বিশেষ প্রতিনিধি:
সিলেটি নাটকের জনপ্রিয় মুখ সিলেটের কটাই মিয়া। নাটকের চরিত্রে নানা রকমফের অভিনয়। হাসি-ঠাট্টায় সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরেন কটাই মিয়া। শুধু সিলেটে নয়, বহির্বিশ্বেও সিলেটি ভাষাভাষি মানুষের কাছে রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি।
সেই কটাই মিয়া এবার নেমেছেন ভোটের মাঠে। হয়েছেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। কটাই মিয়া বলে পরিচিতি পেলেও তার আসল নাম সাহেদ মোশারফ। এ নামেই ভোটের মাঠে নেমেছেন তিনি। ভোট সামনেই। প্রথম ধাপে হচ্ছে উপজেলা নির্বাচন।
এই মুহূর্তে শুধু কটাই মিয়া একা ভোটের মাঠে নামেননি, সিলেটের পরিচিত তার সহ-শিল্পীরাও নেমেছে প্রচারণায়। যেদিকেই যাচ্ছেন তাদের সঙ্গে এসে যুক্ত হচ্ছে তরুণ ও যুবকরা। প্রচারণার চেয়ে সেল্ফি তোলা, নাটকের নানা ডায়ালগ বলা; এসবে জমিয়ে তুলেছেন নির্বাচন।
প্রার্থী হিসেবে দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে কটাই মিয়ার ভোট প্রচারণা। ভোট প্রচারণায় নানা কৌশলীও তিনি। সর্বশেষ গতকাল তার একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেটি হচ্ছে- ‘ফরমালিন মুক্ত কটাই মিয়া।’
নিজেই বলেছেন সেই উক্তি। সাহেদ মোশারফ নিজের কটাই মিয়া পরিচয় তুলে ধরে বলেন- ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন স্বতন্ত্র নির্বাচন করো। স্বতন্ত্র নির্বাচনে একমাত্র খাঁটি ফরমালিন ছাড়া স্বতন্ত্র হলাম আমি। জীবনে কোনো দল করছি না। যারা নির্বাচন করছেন তারা আওয়ামী লীগ করছেন। এখন বলছেন স্বতন্ত্র। কিন্তু ফরমালিন ছাড়া স্বতন্ত্র আপনাদেরই কটাই মিয়া।’ সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সিলাম ইউনিয়নের সরকার চক গ্রামে বাড়ি কটাই মিয়ার। ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ার বদৌলতে আজ ব্যাপক পরিচিতি তার।
সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় নাটকে ‘কটাই মিয়া; ট্যাগ নিয়ে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। সহকর্মীরা জানিয়েছেন- কটাই মিয়া (সাহেদ মোশারফ) নির্বাচন করবে এটা অনেক আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর থেকে মাঠেও সক্রিয় ছিলেন। সব বয়সী ভোটারের কাছে তেমন জনপ্রিয় না হলেও গ্রামের তরুণ ও যুবকদের কাছে তিনি বেশ জনপ্রিয়।
এ কারণে নির্বাচন প্রচারণার প্রথমদিন থেকে দক্ষিণ সুরমার ভোটের মাঠে কটাই মিয়ার আকর্ষণ বেশি। যেদিকে যাচ্ছেন তরুণ ভোটারের সাড়া পাচ্ছেন। তার সঙ্গে এ উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন আরও চার প্রার্থী।
তারা ভোটের মাঠে সাড়া ফেলেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক বদরুল ইসলাম, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহমদ ও আওয়ামী লীগ নেতা ময়নুল ইসলাম।
ভোটের মাঠে সাড়া কেমন- এমন প্রশ্ন করা হলে গতকাল ভোট প্রচারণায় থাকা কটাই মিয়া (সাহেদ মোশারফ) সিলেটের কাগজ কে জানিয়েছেন- ‘ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। যেদিকেই যাচ্ছি মানুষ এগিয়ে আসছে। ভোট দেবে বলে বলছে।’
ভোটের মাঠে টাকা কোনো প্রভাব বিস্তার করবে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- ‘টেখা খাইয়া এসেও সিল মারবে কটাই মিয়াকে। এ নিয়ে আমি চিন্তা করছি না। ভোটের পরিবেশ ভালো আছে। শেষদিন পর্যন্ত ভালো থাকলে ফলাফল আসবে।’
এদিকে- ভোটের মাঠে প্রার্থী কটাই মিয়ার (সাহেদ মোশারফ) পক্ষে এসে নেমেছেন তার সহ-শিল্পীরাও। তারা সিলেটে পরিচিত। নাটকের দেয়া নাম তাদের নিজের নামকেও মুছে দিতে চলেছে। কটাই মিয়া জানালেন- শুধু আমি নই; মনাই, মতই, মন্তাজ, বুরু মিয়া, তেরা মিয়া এসে ভোট প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। ভোটের মাঠে তাদের পেয়ে ভোটাররাও খুশি।
এ ছাড়া ভোট প্রচারণায় এসে অংশ নিয়েছেন সিলেটের আঞ্চলিক বাউল শিল্পী বিরহী কালা মিয়া, সিরাজ উদ্দিন, সূর্যলাল সহ আরও অনেকে। তাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও ভোটের প্রচারণায় রয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে- ভোটের মাঠে নেমে ভোটারের নীরবতা লক্ষ্য করেছেন কটাই মিয়া নিজেও। ভোট নিয়ে অনাগ্রহতা রয়েছে ভোটারের।
এ কারণে ভার্চ্যুয়াল বক্তব্যে তিনি ভোটারদের নীরব না থেকে সরব হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন- ‘কেউ নির্বাচনে আসছেন, কেউ আসছেন না। এভাবে যদি মুখ বন্ধ করে বসে থাকেন তাহলে কেউ পাবলিক সার্ভিস পাবেন না। যারা জনপ্রতিনিধি হয়েছেন, তারা কেউ খবর নিচ্ছেন না। ভোট নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে গেছেন।
আর এলাকার কোনো খবর নেই। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো। যার কারণে আমি দেখলাম; আমার একটা জনপ্রিয়তা আছে। মানুষের দরোজায় দরোজায় গেলে মানুষ আমাকে ভালোবাসে বলে আমাকে ভোট দেবে। মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য আমি সাহেদ মোশারফ কটাই মিয়া নির্বাচনে এসেছি। এটা স্থানীয় নির্বাচন।