রাজধানীর বেইলি রোডের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের খন্দকার পাড়ায় একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারে চলছে শোকের মাতম। শোকাহত পরিবারটিকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না স্বজনসহ স্থানীয়রা।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর মগবাজার নিজ বাসা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কাচ্চি ভাই নামক রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেতে যান ইতালি প্রবাসী সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউসার। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী স্বপ্না আক্তার, দুই মেয়ে সৈয়দা কাশফিয়া ও সৈয়দা নূর এবং একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ। এ সময় আকস্মিক আগুনে পুড়ে সবাই মারা যান। মুহূর্তেই পরিবারটি শেষ হয়ে যায়।
নিহতদের স্বজনরা জানান, শাহবাজপুর গ্রামের মৃত সৈয়দ আবুল কাশেমের ছেলে সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউসার (৪২) দীর্ঘদিন ইতালিতে ব্যবসা করতেন। মাসখানেক আগে ইতালি থেকে দেশে এসেছিলেন তিনি। ইতালিতে স্থায়ীভাবে (গ্রিন কার্ড) থাকার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। সম্প্রতি স্ত্রী ও তিন সন্তানদের সেখানে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ভিসাও হয়ে গিয়েছিল সবার। কিন্তু ইতালি আর যাওয়া হলো না তাদের। বেইলি রোডের আগুনে পুড়ে স্ত্রী-সন্তানসহ মারা গেছেন মোবারক।
এদিকে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শাহবাজপুর গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারেও চলছে শোকের মাতম। আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীসহ সবাই নিহতদের বাড়ি এসে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
নিহত কাউছারে মা হেলেনা বেগম জানান, সবাইকে নিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলেন মোবারক। সঙ্গে ছিল স্ত্রী স্বপ্না, দুই মেয়ে সৈয়দা কাশফি ও সৈয়দা নূর এবং একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ। আগুনে পুড়ে সবাই মারা গেছেন। এমন খবর পাওয়ার পর কান্নায় মূর্ছা যাচ্ছেন তার মাসহ পরিবারের সদস্যরা। তারা এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার দাবী করেন।
নিহত গৃহবধূ সপ্নার বড়বোন পলি আক্তার বলেন, ‘ছোট বোন তার স্বামী-সন্তানসহ পরিবারের সবাই আগুনে পুরে মারা গেছেন। মৃত্যুর আগে তারা ফোনে আহাজারি করছিলেন বাঁচার জন্য। আমরা তাদের বাঁচাতে পারিনি।’
নিহতদের বাড়িতে থাকা শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রাজীব আহমেদ রাজ্জি জানান, একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাদের দাফনের প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত মরদেহগুলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুর নিজ গ্রামে এসে পৌঁছায়নি। তবে বাদ আসর জানাজা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হবে। নিহত সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউসার পরিবারের তিন ভাই এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয়।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বেইলি রোডে একটি বহুতল ভবনে আগুন লাগে। এতে এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।