ধর্ম ও জীবন ডেস্ক,
বাবারা তাদের সন্তানের জন্য কি না করে! তারা তাদের সব টুকু দিয়ে চেষ্টা করে আমাদেরকে একটা নিরাপদ জীবন দিতে। সন্তানের প্রতি বাবার দায়িত্ব অনেক। তাদের সুষ্ঠুভাবে লালন-পালনের প্রধান দায়িত্ব বাবার ওপরই বর্তায়। সন্তানকে ছোট থেকে বড় করে তোলার সময় তাদের জন্য যে অর্থ খরচ হয়, ইসলাম তা বাবাকেই বহন করতে বলে। তবে কেবল ভরণপোষণের খরচ দিয়েই সন্তান থেকে দায়মুক্তি পাওয়া যায় না; বরং সন্তানের মানসিক বিকাশ, শিক্ষাদীক্ষা ও নীতি-নৈতিকতার যত্ন নেওয়া বাবার প্রধান দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।
তবে অনেক সময় আমাদের বাবারা রোজগার করতে যেয়ে, বা অর্থ লোভে পরে হারাম পথে ইনকাম করা শুরু করেন। তখন প্রশ্ন আসতে পারে, বাবার হারাম বা অবৈধ সম্পদ তার সন্তানদের জন্য কি বৈধ হয়? এ বিষয়ে ইসলাম কী বলে? চলুন জেনে নেই
পিতার সম্পদ যদি মৌলিকভাবে হারাম না হয়, তাহলে তা থেকে মীরাছ গ্রহণে সন্তানদের কোন দোষ নেই। যেমন চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, সূদ, ঘুষ ইত্যাদির মাধ্যমে উপার্জিত সম্পদ। যদি পিতার সম্পত্তিতে এই ধরনের সম্পদ থাকে এবং এর পরিমাণ জানা থাকে তাহলে সম্ভব হলে তা মালিককে ফেরত দিবে। অন্যথায় জনকল্যাণমূলক কাজে ছাদাক্বা হিসেবে দিবে এবং বাকী সম্পত্তি ওয়ারিছরা ভাগ করে নিবে।
আর যদি পিতার সম্পদ হালাল-হারামে মিশ্রিত হয়, তাতেও সন্তানের জন্য মীরাছ গ্রহণে কোন দোষ নেই। কারণ হারাম উপার্জনের জন্য উপার্জনকারী পিতা গুনাহগার হবেন। সন্তান বা ওয়ারিছরা নয় (বাক্বারাহ ২/২৭৫; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৯/৩০৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৫/৪৬-৫০, ২৬/৩৩২; উছায়মীন, তাফসীরুল কুরআন ৩/৩৭৭; আল-লিকাউশ শাহরী ১৬/৪৫)।
অর্থাৎ সন্তান যদি উপার্জনের সক্ষম না হন তবে সে পিতার হারাম বা হালাল ও হারাম মিশ্রিত অর্থ থেকে প্রয়োজনীয় খরচ নিতে পারবেন। তবে যখন উপার্জনে সক্ষম হবেন, তখন শুধুমাত্র বাবার হালাল মাল থেকেই অর্থ গ্রহণ করা যাবে। হারাম মাল থেকে নেয়া যাবে না।
এছাড়াও নিজের উপার্জন থাকলে বাবার হারাম উপার্জনের টাকা গ্রহণ করবে না। বরং হারাম থেকে সরে আসার জন্য বাবাকে ভদ্রতার সঙ্গে বোঝাতে হবে। কেননা আল্লাহ তাআলা মুমিনদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা যারা ঈমান এনেছ, শোনো, আমি তোমাদের যেসব পবিত্র জিনিস রিজিক হিসেবে দিয়েছি তা থেকে খাও। (সুরা বাকারা: ১৭২)।
আর হারাম সম্পদ রেখে বাবার মৃত্যু হলে সেই সম্পদ গ্রহণ করা যাবে না। ফতোয়ার কিতাবে এসেছে, ‘হারাম সম্পদে মিরাস জারি হয় না। সুতরাং তাতে ওয়ারিশদের কোনো প্রাপ্য নেই; তা ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন হবে না। বরং এসব টাকা সদকা করে দিতে হবে।(আলমুহিতুল বুরহানি: ৮/৬৩; আদ্দুররুল মুখতার: ৬/৩৮৬; ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া: ১৮/১৫৭; রদ্দুল মুহতার: ৫/৯৯)।