ইসলামী জীবন:
ইয়াছিন আলী খান,
সাহাবি আরবি শব্দ। এর অর্থ সঙ্গী, সাথি ও সহচর। যারা ইমান অবস্থায় রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাক্ষাৎ লাভ করেছেন এবং ইমান অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁদের ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় সাহাবি বলা হয়। মহানবী (সা.)-এর সাহাবির সংখ্যা লক্ষাধিক।
নবী-রসুলগণের পরই তাঁদের মর্যাদা। রসুলুল্লাহ (সা.) তাঁদের সুউচ্চ মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। তাঁদের মর্যাদা আল্লাহ বর্ণনা করেছেন মহাগ্রন্থ আল কোরআনে। রসুলুল্লাহ (সা.) কতিপয় সাহাবিকে তাঁদের জীবদ্দশায় বেহেশতের সুসংবাদ প্রদান করেছেন।
মহান প্রভু আল কোরআনে তাঁদের প্রতি সন্তুষ্টির ঘোষণা প্রদান করেছেন। জনৈক ব্যক্তিকে সাহাবির মর্যাদা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরাম সবাই জান্নাতবাসী হবেন, যদিও তাঁদের কারও কারও থেকে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি প্রকাশ পেয়েছিল, কিন্তু তাঁরা কেউই আপন ত্রুটি-বিচ্যুতির ওপর অটল ছিলেন না। বরং অনেক সাহাবির তওবা করার পদ্ধতি উম্মতে মুহাম্মদির জন্য কেয়ামত পর্যন্ত অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁদের প্রশংসায় আল কোরআনে অনেক আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে।
মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম এবং যারা নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের অনুসরণ করে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন জান্নাত, যার নিম্ন দেশে নদী প্রবাহিত, যেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে।
এটা মহাসফলতা (সুরা তাওবা-১০০)। অপর আয়াতে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘যদি তারা ইমান আনে যেরূপ তোমরা ইমান এনেছ, তবে তারা হেদায়েত প্রাপ্ত হবে। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তারা হঠকারিতায় রয়েছে’ (সুরা বাকারা-১৩৭)।
এই আয়াতে সাহাবাগণের মতো ইমান গ্রহণ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। যারা তাদের অনুসরণ করে তাদের ন্যায় ইমান গ্রহণ করবে তারা হেদায়েত প্রাপ্ত হবে। আর যারা এর বিপরীত করবে তাদের আচরণ সাহাবাদের সঙ্গে হঠকারিতায় গণ্য হবে।
এ আয়াতের আলোকের প্রমাণ হয় সাহাবাগণ আমাদের ইমান ও আমলের ক্ষেত্রে অনুসরণীয়। তারা আমাদের জন্য আদর্শ। তাদের বিরুদ্ধাবরণ সাহাবাদের সঙ্গে হঠকারিতা ও কোরআনের বিরোধিতার নামান্তর। অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘যখন তাদের বলা হয়, মানুষেরা যেভাবে ইমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ইমান আনো। তখন তারা বলে, আমরাও কি বোকাদের মতো ইমান আনব? মনে রেখো প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা। কিন্তু তা তারা বোঝে না’ (সুরা বাকারা-১৩)।
এ আয়াতে মুনাফিকদের একটি আচরণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের যখন বলা হতো মানুষদের মতো তথা সাহাবাদের মতো তোমরা ইমান গ্রহণ কর, তখন তারা জবাবে বলত, আমরা কি বোকাদের মতো ইমান গ্রহণ করব। মুনাফিকরা সাহাবাগণকে বোকা বলে উড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা করেছিল।
অথচ আল্লাহ তাদের সাহাবাদের অনুসরণ করে তাদের মতো ইমান গ্রহণের নির্দেশ করেছিলেন। সাহাবাদের অনুসরণ করাই ছিল তাদের জন্য মঙ্গলজনক। যুগে যুগে যারাই সাহাবাদের পথ থেকে দূরে সরে গেছে তারাই পথভ্রষ্ট হয়েছে।
যারা সাহাবাদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করেছে, তাদের অনুসৃত পথ অবলম্বন করেছে, তারাই মূলত কোরআন সুন্নাহর আলোকে জীবন গড়ার সৌভাগ্য লাভ করেছে।
সাহাবাগণের মর্যাদার ক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট যে, হাদিস তিন প্রকার, সাহাবাগণের উক্তি, কর্ম ও মৌন সম্মতিকে হাদিসে মওকুফ বলা হয়। যা শর্তসাপেক্ষে মুসলিম জাতির জন্য গ্রহণযোগ্য, আমল যোগ্য।
অতএব এতেও প্রমাণ হয়, সাহাবাগণের কথা, কাজ ও সমর্থন মুসলিম জাতির জন্য হাদিস শাস্ত্রের শর্তানুসারে অনুসরণীয় ও আমল যোগ্য হতে পারে।