বিশেষ প্রতিবেদন:
‘এক নজর, তোমার একটি শব্দ এই পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞানের চেয়েও বেশি আনন্দ দেয়। ’ বিশ্ববরেণ্য জার্মান কবি ফন গ্যাটে তাঁর কবিতার এই পঙক্তিতে কী নিপুণভাবে ছড়িয়ে দিয়েছেন, ভালোবাসার ঐশ্বর্য, কী অপূর্ব! প্রিয়তমার একপলক চাহনি আর তার উচ্চারিত প্রতিটি শব্দবর্ণকে তুলনা করেছেন পুরো পৃথিবীর অমূল্য জ্ঞান-ভান্ডারের সঙ্গে। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি। ভালোবাসার দিন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস- ওয়ার্ল্ড ভ্যালেন্টাইনস ডে।
ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিনও আজ। এ দিনে বাঙালি মনে মূর্ছনা ছড়ায় ভালোবাসা। বাসন্তী মোহে মুগ্ধতা ছড়ায় প্রাণের আকুতি ভরা ফুলেল শুভেচ্ছা। যুগল প্রাণে জাগরিত হয় তারুণ্যের উচ্ছ্বাস।
কেবল তরুণ-তরুণী নয়, সব বয়সের মানুষের প্রাণেই ভালোবাসার সঞ্চারিত হয় এ বিশেষ দিনটিতে।
মনীষীদের মতে, ভালোবাসা বা ‘লাভ’ হচ্ছে বিশুদ্ধ ও সংবেদনশীল চিন্তার দৃশ্যমান ভিত্তি। ভালোবাসা মানে যতখানি ‘শেয়ারিং’ তার চেয়েও অধিক ‘কেয়ারিং’। ভালোবাসা মানে সীমাহীন আকাশ।
অসীমেই তার গভীরতা। ভালোবাসা শুধু যোগাযোগ নয়, পরস্পরের প্রতি মনোযোগও। ভালোবাসা মানে ভালোবাসার মানুষকে তার মতো করে পুরোপুরি গ্রহণ করা। পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুষঙ্গ হলেও এই দিনটি বাঙালি মনের ভালোবাসাকেও একটা নতুন মাত্রা দেয়। ভালোবাসার জয়গানে মুখর হয়ে ওঠে প্রেমিক-প্রেমিকা, মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, বন্ধুর প্রাণ।
উপহার দেওয়া-নেওয়া তো আছেই। রয়েছে রাজধানীসহ সারা দেশে বিভিন্ন আয়োজন। দিনটি বর্ণিল হয়ে ওঠে নারী-পুরুষের লাল, নীল, সাদা, বেগুনি, গোলাপি বিভিন্ন রঙের পরিহিত পোশাকে।
দিবসটি উপলক্ষে রয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কনসার্ট। ফেব্রুয়ারির এ সময়ে পাখিরা তাদের জুটি খুঁজে বাসা বাঁধে। কচি কিশলয় জেগে ওঠে নিরাভরণ বৃক্ষে। ফুল সৌরভ ছড়িয়ে সৌন্দর্যবিভায় বিকশিত হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, দুটি প্রাচীন রোমান প্রথা থেকে ভালোবাসা দিবসের সূত্রপাত।
খ্রিস্টান পাদ্রি ও চিকিৎসক ফাদার সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারে দিনটির নাম ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ করা হয়। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি খ্রিস্টানবিরোধী রোমান সম্রাট গথিকাস আহত সেনাদের চিকিৎসার অপরাধে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। মৃত্যুর আগে ফাদার ভ্যালেন্টাইন তার আদরের একমাত্র মেয়েকে একটি ছোট্ট চিঠি লেখেন, যেখানে তিনি নাম সই করেছিলেন ‘ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন’।
সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের মেয়ে এবং তার প্রেমিক মিলে পরের বছর থেকে বাবার মৃত্যুর দিনটিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে পালন করা শুরু করেন। যুদ্ধে আহত মানুষকে সেবার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ভালোবেসে দিনটি বিশেষভাবে পালন করার রীতি ক্রমে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
ভ্যালেন্টাইনস ডে সার্বজনীন হয়ে ওঠে আরও পরে প্রায় ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্ব পাওয়ার পেছনে রয়েছে আরও একটি কারণ। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুর আগে প্রতি বছর রোমানরা ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করত ‘জুনো’ উৎসব। রোমান পুরাণে বর্ণিত বিয়ে ও সন্তানের দেবী জুনোর নামানুসারে এর নামকরণ।
এ দিন অবিবাহিত তরুণরা কাগজে নাম লিখে লটারির মাধ্যমে তার নাচের সঙ্গীকে বেছে নিত। ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে রোমানরা যখন খ্রিস্টীয় ধর্ম গ্রহণ করে তখন ‘জুনো’ উৎসব আর সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগের দিনটিকে একই সূত্রে গেঁথে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ হিসেবে উদযাপন শুরু হয়। কালক্রমে এটি সমগ্র ইউরোপ এবং ইউরোপ থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।