বিশেষ প্রতিনিধি,
হবিগঞ্জের খোয়াই, কুশিয়ারা ও কালনী-কুশিয়ারাসহ সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সদর উপজেলার জালালাবাদ গ্রামে খোয়াই নদীর তীররক্ষা বাঁধ ভেঙেছে।
কুশিয়ারা নদীর তীররক্ষা বাঁধ উপচে নবীগঞ্জ উপজেলার ১০-১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। টানা বর্ষণে হবিগঞ্জ শহরের বেশ কিছু এলাকা ডুবে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, সার্কিট হাউজ, অনন্তপুর, মাহমুদাবাদ, শ্যামলী, চৌধুরী বাজারসহ অনেক এলাকার লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করছেন জেলাবাসী।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, বৃষ্টির পাশাপাশি ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে খোয়াই, কুশিয়ারা ও কালনী-কুশিয়ারা, সুতাং, করাঙ্গী নদীসহ হাওরে পানি বাড়ছে।
তিনি বলেন, বুধবার সকাল ৯টায় খোয়াই নদীর পানি চুনারুঘাটের বাল্লা সীমান্তে বিপৎসীমার ১৩১ সেন্টিমিটার, শায়েস্তাগঞ্জে ২১ সেন্টিমিটার এবং হবিগঞ্জ শহরের মাছুলিয়া পয়েন্টে ৭৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদী শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার এবং মার্কুলী পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কালনী কুশিয়ারা নদী আজমিরীগঞ্জে ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মঙ্গলবার জেলায় ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে জানিয়ে শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, “বুধবারও প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। ভারত থেকেও পানি আসছে বিপুল গতিতে। নদীর তীররক্ষা বাঁধে ভাঙন রোধে ৪ হাজার জিও ব্যাগ ও ১২ হাজার সিনথেটিক ব্যাগ মজুত করা হয়েছে। তবে, দুপুর ১টার দিকে খোয়াই নদীর বাল্লা পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করেছে।”
তিনি বলেন, “শহরের গরুর বাজারের পরের অংশটিকে আমরা বলি ফসলরক্ষা বাঁধ। যদি বর্ষা মৌসুমে এসব বাঁধ না ভাঙে, শহররক্ষা বাঁধের দুর্বল অংশ ভেঙে পানি শহরে প্রবেশ করতে পারে। তাই শহরকে রক্ষার স্বার্থেই আসলে এসব অংশের ভাঙন দিয়ে পানি ছাড়তে হয়।
“আর তাছাড়া এখন আসলে হাওরে পানিও প্রয়োজন। নদীর পানি ভাটিতে হাওরে প্রবেশ করবে এটিই স্বাভাবিক। এসব ভাঙন আবার ফসল রক্ষার জন্য বর্ষার পর সংস্কার করা হবে। এটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”
এদিকে, নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক এলাকায় কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কুশিয়ারা ডাইক উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে আহমদপুর, দূর্গাপুর, কুমার কাদা, পাহারপুর গ্রাম। লোকজন বালি ভর্তি বস্তা ফেলে পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক জিলুফা সুলতানা বলেন, “সম্ভাব্য বন্যা মোকাবেলায় ১৭১ টন চাল, ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও ৭৮ বাণ্ডিল টিন মজুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও ৪২০ মেট্রিক টন চাল জেলার ৯টি উপজেলায় পাঠানো হয়েছে।”
জেলায় এ পর্যন্ত ৮৮টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে; প্রয়োজনে আরও আশ্রয় কেন্দ্র বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।