ধর্ম ও জীবন,
ইয়াছিন আলী খান,
কোরবানি শব্দের অর্থ ত্যাগ আর ঈদ শব্দের অর্থ খুশি। অতএব ঈদুল আযহা অর্থ কোরবানির খুশি। নিজের প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর নামে উৎসর্গ করাই হল কোরবানি। হযরত ইব্রাহীম (আ) আল্লাহর নির্দেশে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু নিজ পুত্র ইসমাইল (আ) কে কোরবানি দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। আল্লাহ পাক এতে সন্তুষ্ট হয়ে ইসমাইলের পরিবর্তে একটি ভেড়া/দুম্বা কোরবানি মঞ্জুর করেন। অর্থাৎ পশু কোরবানি আল্লাহর উদ্দেশ্যে মুসলমানের সর্বোচ্চ ত্যাগকেই মহিমানিত্বত করে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে সুদ বা ঘুষখোরদের টাকায় কী কোরবানি হবে? চলুন জেনে নেই
সুদ-ঘুষের মাধ্যমে কিংবা অন্যায়ভাবে কেউ যদি কোনো টাকা আয় করে সেটা হারাম। সেই হারাম উপর্জন যদি তিনি আল্লাহর পথে খরচ করেন তাহলে আল্লাহ সেটা গ্রহণ করবেন না।
আল্লাহতালা পবিত্র, তিনি পবিত্র জিনিস ছাড়া হারামের কিছু কবুল করবেন না। সুতরাং সুদ বা ঘুষের টাকায় কোরবানি কিংবা জাকাত দেওয়া কোনোটাই কবুল হবে না। আল্লাহর পথে খরচ করতে হলে অবশ্যই হালালভাবে উপার্জন করতে হবে। যদি উপার্জন হালাল হয় তাহলে কবুল হওয়ার বিষয়টি আসবে।
যিলহজ্জ মাসের ১০, ১১, ১২ এই তিনদিন যাদের নিকট নিছাব পরিমাণ অর্থ সম্পদ বা স্বর্ণালঙ্কার থাকবে তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। তবে অবশ্যই উক্ত নেছাব হালাল টাকার হতে হবে।
হারাম পন্থায় উপার্জিত যেমন, সুদ-ঘুষ, দুর্নীতি, কালোবাজারি বা অন্য কোনো হারাম পন্থায় উপার্জিত সম্পদ যদি নেছাব পরিমাণও হয় তবুও তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে না এবং সে টাকা দিয়ে কুরবানী করলেও তার কুরবানী হবে না।
তাই যদি কেউ ৫০,০০০ টাকা দিয়ে একটি পশু কুরবানী দেয়, আর তাতে যদি ১টি টাকাও হারাম থাকে তাহলে পুরো কুরবানীই বাতিল হয়ে যাবে। অনুরূপ ৭ জনে মিলে কুরবানী দিলো তার মধ্যে ১ জনের টাকা যদি হারাম হয় তাহলে ৭ জনের কুরবানীই বাতিল হয়ে যাবে।
তবে ইসলামি শরিয়তে হারাম উপার্জনের কোরবানি শুদ্ধ না হলেও সেই গোশত কেউ খেতে দিলে প্রয়োজন ও পরিস্থিতির কারণে তা গ্রহণ করতে নিষেধ নেই। এমনকি অমুসলিমের দেওয়া হাদিয়া গ্রহণের পক্ষেও দলিল রয়েছে। হাদিসে আমরা দেখতে পাই যে, রাসুলুল্লাহ (স.) ইহুদির বাড়িতে দাওয়াত খেয়েছেন এবং তাদের দেওয়া হাদিয়া গ্রহণ করেছেন। (বুখারি: ২৬১৫-১৮, আবুদাউদ, মেশকাত: ৫৯৩১)
সেই হিসেবে ঘুষখোর ও সুদখোরের দেওয়া গোশত গ্রহণ করাও নাজায়েজ নয়। তবে সাধারণভাবে উচিত হলো- কৌশলে ফিরিয়ে দেওয়া। তাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় তা করা। এতে সে হালাল খাবারের প্রতি উদ্বুদ্ধ হতে পারে। মূলত এটি এ কারণে করা যে, আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে কেবল হালাল খাবার গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। (সুরা বাকারা: ১৭২)
এছাড়াও আমাদের সমাজে বিত্তবৈভবের মালিকগণ, একাধিক পশু কোরবানি দেয়ার একটি জনপ্রিয় রীতি চালু করেছেন। কিন্তু ধর্মীয় বিধান অনুসারে একাধিক পশু কোরবানি দেওয়া নিষ্প্রয়োজন। অধিক অর্থের মালিক হলে অধিক সংখ্যক পশু কোরবানি করতে হবে, এমন লোক দেখানো নির্দেশনা ইসলামে নেই।
বিত্তবানদের প্রতি অধিক দান-খয়রাত করার নির্দেশনা ইসলামে আছে। কিন্তু যত বেশি সম্পদশালীই হোক, মুসলমানের প্রতি একাধিক পশু কোরবানি দিতে হবে বলে এমন কোন ধর্মীয় নির্দেশনা নেই। তাই সুদ বা ঘুষখোরদের টাকায় বা লোক দেখানোর জন্য কোরবানি না করে সকলের দায়িত্ব ও কতর্ব্য হবে, হালালভাবে উপার্জিত টাকা দিয়ে কুরবানী করা।