতীয় দফায় বন্যা দেখা দেয়। এরপর ২৫ জুন থেকে সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতি হতে শুরু করে।
কিন্তু ১ জুলাই ফের অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়ে ততৃীয় দফায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তৃতীয় দফায় বন্যায় ১০ দিন পার হলেও এখনো জেলার সবকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত রয়েছে। বুধবার (১০ জুলাই) বিকেল থেকে অতিবৃষ্টির কারণে বিভিন্ন এলাকায় ফের পানি বৃদ্ধির খবর পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সকালে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্ট বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে বুধবার এই পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল।
কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশিদ পয়েন্টে সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে গতকাল বুধবার এই পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল।
কুশিয়ার নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার ওপর রয়েছে। গতকাল এই নদীর পানি বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
বুধবার (১০ জুলাই) রাতে সিলেট জেলা প্রশাসনের বন্যা সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্যায় জেলার ১৩টি উপেজেলার ৯৫টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৪১টি গ্রাম প্লাবিত রয়েছে। এতে পনিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন ৫ লাখ ৩৯ হাজার ২৯৮ জন মানুষ। এসব এলাকায় ২১৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৯ হাজার ৩৬০ জন মানুষ অবস্থান করছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন বলেন, বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১১৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।