বিশেষ প্রতিনিধি,
সিলেটের ‘বার্নিং ইস্যু’র শেষ দৃশ্যে এসে হাজির হলেন শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এমপি। সঙ্গে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর খুব কাছের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, এডভোকেট রঞ্জিত সরকার এমপি। বুধবার রাতে মূলত তাদের সামনে রেখেই নগরবাসীর সঙ্গে আলোচনায় বসেন মেয়র। এতে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন নাদেলই। তবে, রাতের এ বৈঠককে ঘিরে নগরে আলোচনার ডালপালাও মেলছে।
এতে অংশ নেননি সিলেট নাগরিকবৃন্দের সদস্যরাসহ নগরের পরিচিত সুশীলজনেরাও। বলা হচ্ছে, এতে সাড়া দেননি তারা। এই অবস্থায় নাদেলের আহ্বানে কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছেন মেয়র আনোয়ারও। ট্যাক্স ইস্যুতে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় নগর ভবনে কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের নিয়ে বিশেষ সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়েছে। এই সভায় নগরবাসীর দাবির পক্ষেই সিদ্ধান্ত আসবে বলে ধারণা করছেন সিটি কাউন্সিলররা।
প্রায় এক মাস আগে হঠাৎ করেই সিলেট নগরে ‘বার্নিং ইস্যু’ হয়ে দাঁড়ায় সিটি করপোরেশনের অযৌক্তিক হারে ধার্য করা হোল্ডিং ট্যাক্স’র বিষয়টি। সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর স্থগিত করা হোল্ডিং ট্যাক্সের কার্যক্রম হঠাৎ করে শুরু হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন নগরবাসী। আন্দোলনও দানা বাঁধে সিলেটে।
২৮শে মে পর্যন্ত আপিল আবেদনের শেষ দিন ধার্য্য করেন মেয়র আনোয়ার। কিন্তু নতুন এসেসমেন্ট ও আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক কর নির্ধারণ ছাড়া বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে নারাজ নগরের সুশীল সমাজসহ সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা। এরই মধ্যে স্মারকলিপি দিয়ে তারা মেয়রকে সেটি জানানোর আন্দোলনের হোমওয়ার্ক করছিলেন।
এই অবস্থায় বুধবার সন্ধ্যায় নগরের একটি অভিজাত কমিউনিটি হলে হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে নগরবাসীর সঙ্গে মতবিনিময়ের আয়োজন করেন মেয়র। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৌলভীবাজার-২ আসনের এমপি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব ও সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি এডভোকেট রঞ্জিত সরকার ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি রুমা চক্রবর্তী।
কিন্তু ওই সভার আগেই নগরের সারদা স্মৃতি ভবনে হোল্ডিং ট্যাক্সের বিষয় নিয়ে সভা করেন সিলেট নাগরিকবৃন্দের সদস্যরা। সভায় উপস্থিত থাকা নগরের সুশীল সমাজের বাসিন্দারা মেয়রের আহ্বানে সভায় না যাওয়ার সিদ্ধান্তে একমত হন। আর এই সিদ্ধান্তের কারণে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত মেয়র আহুত সভায় যাননি নাগরিকবৃন্দের সদস্যরা।
এ ছাড়া- জেলা ও নগর আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও ওই সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। তবে সন্ধ্যায় মেয়রের আহ্বানে সভায় স্বল্পসংখ্যক নাগরিকবৃন্দ ও পেশাজীবী নেতারা উপস্থিত হলেও তারা নগরে চলমান হোল্ডিং ট্যাক্সের কার্যক্রম বাতিল করে পুনরায় এসেসমেন্ট করার দাবি জোড়ালোভাবে উপস্থাপন করেন।
পাশাপাশি সভার প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী এমপিও অবস্থান নেন নগরবাসীর পক্ষে। বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদ খুব আন্তরিকতার সঙ্গে নাগরিকদের সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। কর পরিশোধ করা নাগরিকদের দায়িত্ব। নিয়মিত কর পরিশোধ করলে সিটি করপোরেশন অনেকদূর এগিয়ে যাবে। তবে নাগরিকদের মতামতকে মূল্যায়ন করে সিসিক কর্তৃপক্ষকে যৌক্তিক ও প্রাসঙ্গিক এবং সহনীয় মাত্রায় কর ধার্য্য করার আহ্বান জানান তিনি।
নাদেল বলেন, অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে হকারমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন নগর করতে পেরেছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জান চৌধুরী।
ঠিক একইভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে চলমান ইস্যুটি দ্রুততার সঙ্গে সমাধান করতে পারবেন তিনি। জবাবে মেয়র আনোয়ার বলেন, আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে কাউন্সিলরদের সঙ্গে সাধারণ সভা করে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে। সিলেটের নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদ কাজ করবে।
আমরা এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো না যেটি নাগরিকদের জন্য কষ্টকর হয়। আমরা নাগরিকদের মতামতকে মূল্যায়ন করে সহনীয় মাত্রায় কর নির্ধারণ করবো। এদিকে- গতকাল সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ শাখা থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে- শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় সিলেট সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এরপর রাত ৮টায় এ নিয়ে জেলা পরিষদে প্রেস ব্রিফিং করবেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। গতকাল বিকালে নগরের কয়েকজন সিনিয়র কাউন্সিলর মানবজমিনকে জানিয়েছেন, হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে অনড় অবস্থান থেকে সরে এসেছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
এ কারণেই সাধারণ সভার আহ্বান করা হয়েছে। হোল্ডিং ট্যাক্সের পুনরায় এসেসমেন্টের পাশাপাশি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আলোকে সিলেটে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা হতে পারে। এটি করা হলে সিলেটে চলমান বার্নিং ইস্যুর পরিসমাপ্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা। প্রবাসীর মাইক কেড়ে নিলেন কাউন্সিলর: মতবিনিময় সভা শুরু হওয়ার পর দর্শক সারিতে দাঁড়িয়ে ট্যাক্সের বিষয়ে বক্তব্য রাখছিলেন সাবেক তুখোড় ছাত্রনেতা ও বর্তমান আমেরিকা প্রবাসী আমিনুল ইসলাম দীনেশ।
এমন সময় কাউন্সিলরদের আসন ছেড়ে তার হাত থেকে জোরপূর্বক মাইক কেড়ে নেন কাউন্সিলর ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। এ নিয়ে হট্টগোল শুরু হয়। একপর্যায়ে প্রবাসী দীনেশের পক্ষে অবস্থান নেন সুধীজনেরা। পরে অবশ্য মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও উপস্থিত সিনিয়র কাউন্সিলররা এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। পরে মেয়র স্টেজে নিয়ে সাবেক ছাত্রনেতা দীনেশকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেন। তবে মতবিনিময় সভায় প্রবাসী দীনেশের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের ভিডিও চিত্রটি ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সিলেটে এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে।