বিশেষ প্রতিনিধি,
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের জলসুখা ইউনিয়নের মাধবপাশা গ্রামের মীরআলীবাগের বাসিন্দা হাসেনা বানু (১০২)। স্বামী জাফর উল্যা মারা গেছেন প্রায় বছর পনেরো আগে। দুই ছেলে আর চার মেয়ে নিয়ে অভারের সংসার চলত কোনোরকমে। চার মেয়ের বিয়ের পর দুই ছেলে নিজেদের পরিবার নিয়ে আলাদা বসবাস শুরু করেন। তখন থেকেই হাসেনা বানুর ঠাঁই হয় ছোট ছেলে দিনমজুর আব্দুল মজিদের সঙ্গে।
অভাবের সংসারে ছোট্ট একটি ঘরে পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে এখন হাসেনা বানুর বসবাস। আব্দুল মজিদের স্ত্রী রুনু বেগমও জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। হাসেনা বানুর বয়স শতবর্ষ পেরোলেও এখন পর্যন্ত তার কপালে জোটেনি সরকারি কোনো ভাতা।
ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও চেয়ারম্যান বলছেন, এই বিষয়টি সম্পর্কে উনারা অবগত নন। হাসেনা বানুর পরিবার থেকে উনাদের কাছে এ বিষয়ে কখনো কেউ আসেনি।
উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে বলা হচ্ছে, এসব তালিকা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তৈরি করে সমাজসেবা কার্যালয়ে পাঠানো হয়। শতবর্ষী হয়েও ভাতার আওতায় না পড়াটা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বরতদের গাফিলতি।
সরেজমিনে জলসুখা ইউনিয়নের মাধবপাশা গ্রামের মীর আলীবাগে হাসেনাবানুর বসতঘরে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট একটি টিনের ঘরে চৌকিতে পলিথিনের ওপর তপ্ত গরমেও গায়ে কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে আছেন তিনি। ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইতেই ধীরে ধীরে উঠে বসেন শতবর্ষী হাসেনা বানু। কথা বলতে বলতে জানান নিজের জীবনের সব পাওয়া না পাওয়া আর আক্ষেপের কথা।
তিনি জানান, স্বামী মারা গেছেন প্রায় পনেরো বছর আগে। ছোট ছেলে মজিদ মিয়া দিনমজুরির কাজ করে যা রোজগার করেন তা দিয়েই চলে ছয়জনের সংসার। ছেলে মজিদ মিয়ার স্ত্রী রুনু বেগমেরও জন্ম থেকে বাম হাত প্রতিবন্ধী। মজিদ, তার স্ত্রী ও তাদের তিন কন্যাসন্তন আর হাসেনা বানুসহ ছয় সদস্যের সংসারের চাকা ঘোরে কোনোরকমে। বয়স শতবর্ষ পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো ভাতা পাননি তিনি। পুত্রবধূ রুনু বেগমের ভাগ্যেও জোটেনি প্রতিবন্ধী ভাতা।
এ সময় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাসেনা বানু বলেন, ‘হুনছি এই সরকার কত মানুষরে কততা দিতাছে, কত সাহায্য করতাছে কিন্তু মরার সময় আইয়াও আমি কোনো সাহায্য পাইলাম না।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আব্দুল মুকিত মিয়া জানান, উনাকে চিনি তবে উনি ভাতা পান না এটা জানতাম না। আমার আগে উনার স্বজনই ইউপি সদস্য ছিলেন। আমি আড়াই বছর হলো নির্বাচিত হয়েছি। আমি খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখব কী করা যায়।
জলসুখা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফয়েজ আহমেদ খেলু জানান, আমি বিষয়টি অবগত নই। উনার পরিবার থেকে কেউ কোনোদিন ভাতার বিষয়ে আমার কাছে আসেননি। উনারা যদি আমার কাছে আসেন তবে আমি উনাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা (অ.দা.) সাইফুল ইসলাম বলেন, বয়স্ক, বিধবা কিংবা প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকা মূলত ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, চেয়ারম্যানরা তৈরি করে আমাদের কার্যালয়ে পাঠান। একজন শতবর্ষী বৃদ্ধা কেন ভাতার আওতায় আসেননি এর জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। উনার পরিবার থেকে উনার কাগজপত্রাদি আমাদের কাছে জমা দিলে আমরা উনার জন্য যতটুকু সহায়তা করা যায় তা করব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল ভৌমিক সিলেটের কাগজ কে বলেন, এসব আবেদন মূলত ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, চেয়ারম্যানের মাধ্যমেই করা হয়। উনি এখনো কেন ভাতার আওতায় পড়েননি বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখব এবং উনাকে যতটুকু সহযোগিতা করা সম্ভব তা করা হবে।