Friday, November 8, 2024
Homeসিলেট বিভাগসুনামগঞ্জহাওরাঞ্চলের এক নিভৃতচারী বাউল নেসারুদ্দিন

হাওরাঞ্চলের এক নিভৃতচারী বাউল নেসারুদ্দিন

বিশেষ প্রতিনিধি,

 

মাত্র নয় বছর বয়সে পারিবারিকভাবে পিতার হাত ধরেই সংগীতে হাতেখড়ি। ইংরেজ আমলে তার পিতা হোসেন আলী হাওরাঞ্চলের একজন নামকরা বাউল শিল্পী ছিলেন। বলতে গেলে পিতার হাত ধরে সংগীতের ভুবনে প্রবেশ করে সুদীর্ঘ ৭০ বছর ধরে বাউল গান চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। স্বভাবগতভাবে একজন প্রচারবিমুখ মানুষ।

 

 

এর মধ্যে তিনি অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুর করেছেন। বর্তমানে তার গানগুলো শিষ্যরা বিভিন্ন স্থানে বাউল গানের আসরে গাইছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে তিনি টগবগে যুবক, সেসময় ১১ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর সাব সেক্টর মহিষখলা সীমান্ত এলাকায় দেশাত্মবোধক গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন।

বলছিলাম সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চল মধ্যনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের সোমেশ্বরী নদীর পাড় ঘেঁষা মাছিমপুর গ্রামের নিভৃতচারী মানুষ বাউল মো. নেসারুদ্দিনের (৮৫) কথা।

 

 

নেসারুদ্দিন ১৯৩৮ সালের ৫ জুলাই বাউল হোসেন আলী ও ছালেমা খাতুনের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তিনি পাশের কান্দাপাড়া গ্রামের খালেক মুহুরীর মেয়ে শামীমা নুরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর স্ত্রীও একজন সংগীতশিল্পী।

 

দাম্পত্য জীবনে তিনি দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জনক। ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরা যার যার অবস্থানে সংসারের জীবিকা জোগাতে ব্যস্ত। কয়েক বছর আগেও হাতে বেহালা নিয়ে ছুটে যেতেন বাউল গানের আসরে। গান গেয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে।

গানের সুর ও বেহালা বাদ্যযন্ত্রটি দিয়ে বাউল সুরের বৈচিত্র্য ফুটিয়ে সবাইকে অন্যরকম বাউলগান, পালাগান, জারিগান, দেশাত্মবোধক গান, শরিয়ত-মারিফত, দেহতত্ত্ব, নিগূঢ়তত্ব, নবীজির জীবনি, ভজন সংগীত গেয়ে বিনোদন দিয়ে বেড়াতেন। বর্তমানে বয়সের ভারে আগের মতো আর বায়না করে গান গাইতে যেতে পারেন না। তবুও থেমে নেই তাঁর সংগীত সাধনা।বাড়িতে বসেই নিয়মিত চলে তার গান বাজনা।

বাউল নেসারুদ্দিন বলেন, তাঁর বাবা একজন বাউল শিল্পী হওয়ার সুবাধে ছোটবেলা থেকেই তিনি পারিবারিকভাবেই সংগীতের সাথে জড়িয়ে পড়েন। বাবার কাছে বাউল গানের দীক্ষা লাভ করেন। তাঁর বাবাই তার সংগীতের গুরু। শিষ্য হিসাবে বাবা হোসেন আলীর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাউল গান, শরিয়ত, মারিফত, পালাগান, জারিগান আয়ত্ত করেন। সেই থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বাউল গানের আসরে এসব গান গেয়েছেন।তবে তিনি স্বরচিত গানের পাশাপাশি গীতিকার জালাল উদ্দীন খাঁর গান বেশি গান।

 

তিনি আরও বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন। বর্তমানে বয়সের ভারে দুরে গিয়ে আসরে গান গাইতে পারেন না। সারাদিন তিনি বাড়িতে অবস্থান করেন। অবসর সময়ে সুযোগ পেলেই বেহালা হাতে শুরু হয় তাঁর সংগীত সাধনা।

 

উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রবীর বিজয় তালুকদার বলেন, নেসারুদ্দিন একজন নিভৃতচারী বাউল শিল্পী। একসময় তিনি সে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে গান করেছেন। সে একজন জরপ্রিয় বাউল সাধক। তাঁর অনেক শিষ্য রয়েছে। পারবারিকভাবে অসচ্ছল হলেও সংগীত সাধনাকে তিনি ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তিনি একজন মার্জিত ভদ্র ও প্রতিভাধর মানুষ। তার সংগীত জীবনের সফলতা ও সমৃদ্ধি কামনা করছি।

 

গাঙুর প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী অসীম সরকার বলেন, বাউল নেসারুদ্দিন ও তাঁর স্বরচিত গান হাওরাঞ্চলের সম্পদ। তার রচিত গানগুলো গুলো প্রকাশ করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেবে গাঙুর প্রকাশন।

 

ফোকলোরে বাংলা একাডেমি পদকপ্রাপ্ত গবেষক ও প্রাবন্ধিক সুমনকুমার দাশ বলেন, গ্রামবাংলার বাউল শিল্পীরা মাটির মানুষ। তাঁরা সুরে তালে খোঁজে জীবনের মানে। নেসারুদ্দিন একজন প্রতিভাধর বাউল শিল্পী। আমাদের সমাজ ও সরকারের উচিৎ এসব শিল্পীদের মূল্যায়ন করা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments