বিশেষ প্রতিবেদন:
বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণে তালাক বেশি ঢাকায়,
দাম্পত্যজীবনের অক্ষমতার কারণে তালাকে প্রথম বরিশাল
বিয়ের হারও বেড়েছে।
দেশে বিয়ের হার বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাকও। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক এবং বনিবনার অভাব বিচ্ছেদের মূল কারণ বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণে সবচেয়ে বেশি বিচ্ছেদ হয়েছে ঢাকা বিভাগে, কম ময়মনসিংহ বিভাগে। বনিবনার অভাবে বিবাহবিচ্ছেদ বেশি বরিশালে, কম সিলেটে। ভরণপোষণ দিতে সমর্থহীনততার কারণে রাজশাহীতে বিবাহবিচ্ছেদ বেশি, এটি কম চট্টগ্রামে।
গত ৩১ জানুয়ারি প্রকাশিত “বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২২” নামের এক জরিপের প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। দেশের তিন লাখের বেশি পরিবারের মধ্যে এ জরিপটি পরিচালিত হয়।
জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে সাধারণ বিয়ের হার ছিল ২৫%-এর কিছু বেশি। ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রতি ১,০০০ মানুষের মধ্যে ওই বছর যত জনের বিয়ে হয়েছে, সেটা সাধারণ বিয়ের হার। এই হার ২০২১ সালে ছিল ১৮.৫%।
জরিপে নারী ও পুরুষরা প্রথম বিয়ে কত বছর বয়সে করেছেন, তার একটি গড় হিসেব তুলে ধরা হয়। বিবিএস বলছে, পুরুষের বিয়ের গড় বয়স ছিল ২৪ বছর। নারীর ক্ষেত্রে তা ১৮.৪ বছর। শহরে পুরুষ ও নারীদের প্রথম বিয়ের গড় বয়স একটু বেশি; গ্রামে কম।
২০২২ সালে সাধারণ বিয়ের হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে কোভিড মহামারিকালীন অর্থনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তার যোগসূত্র দেখছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ২০২০ ও ২১ সালের ধাক্কা অনেকটা কাটিয়ে ওঠার পর ২০২২ সালে বিয়ের হার বেড়েছে। গ্রামে এ হার বেশি।
বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক হওয়া মানুষের নিবিড় সাক্ষাৎকার নিয়ে জরিপটি করা হয়েছে। ফলে এই জরিপের মাধ্যমেই বিচ্ছেদের আসল কারণ উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে বিবিএস।
বিচ্ছেদের ধরন
তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদের দুই ধরনের হার বিবিএস জরিপে পাওয়া গেছে। একটি হলো স্থূল, যেটি মোট জনসংখ্যার অনুপাতে বিবাহবিচ্ছেদের হার। অন্যটি সাধারণ বিবাহবিচ্ছেদের হার, এতে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের হিসেব করা হয়।
বিবিএস বলছে, ২০০৬ থেকে ২০২১ সাল সময়ে স্থূল বিচ্ছেদের হার ০.৬ থেকে ১.১%-এর মধ্যে ওঠানামা করেছে। ২০২২ সালে তা বেড়ে ১.৪%-এ দাঁড়ায়।
নারী ও পুরুষের আলাদাভাবে সাধারণ বিবাহবিচ্ছেদের হিসেব করা হয়েছে। ২০২১ সালে নারীদের সাধারণ বিবাহবিচ্ছেদের হার ছিল ২%-এর কিছুটা কম। সেটা পরের বছর বেড়ে ৩.৬%-এ দাঁড়ায়। একইভাবে পুরুষের ক্ষেত্রে হারটি ২০২১ সালে ছিল ২%-এর সামান্য বেশি। পরের বছর তা বেড়ে হয় ৩.৮%।
কারণ
বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে বড় কারণ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক বা পরকীয়া; জরিপে উত্তরদাতাদের প্রায় ২৩% এই কারণের কথা বলেছেন। আর দাম্পত্যজীবন পালনে অক্ষমতার কারণে ২২% বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে।
ভরণপোষণের ব্যয় বহন করতে অসামর্থ্য অথবা অস্বীকৃতি, পারিবারিক চাপ, শারীরিক নির্যাতন, যৌন অক্ষমতা বা অনীহা ইত্যাদিও রয়েছে বিবাহবিচ্ছেদের কারণের তালিকায়।
পারিবারিক চাপে বিবাহবিচ্ছেদ বেশি ময়মনসিংহে, কম ঢাকায়। নির্যাতনের কারণেও বিবাহবিচ্ছেদ বেশি হয়েছে ময়মনসিংহে, কম রাজশাহীতে। যৌন অক্ষমতা বা অনীহার কারণে রংপুরে বিবাহবিচ্ছেদ বেশি হয়েছে। বরিশালে এক্ষেত্রে হার শূন্য। দীর্ঘদিন বিদেশে থাকায় তালাকের ঘটনা বেশি ঘটছে সিলেটে।