লাইফস্টাইল প্রতিবেদক :
আধুনিক যুগে চুল রঙ বা কালার করা বড় একটা ফ্যাশন। এই ফ্যাশন নিয়েও চলছে নানা ফিউশন। তাই সৌন্দর্য পিপাসু নারীদের কাছে চুলের রঙ ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে অনেকে আবার পাকা সাদা চুল ঢাকতেও চুলে রঙ লাগান। কিন্তু আমাদের কিছু ভুলের জন্য চুলের রঙ বেশিদিন স্থায়ী হয় না। তাছাড়া এই গরমে চুল অনেক রুক্ষও হয়ে যায়। এক্ষেত্রে কিছু বিষয় মেনে চললে বাড়িতেই রঙ করা চুলের যত্ন নেওয়া সম্ভব। এই গরমে চুলের রঙ ঠিক রাখা নিয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বিউটিশিয়ান কানিজ ফাতেমা সুমাইয়া।
রূপ বিশেষজ্ঞরা বলেন, হেয়ার কালারে রয়েছে ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া, যা এক ধরনের কেমিক্যাল ব্লিচিং এজেন্ট এবং এটি চুলকে কালার করার সাথে সাথে রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ করে তোলে। এতে করে চুল পরতে থাকে। তাই রঙ করা চুলের জন্য অবশ্যই বিশেষ যত্ন নেয়া চাই।
চুল রঙ করার সময়ে উপযুক্ত ডেভেলপার ব্যবহার করুন : ডেভেলপার হল এক ধরনের ক্রিম জাতীয় সৌন্দর্য উপাদান। এতে থাকে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড।এটি চুলে রঙ ধরে রাখতে সাহায্য করে। চুল রঙ করার সময় আপনাকে অবশ্যই ২০ বা ৩০ ভলিউম ডেভেলপার ব্যবহার করতে হবে। এতে চুলের ক্ষতি কম হবে।
চুল ময়েশ্চারাইজড রাখুন :
চুল কালার করানোর আগে থেকেই চুল যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যকর এবং ময়েশ্চারাইজড রাখার চেষ্টা করুন। চুলে রঙ দেওয়ার কমপক্ষে ৩-৪ সপ্তাহ আগে থেকে চুলে কোন কেমিকেল ট্রিটমেন্ট করাবেন না। রঙ করার দুইদিন পরে শ্যাম্পু করুন। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে – চুলে কালার করার সঙ্গে সঙ্গে শ্যাম্পু করবেন না। যদি দুইদিন পরে শ্যাম্পু করেন তাহলে দেখবেন সুন্দর রং বসে গেছে আর তাড়াতাড়ি উঠে যাবে না। আর এটা করতে পারলে চুলে ঘন ঘন রঙ লাগাতে হবে না। দুইদিন শ্যাম্পু না করলে যে সাধারণ তেল মাথার তালুতে তৈরি হবে তা চুলকে স্বাভাবিক সুরক্ষা দেবে। রঙ করার জন্য চুল শুষ্ক, রুক্ষ হয়ে যাওয়ার সমস্যা কমবে।
ডিপ কন্ডিশন :
চুল শক্ত করতে এবং ভলিউম বাড়াতে কালার করানোর আগে নিয়মিত ডিপ কন্ডিশন করুন। আপনি বাড়িতেই ডিম, কলা এবং টক দই সমান পরিমাণে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই হেয়ার প্যাকটি চুলের গোঁড়ায় এবং সারা চুলে ভালো মতো লাগিয়ে এক ঘণ্টা রাখুন।
কালার প্রটেক্টিং শ্যাম্পু ব্যবহার করুন :
রঙ করা চুলের জন্য স্পেশালি কালার প্রটেক্টিং শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার বাজারে পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে সেগুলো ব্যবহার করুন। এসব শ্যাম্পু চুলের রঙ ঠিক রাখতে সাহায্য কর তেমনি চুলের ময়েশ্চারাইজার বজায় রাখে।
হট অয়েল ট্রিটমেন্ট :
কালার করা চুলের যত্নে সপ্তাহে অন্তত একবার হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করুন। এক্ষেত্রে চুল ডিপ কন্ডিশন করলে বেশি ফল পাওয়া যাবে। পরিমাণ মত অলিভ অয়েল, আমনড অয়েল এবং নারিকেল তেল একসাথে মিশিয়ে হালকা গরম করে নিন। এরপর সেটা চুলের গোঁড়ায় ভালো মতো ম্যাসাজ করুন। এটি চুলের নিষ্প্রাণ ভাব দূর করে সিল্কি ও সুন্দর করে তুলবে।
হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করবেন না :
চুলে রঙ করার পর থেকে যতটা সম্ভব হেয়ার ড্রায়ার, কার্লার বা চুল আয়রন করা থেকে বিরত থাকুন। এসব জিনিস চুলকে ভেতর থেকে ড্যামেজ করে এবং ধীরে ধীরে চুল রুক্ষ ও মলিন করে দেয়। এছাড়াও চুল পড়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে এসব হেয়ার স্টাইলার ব্যবহার করা।
লিভ ইন কন্ডিশনার ব্যবহার :
চুল নরম ও উজ্জ্বল রাখতে লিভ ইন কন্ডিশনার ব্যবহার করা অতি উত্তম। এই কন্ডিশনার চুল থেকে ধুয়ে ফেলতে হয় না এবং এটি চুল নরম ও শক্ত করতে সাহায্য করে। চুলে শ্যাম্পু করার পর ভেজা চুলে বা হালকা ভেজা চুলে লিভ ইন কন্ডিশনার অ্যাপ্লাই করুন। এটি সরাসরি স্ক্যাল্পে না দিয়ে স্ক্যাল্পের ১-২ ইঞ্চি নিচ থেকে ব্যবহার করা ভালো। এটি কেনার আগে কন্ডিশনারের উপাদান গুলোতে একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নেবেন। দেখবেন তাতে সিলিকন, সালফেট বা সালফার আছে কিনা। কারণ এই উপাদান গুলো চুলের জন্য বেশ ক্ষতিকর। তাই এই উপাদান পরিহার করুন।
চুলে হেয়ার মাস্ক লাগান :
চুলের এবং এর রঙের যত্নে ১৫ দিন পর পর ঘরোয়া উপায়ে বাড়িতে স্পা করুন। এতে করে আপনার চুল ঝলমলে ও স্বাস্থ্যকর থাকবে। কালার করা চুলের সৌন্দর্য ও নমনীয়তা বজায় রাখতে সপ্তাহে অন্তত দু’বার এই হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন। এতে চুল প্রয়োজনীয় পরিমাণ ময়েশ্চার পাবে এবং চুল ফাটা বা রুক্ষতা দূর হয়ে চুল সুন্দর থাকবে।