বিশেষ প্রতিনিধি,
৮২ বছর ধরে হবিগঞ্জের হাওড়ে পড়ে আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বিধ্বস্ত একটি যুদ্ধবিমান। মাটির ওপরে কিছু অংশ থাকলেও এলাকাবাসীর দাবি মাটির নিচে আছে ওই যুদ্ধবিমানের বাকি অংশ।
বুধবার (২৭ মার্চ) সরেজমিনে নবীগঞ্জের শ্রীমতপুর এলাকার ওই হাওড়ে গিয়ে দেখা যায়, ধানক্ষেতে অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে ঐতিহাসিক ওই বিমানের ধ্বংসাবশেষ। প্রথমে কচুরিপানায় আবৃত থাকলেও এগুলো সরাতেই বিমানটির অংশ চোখে পড়ে। বিমানটির ওপরের অংশ দেখলে বুঝা যায় মাটির নিচে এর বৃহৎ অংশ রয়েছে। এ সময় বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কয়েকজন দর্শনার্থীও আসেন বিমানটি দেখতে।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৪২ সালের দিকে আশ্বিন মাসের এক সকালে একটি বিমান কালিয়ারভাঙ্গা ও শ্রীমতপুর গ্রামের ওপর দিয়ে বেশ কয়েকবার ঘুরতে থাকে। এর এক পর্যায়ে বিকট শব্দে হাওড়ের ওপর বিমানটি ভূপাতিত হয়। শব্দ শুনে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে গেলে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন অবস্থায় কিছু দেখতে পান না তারা। পরে ধোঁয়া মুক্ত হওয়ার ৬ দিন পরও ওই যুদ্ধ বিমানে আগুন জ্বলতে থাকে।
পরে বিমানের জিনিসপত্র আনতে অনেকে নৌকায় সেখানে যান। সে সময় হঠাৎ বিমানের ভিতরে থাকা একটি মিসাইল বিস্ফোরণ হলে স্থানীয় শ্রীমতপুর গ্রামের সাজিদ মিয়া ও খালেক মিয়া ঘটনাস্থলেই মারা যান। এরপর থেকে ওই বিমানের কাছে কেউ ভয়ে যাননি।
স্থানীয়রা জানান, মাঝে মধ্যে লোকজন আসেন এটি দেখতে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার লোকজনও এসেছেন অনেকবার। কিন্তু এটি উত্তোলন বা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এলাকার ৮০ বছরের বৃদ্ধ কৃষক আমজাদ উল্লাহ জানান, এ বিমানটি যখন ভূপাতিত হয় তখন এলাকায় চরম ভীতি ও আতঙ্ক শুরু হয়েছিল। বিশেষ করে বিস্ফোরণে কয়েকজন মারা যাওয়ার পর অনেক বছর এর পাশ দিয়ে যেতেও মানুষ ভয় পেতেন। এখনও এ জমির কাছে গেলেই পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে যায়।
তিনি বলেন, এটিকে আর কোন জীবনে ওঠানো হবে, আমার জানা নেই।
কালিয়ারভাঙ্গা গ্রামের প্রবীন বাসিন্দা নারায়ণ দাশ জানান, সে সময় সরকারি একটি বাহিনী ১০০টির মতো বোমা দিয়ে বিমানটি ধ্বংস করে। স্থানীয় লোকজন কিছু কিছু অংশ নিয়ে গেলেও এর অনেকটাই মাটির নিচে আছে।
এ দিকে এ বিমানটি উদ্ধার করে সংরক্ষণ ও এর ইতিহাস তুলে ধরার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।