Sunday, November 24, 2024
Homeসিলেট বিভাগসিলেটে বন্যায় শিক্ষা ব্যবস্থায় বিপর্যয়

সিলেটে বন্যায় শিক্ষা ব্যবস্থায় বিপর্যয়

নিজস্ব প্রতিবেদক,

 

> এখনো পাঠদান বন্ধ ২৮১ বিদ্যালয়ে

> মাধ্যমিকে বন্ধ ৭১ প্রতিষ্ঠান

> পানিবন্দি সাড়ে ৫ লাখ মানুষ

 

 

সিলেটে চলতি বছরে তৃতীয় দফায় বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। ২০২২ সালের বন্যার আঘাত সামলাতে না সামলাতেই দুই মাসের মধ্যে টানা তৃতীয় দফা বন্যার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন সিলেটবাসী। বন্যার পানি নামছেও ধীর গতিতে। এতে করে সড়ক, মৎস্যখাত ও অবকাঠামোসহ নানা খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেটের শিক্ষা ব্যবস্থা। সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের হাজারের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এতে করে মানুষের দুর্ভোগের পাশাপাশি পড়ালেখায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে শিক্ষার্থীদের।

 

 

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, সিলেট জেলার মোট ১ হাজার ৪৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৮১টিই বন্ধ রয়েছে। এদের মধ্যে সিলেট সদর উপজেলার ৩টি, বিশ্বনাথে ১টি, বালাগঞ্জে ৫৬টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ৩২টি, গোলাপগঞ্জে ২৭টি, বিয়ানীবাজারে ৩২টি, জকিগঞ্জে ২৭টি, কানাইঘাটে ১টি, জৈন্তাপুরে ৩টি, কোম্পানীগঞ্জে ১০টি, দক্ষিণ সুরমায় ২৪টি ও ওসমানী নগরে ৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এদের মধ্যে বন্যাকবলিত বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৫৩টি ও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ১১২টি।

 

 

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত এরশাদ বলেন, চলতি মাসের ৩ তারিখ থেকে বিদ্যালয় চালু হয়েছে। এর আগে ঈদের বন্ধ ছিল। বন্যার কারণে কিছুটা সমস্যা হবে। তারপরেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আগে ৩৯৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ থাকলেও এখন সেটি কমে ২৮১ তে চলে এসেছে।

 

 

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, সিলেট জেলায় স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার সংখ্যা ৬৭৩। বন্যায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে ৭৩টি প্রতিষ্ঠানের। এরমধ্যে জকিগঞ্জে ৫, বালাগঞ্জে ১৪, ফেঞ্চুগঞ্জে ৫, গোলাপগঞ্জে ১৩, বিয়ানীবাজারে ১১, বিশ্বনাথে ২, ওসমানী নগরে ২১ ও দক্ষিণ সুরমায় ২টি প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

 

 

বর্তমানে ৪১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে ২ হাজার ৫৮৯ জন আশ্রিত রয়েছেন।

 

 

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, বন্যার কারণে জেলা ৭৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যালয় রয়েছে ওসমানী নগর, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জে। কুশিয়ারায় বন্যার পানি কমছে না। আমরা আশাবাদী বন্যার পানি দ্রুত কমে গেলে এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হবে।

 

 

সিলেটে প্রথম দফা বন্যা শুরু হয় গত ২৯ মে। ভারী বৃষ্টি ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় সিলেটের ছয়টি উপজেলা। ৮ জুনের পরে এই বন্যার পানি কিছু কমে আসে। পরবর্তীতে গত ৬ জুন আবারও বন্যা শুরু হয়। এতে সিলেট নগরসহ জেলার ১৩টি উপজেলাতেই বন্যা দেখা দেয়।

পানিবন্দি হয়ে পড়েন প্রায় সাড়ে ১০ লাখ মানুষ। ২৫ জুন দ্বিতীয় দফার বন্যার পানি কমা শুরু হয়। ১ জুলাই থেকে আবার অতিবৃষ্টি ও ঢলের কারণে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়।

 

 

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সিলেটে এখনো দুটি নদীর পানি তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি ধীর গতিতে কমছে। সিলেটের সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্টে এখনো বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিলেটের কুশিয়ারা নদী আমলশীদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং কুশিয়ারা নদী ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

 

সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সিলেটে এখনো পানিবন্দি রয়েছে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ১৩৩ জন মানুষ। ১ হাজার ৭৬ গ্রাম এখনো বন্যায় প্লাবিত। আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে ৯ হাজার ১৪৪ জন মানুষ।

 

 

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, সিলেটে অব্যাহত ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার অভ্যন্তরীণ নদনদীগুলোর পানি তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুর্যোগ পরিস্থিতিতে উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জেলা ও উপজেলার প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে রেসকিউ বোট ও স্পিডবোড প্রেরণের জন্য পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।

 

 

সিলেট আবহওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসেন বলেন, যেহেতু বর্ষাকাল বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। তবে আবহাওয়া অপরিবর্তিত আছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments