স্টাফ রিপোর্টার:
স্কুলছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করায় সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় পাঁচ তরুণকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৫০ বার কান ধরিয়ে ওঠবস করানো হয়েছে।
রোববার (১৭ মার্চ) উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের আব্দুর রশিদ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সালিশ বৈঠকে এই শাস্তি ও জরিমানা করা হয়।
জানা গেছে, সুখাইড় গ্রামের সামনে দিয়ে কয়েকজন ছাত্রী আব্দুর রশিদ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে। গত রোববার তাদের অভিভাবকরা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানান, ওইদিন বিকেলে সুখাইড় গ্রামের কয়েকজন তরুণ ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে। অভিযুক্তরা ছাত্রীদের পিছু নিলে স্থানীয়রা তাদের আটকে রাখে।
পরে অভিভাবকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিকেলে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দেড় শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠক করা হয়। এতে প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলাম, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এরশাদ মিয়া, দীপক রায় ও নুরু মিয়াসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় শাস্তি হিসেবে অভিযুক্তদের ৫০ বার কান ধরিয়ে ওঠবস করানো হয় এবং প্রত্যেককে ১২ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। ওই দিন অভিযুক্তরা মোট চার হাজার টাকা পরিশোধ করেন এবং বাকি টাকা ঈদের পর পরিশোধের শর্তে ছাড়া পায়।
অভিযুক্ত এক তরুণের বড় ভাই বলেন, বিচারপ্রার্থীরা কান ধরিয়ে ওঠবস করানোয় সন্তুষ্ট ছিলেন। তারা টাকা চাননি। তারপরও জরিমানা করা হয়েছে। সবাই মিলে সুদে চার হাজার টাকা সংগ্রহ করে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এরশাদ মিয়ার হাতে দিয়েছি। বাকি টাকা ঈদের পরে দিতে হবে। আমরা গরিব মানুষ, এত টাকা কীভাবে দেব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এরশাদ মিয়া বলেন, অভিযুক্তরা ছাত্রীদের দেখে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে পিছু নিয়েছিল। এতে তারা ভয় পেয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে অভিযুক্তরা এমন না করে, সেজন্য জরিমানা করা হয়েছে।
জরিমানার টাকা কী হবে জানতে চাইলে এরশাদ মিয়া বলেন, জরিমানার টাকা বিদ্যালয় ফান্ডে রাখা হবে। পরে সেই বক্তব্য বদলে ফেলেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলাম বলেন, আমি বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু উভয়পক্ষ স্থানীয়ভাবে সালিশ করে মীমাংসার উদ্যোগ নেয়। আমি সালিশে সভাপতি ছিলাম। এতে উপস্থিত সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জরিমানা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ধর্মপাশা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামসুদ্দোহা বলেন, ভুক্তভোগী, তাদের পরিবার বা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেউ বিষয়টি জানায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিষয়টি স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি না করে আইনি প্রক্রিয়ায় করা যেত বলে জানান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুল কবির।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।