স্পোর্টস ডেস্ক,
প্রথম ম্যাচের হারটাই অনেকের কাছে মেনে নেওয়া ছিল কঠিন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে স্রেফ পাঁচ বছর আগে পা পড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ওই হার এখনও আরও বেশি তেঁতো। কারণ বাংলাদেশ হেরে গেছে সিরিজ। যুক্তরাষ্ট্রকে দেড়শ রানের আগে আটকাতে পারলেও সেটি তাড়া করতে পারেনি বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার প্রিইরে স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয়টিতে বাংলাদেশকে ৬ রানে হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুরুতে ব্যাট করে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪৪ রান করে স্বাগতিকরা। ওই রান তাড়া করতে নেমে ৩ বল আগে ১৩৮ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচের পর দ্বিতীয়টিতেও জিতে সিরিজ নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিতে এই সিরিজটি খেলছে বাংলাদেশ। কিন্তু টানা দুই ম্যাচ হার উল্টো মানসিকভাবে বড় ধাক্কা হতে পারে ক্রিকেটারদের জন্য।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের শুরুতে কিছুটা রয়েসয়ে খেলে যুক্তরাষ্ট্র। প্রথম ৩ ওভারে তারা তোলে ১২ রান। পরের তিন ওভারে ৩০ রান তোলে অবশ্য পুষিয়ে নেয় স্বাগতিকরা। সাকিব আল হাসান পাওয়ার প্লের শেষ ওভার করতে এসে দেন ১৫ রান।
সপ্তম ওভারে এসে অবশ্য বাংলাদেশকে উইকেট এনে দেন রিশাদ হোসেন। চতুর্থ বলে তিনি ফেরান স্টিভেন টেইলরকে। ২৮ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩১ রান করা এই ব্যাটার ক্যাচ দেন বাউন্ডারির কাছে দাঁড়ানো তানজিদ হাসানের হাতে। পরের বলেই আন্দ্রেস গৌসকে স্টাম্পিংয়ের শিকার বানান রিশাদ। টানা দুই বলে উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগান তিনি।
দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল ও অ্যারন জোন্স। দুজন মিলে গড়েন ৫৬ বলে ৬০ রানের জুটি গড়েন তারা। ১৭তম ওভারে এসে তাদের এই জুটি ভাঙেন মোস্তাফিজুর রহমান।
তার করা প্রথম বলেই ৩৪ বলে ৩৫ রান করে সাজঘরে ফেরত যান অ্যারন জোন্স। তার ক্যাচ লং অন থেকে দৌড়ে এসে নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শেষদিকে এসে এদিন আর তেমন রান করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। ১৯তম ওভারে এসে ১৩ রান খরচ করে দুই উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম। শেষ ওভারে ১০ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন। এই ওভারের প্রথম বলেই শূন্য রানে ফেরান আগের ম্যাচে ঝড় তোলা হারম্রিত সিংকে।
রান তাড়ায় নেমে প্রথম ওভারেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। চতুর্থ বলে সাজঘরে ফেরত যান সৌম্য সরকার। নেত্রাভালকারের বলে স্ট্রেইট ড্রাইভ করতে গিয়ে প্রথম বলে কোনো রান করার আগে বোলারের হাতেই ক্যাচ দেন তিনি। লিটন দাসের জায়গায় সুযোগ পাওয়া তানজিদ হাসানও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি।
১ চার ও সমান ছক্কায় ১৫ বলে ১৯ রান করে তিনি ফিরে যান জাশদ্বীপ সিংয়ের বলে বোল্ড হয়ে। পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৪৩ রান করে বাংলাদেশ। তাওহীদ হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে ৩৭ বলে ৪৮ রানের জুটিতে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
বাংলাদেশ অধিনায়ক শুরুতে রান করলেও পরে কিছু ডট বল খেলেন। তার বিদায়ও ছিল হতাশাজনক। হৃদয়ের প্যাডে বল লেগে চলে যায় অফ সাইডে। ততক্ষণে রান নিতে প্রায় মাঝ ক্রিজে চলে যান শান্ত। বল ধরে নন স্ট্রাইক প্রান্তে স্টাম্প ভেঙে দেন কোরি অ্যান্ডারসন। ২ চার ও ১ ছক্কায় ৩৪ বলে ৩৬ রান করে আউট হতে হয় শান্তর।
এরপরই যেন ভাঙন ধরে বাংলাদেশের ইনিংস। শেষ ৮ ওভারে ৫৯ রান দরকার ছিল তাদের। এর মধ্যে অ্যান্ডারসনের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন ২১ বলে ২৫ রান করা হৃদয়। ম্যাচের শেষদিকে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় পুরোপুরি। বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে থাকা ম্যাচ কেড়ে নেন যুক্তরাষ্ট্রের পেসাররা।
শুরুটা হয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দিয়ে। ভ্যান স্কাহালকোয়াকের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৪ বলে ৩ রান করেন রিয়াদ। এরপরও জাকের আলির সঙ্গে ছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু তারা বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। ভ্যানের বলেই তুলে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন জাকের আলি।
পরের ওভারের প্রথম তিন বলের দুটিতেই সাকিব আল হাসান ও তানজিম হাসান সাকিবকে ফিরিয়ে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে নেন আলি খান। বোল্ড হওয়ার আগে ২৩ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৩০ রান করেন সাকিব। ওই ওভারের শেষ বলে রিশাদ চার হাঁকালে শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য ১৫ রান দরকার হয়।
১৯তম ওভারে শরিফুলের উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ নিতে পারে কেবল ৩ রান। ম্যাচ ক্রমেই কঠিন হয়ে আসে। শেষ ওভারে এক উইকেট হাতে নিয়ে প্রয়োজন ১২ রানের। প্রথম বলেই বাই থেকে রান নিয়ে স্ট্রাইকে ফেরেন রিশাদ। পরের বলেই তিনি একটি চার হাঁকিয়ে আশাও জাগিয়ে তোলেন। কিন্তু আলি খানের তৃতীয় বলে উইকেটরক্ষকের কাছে ক্যাচ দেন রিশাদ। ৯ বলে ৫ রান করে আউট হন তিনি, ম্যাচ হারে বাংলাদেশ।