Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the td-cloud-library domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/sylheterkagoj/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, পানিবন্দি সাড়ে ৫ লাখ মানুষ - Sylheter Kagoj : সিলেটের কাগজ |
Monday, April 21, 2025
Homeসিলেট বিভাগসিলেটসিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, পানিবন্দি সাড়ে ৫ লাখ মানুষ

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, পানিবন্দি সাড়ে ৫ লাখ মানুষ

বিশেষ প্রতিনিধি,

 

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সিলেটে গত কয়েকদিন থেমে থেমে ভারি বর্ষণ হচ্ছে। বিশেষ করে উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাতের কারণে নদ নদীর পানি বেড়েছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে প্লাবিত হয়েছে সিলেটের সীমান্তবর্তী ৫টি উপজেলা। প্লাবিত উপজেলাগুলো হলো- গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ।

এসব উপজেলার ৪৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩৩টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে সাড়ে ৫ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য ৪টি উপজেলায় ২১৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলার দুর্গত মানুষের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ২০০ প্যাকেট করে শুকনা খাবার, ১৫ টন করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

 

বন্যার হালনাগাদ তথ্য জানিয়ে কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরীন বলেন, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে একটি ব্যতীত সব ক’টি ইউনিয়ন উজানের ঢলে বন্যা কবলিত হয়েছে। দুর্গত এলাকায় প্রায় ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। দুর্গতদের জন্য ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ৯ শতাধিক লোক আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত শুকনা খাবার তাদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, রাতে দুর্গত এলাকার মানুষকে উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা চেয়েছিলাম। এছাড়া স্থানীয়দের সহযোগিতায় ইঞ্জিন নৌকা যোগে অনেককে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে উজানের ভারি বর্ষণে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৪টির বেশি প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও দরবস্ত ও চিকনাগুল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়ও পানি ঢুকছে।

এসব এলাকার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। এরমধ্যে দুর্গত এলাকার ৭০০ জন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। উপজেলায় মোট ৪৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রয়োজনে সবগুলো স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, গত রাতে পাহাড়ি ঢলে পরিস্থিতি খুবই নাজুক ছিল। অনেক জায়গা থেকে সাহায্যের জন্য ফোন এসেছে। আমরা যেভাবে পানি, স্থানীয়দের নিয়ে মানুষকে উদ্ধারে সহযোগিতা করেছি।

এছাড়া দিনে সেনা বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে গেছেন। গত রাতের তুলনায় এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক রয়েছে। এরপরও তারা যে কোনো সময় প্রয়োজনে সহযোগিতা দেবে বলে জানিয়েছেন।

 

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ১৩টি ইউনিয়নের সব ক’টি প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত এলাকা ৩৪৫ বর্গকিলোমিটার। এসব ইউনিয়নের ৪২ হাজার ৯০০ দুর্গত পরিবারের ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫ জন মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছে। এরই মধ্যে ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

এসব আশ্রয় কেন্দ্রের ২৬টিতে ২ হাজার ৩৫৬ জন আশ্রয় নিয়েছেন। গবাদিপশু ৬৪৫টি আশ্রয়ে আনা হয়েছে। এক হাজার ৬৬০ হেক্টর আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।

এরমধ্যে ভয়াবহ অবস্থা পূর্ব ও পশ্চিম আলীরগাও, ডৌবাড়ি, লেঙ্গুড়া, তোয়াকুল ইউনিয়নের। এরইমধ্যে দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ২০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১৫ টন চাল দেয়া হয়েছে। এছাড়া পর্যটনস্পট এরই মধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আর বারকি নৌকাগুলোকে উদ্ধার কাজের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি বেশি প্লাবিত হয়েছে। এগুলো হলো-ইছাকলস, উত্তর রণিখাই, দক্ষিণ রণিখাই ও তেলিখালের প্রায় ৯০ হাজারের অধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। দুর্গতদের জন্য এরইমধ্যে ৩৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফসানা তাসলিম বলেন, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে পাহাড়ি ঢলে ৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত বারোহাল ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম মিলিয়ে মোট ৫০টি গ্রামের অন্তত অর্ধলক্ষাধিক মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছে।

দুর্গতদের আশ্রয়ে ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এরই মধ্যে ৩০টি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। দুর্গতদের সহায়তায় জেলা প্রশাসন থেকে ২০০ প্যাকেট খাবার ও ১৫ টন ত্রাণ দেয়া হয়েছে। সে সাথে উপজেলায় মজুদ ছিল ৪০ টন, সেগুলো বিতরণ করা হচ্ছে।

 

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট প্রবল বৃষ্টিতে ভারত সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলায় সারি নদী আগেই বিপৎসীমার ওপরে ছিল। সেই সাথে রাতে মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নামা ঢলে দ্রুতই তলিয়ে যেতে থাকে উপজেলাগুলোর বিভিন্ন এলাকা।

 

এদিকে, পাহাড়ি ঢলে সিলেটের নদ নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় সারি নদী একদিনে ২০২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া সুরমা নদী কানাইঘাট উপজেলা পয়েন্টে ১৯৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৬৬ সেন্টিমিটার ওপর, কুশিয়ারা নদী জকিগঞ্জের অমলসীদ পয়েন্টে ২২০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে ৬৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যার ফলে সিলেটের নদ-নদীর পানি দ্রুত বেড়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments