নিজস্ব প্রতিবেদক,
ভারি বৃষ্টির কারণে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি ফের অবনতি দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রোববার রাত থেকে শুরু হওয়া ভারি বৃষ্টিপাতে সিলেট নগরীর ২৮টি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়ে লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
সোমবার সিলেট সিটি করপোরেশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে।
এর আগে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে গত ২৭ মে সোমবার থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হয়। একইসঙ্গে উজান থেকে নেমে আসে পাহাড়ি ঢল। ফলে সিলেট জেলার ১৩টির মধ্যে আটটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। প্লাবিত হয় সুরমা নদী তীরবর্তী সিলেট নগরীর নিম্নাঞ্চলও।
গত দুদিন ধরে সিলেটে ভারি বৃষ্টি না হওয়া এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পরিমাণ কম হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির খবর পাওয়া যাচ্ছিল।
তবে রোববার রাত থেকে ভারি বৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতি ফের অবনতির দিকে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান।
নগরীর প্লাবিত এলাকাগুলোর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে জানিয়ে সিটি করপোরেশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “রোববার রাত থেকে সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত ও সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়ে ১০ দশমিক ৯৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো।
সোমবার সকাল থেকে স্থানীয় কাউন্সিলরদের মাধ্যমে বন্যায় আক্রান্তদের মধ্যে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি সিটি করপোরেশনের।
এদিকে, বন্যা পরিস্থিতি ও আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. মখলিছুর রহমান কামারন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমদ চৌধুরী, কাউন্সিলর ফজলে রাব্বি চৌধুরী মাসুম, হমায়ুন কবির সুহিন, জয়নাল আবেদীনসহ সিসিকের কর্মকর্তরা।
সোমবার দুপুর ২টার দিকে নগরীর মিরাবাজার, তেররতন, উপশহর ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন তারা।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের তালিকা করে দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়েছে।
জরুরি সেবায় কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগের ফোন নম্বর (০১৯৫৮-২৮৪৮০০) ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, “রোববার দিবাগত মধ্যরাত থেকে টানা বর্ষণে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নতুন করে আরও কয়েকটি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে।
নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে একটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সকাল থেকে নগরীর প্লাবিত এলাকাগুলোতে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করা হয়েছে। আজ রাতে প্লাবিত এলাকায় রান্না করা খাবার দেওয়া হবে। নগরীর সব ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলরদের সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে নগর ভবন।”
তিনি জানান, সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে নগরীর ছড়া-খাল পানিতে ভরে গিয়ে নিম্নাঞ্চলের ওয়ার্ডগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ব্যক্তিগত সফরে ইংল্যান্ডে আছেন।
সাজলু লস্কর জানান, মেয়রের নির্দেশে বন্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
পানিবন্দিদের ত্রাণ সহায়তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে সিটি করপোরেশন কতৃর্পক্ষ।
১৫ নম্বর ওয়ার্ডে কিশোরী মোহন বালক উচ্চ বিদ্যালয়, রামকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়, বসন্ত মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, মওদুদ আহমের বাসায় আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে।
১৩ নম্বর ওয়ার্ডে মির্জাজাঙ্গাল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে তেররতন স্কুল, ওমর শাহ স্কুল, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ঘাসিটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউসেফ ঘাসিটুলা স্কুল, জালালাবাদ মডেল স্কুল, মঈনুদ্দিন মহিলা কলেজ, কানিশাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে।
কাউন্সিলরদের দেওয়া তথ্যমতে, নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে সিলেট সিটি করপোরেশন।
জেলা প্রশাসন জানায়, সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৮টি ওয়ার্ডসহ নয়টি উপজেলার ৫৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা বন্যা কবলিত হয়েছে। এছাড়া নয়টি উপজেলার ৭৬১টি গ্রামের ৬ লাখ ১৪ হাজার ২৮২ জন মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছেন।
আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ১ হাজার ৩৮৪ জন অবস্থান করছেন। গত ১২ ঘণ্টায় ২৭৮ জন আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরেছেন।
জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় এরই মধ্যে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত ৪০০ মেট্রিক টন চাল, ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১ হাজার ৪০০ বস্তা শুকনো খাবার, শিশু খাদ্যের জন্য ৯ লাখ টাকা ও গো খাদ্যের জন্য ৯ লাখ টাকা উপজেলা প্রশাসনের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
আর সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য ২৫ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।