লাইফস্টাইল:
প্রত্যেক নারীই চান পিকচার পারফেক্ট স্কিন এবং ওয়েডিং এটায়ার, অর্থাৎ বিয়ের সাজসজ্জা ও পোশাক – আশাকের সৌন্দর্যে পরিপূর্ণতা। এটা আসে তখনই, যখন নারীদের ত্বক এবং চুল থাকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। তবে এর জন্য কিন্তু তাদের বিশাল একটা সময় দিতে হয়। অবশ্য এই সময়টা শুধু কনেই নয়, এখন কিন্তু বর – কনে উভয়ই স্কিন এবং হেয়ার গ্রুমিং নিয়ে থাকেন। এটাকে বলা হয় ‘প্রি ওয়েডিং গ্রুমিং’! এই বিষয়েই কিছু পরামর্শ দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট ডার্মাটোলজিস্ট ডা: তাওহীদা রহমান ইরিন।
বছরের অন্যান্য সময়ের চাইতে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বিয়ের উৎসব বেশি চলে। তাই এই সময়টাকে আমরা বিয়ের মৌসুম বলে থাকি। বিয়ের দিনটিকে নিয়ে চলে নানা ধরণের প্ল্যান। বর এবং কনের আত্মীয় – স্বজন, বন্ধু – বান্ধব ব্যস্ত থাকেন নানা কাজে। নিমন্ত্রণ পত্র বিলি, বিয়ের ভেন্যু নির্ধারণ, মেকআপ আর্টিস্ট বুকিং, ফটোগ্রাফি, ড্রেস – জুয়েলারি সিলেকশন আরও কত কিছু। আর বিয়ের আয়োজন, প্রস্তুতি পর্ব চলে অনেকদিন ধরে।
পিকচার পারফেক্ট ব্রাইডাল লুক দিতে গিয়ে একজন মেকআপ আর্টিস্ট তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আমার সাথে শেয়ার করেছেন। সারাদিন ধরে শপিং, পানি না খাওয়া, অতিরিক্ত চা – কফি, কোমল পানীয় পান, নতুন পরিবারে নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ানো এসব কারণে বিয়ের কনে থাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। আর এর প্রভাব পরে ত্বকে ও চুলে। এতে করে দেখা দেয় ডার্ক সার্কেল, ডিহাইড্রেটেড স্কিন। ব্রণ, ত্বকের কালো দাগ, চুলপড়া আরও অনেক কিছু। ফলে এসব সমস্যা আড়াল করতে মেকআপ আর্টিস্টকে ব্যবহার করতে হয় ভারি ফাউন্ডেশন, কনসিলার।
এসব কিছুর মাধ্যমে কনে একটা সুন্দর অবয়ব পায় ঠিকই, কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে মেক আপতুলে ফেলার পরে আয়নায় নিজের চেহারা দেখে আঁতকে ওঠে নববধু। তাই বিয়ের আগে ও পরে প্রত্যেক বর ও কনের মেনে চলা উচিত একটি পারফেক্ট স্কিন ও হেয়ার কেয়ার রুটিন। সহজবোধ্য করার জন্য আমি পুরো রুটিনটি সাতটি ধাপে সাজিয়েছি।
প্রথম ধাপ :
ভালোভাবে পুরো মুখ ও শরীরের ত্বক পরিষ্কার রাখা। মুখ ও শরীরের ত্বক যেহেতু ভিন্ন, তাই ক্লিনজারও হবে ভিন্ন। আর ক্লিনজার বেছে নিতে হবে ত্বকের ধরন অনুযায়ী। সপ্তাহে দু’বার স্ক্রাবার দিয়ে মুখ ও শরীর এক্সফোলিয়েট করতে হবে। একে আমরা ডিপ ক্লিনজিং বলি। দিনশেষে ঘুরেফিরে মুখে জমে থাকা ধুলোবালি ও মেকআপ, রিমুভার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপ :
এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। এই ধাপের কাজ হলো ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা। শুষ্ক, তৈলাক্ত, মিশ্র, নাজুক – আপনার ত্বক যেমনই হোক না কেন, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা জরুরি। সপ্তাহে দু’বার ফেসিয়াল মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এটা আপনার বিশেষ দিনে ত্বকে এনে দেবে বাড়তি উজ্জ্বলতা। রাতে কিন্তু ঘুমানোর সময় লিপ বাম ও আন্ডার আই ক্রিম ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
তৃতীয় ধাপ :
মুখ, গলা ও শরীরের অনাবৃত অংশ যা সুর্যরশ্মির সংস্পর্শে আসে, এই সমস্ত স্থানে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। এটা দুই ঘন্টা পর পর করতে হবে।
চতুর্থ ধাপ :
এই ধাপের প্রধান ও একমাত্র কাজ হলো – পরিমিত বিশ্রাম এবং ঘুম।
পঞ্চম ধাপ :
এই ধাপের প্রধান করণীয় কাজ হলো ব্যায়াম। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট সময় ব্যায়ামের জন্য রাখুন। হাঁটা, ইয়োগা, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ এগুলো বেছে নিতে পারেন। এতে মন ও শরীর ফুরফুরে থাকবে এবং ওজনও থাকবে নিয়ন্ত্রণে।
ষষ্ঠ ধাপ :
এই ধাপে প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভ্যাস। খাদ্য তালিকায় থাকতে হবে প্রচুর পরিমাণে মৌসুমী ফল ও সবজি। প্রচুর পানি পান করুন, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, কমপ্লেক্স কার্ব অর্থাৎ যাকে বলে ব্যালেন্সড ডায়েট। এই ধাপে পরিহার করুন চিনি, কোমল পানীয়, দুধ ও চিনিযুক্ত চা বা কফি।
সপ্তম ধাপ :
একজন ত্বক বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে ত্বকের ধরন অনুযায়ী প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। ত্বকে যদি কোনো সমস্যা বা রোগ থাকে, তাহলে থেকেই ত্বক বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে চিকিৎসা শুরু করে দিন। একদম শেষ মুহুর্তে এসে কোনো চিকিৎসা করবেন না। ত্বককে উজ্জ্বল, মসৃণ ও মেক আপের জন্য প্রস্তুত করতে নানা ধরনের এস্থেটিক রিজেনারেটিভ ট্রিটমেন্ট আছে।
চুলের যত্ন :
বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো এখন বেশ কিছুদিন ধরে হয়, যেমন ব্রাইডাল শাওয়ার, হলুদ সন্ধ্যা, সংগীত, মেহেদি, রিসেপশন, ফিরানি, ওয়ালিমা। এইসব অনুষ্ঠানের কারণে চুলে অনেক ধরনের স্টাইল করা হয়। সেই সঙ্গে চুলের ওপর চলে নানা ধরণের অত্যাচার, যেমন স্প্রে, হিট টুল, স্টাইলিং, কালার, টিজিং, পাফ এবং আরও অনেক কিছু। এই কারণে হেয়ার ডিটক্স ও হেয়ার পিআরপি’র মাধ্যমে এই সকল ড্যামেজকে অনেকখানি নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। আর সাথে সাথে রেগুলার হেয়ার কেয়ার যেমন শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, অয়েল ম্যাসাজসহ হেয়ার কেয়ার রুটিনগুলো অবশ্যই চালিয়ে যেতে হবে।
নববধূকে বলে রাখছি যে, এই হেয়ার এবং স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টগুলো লাগেজে গুছানোর সময় এমন একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখবেন, যেনো নতুন বাসায় গিয়ে সহজেই হাতের নাগালে পান। হঠাৎ করে কোনো নতুন প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন না। কারণ অনেক নববধূকে দেখেছি হঠাৎ করে নতুন পরিবেশে গিয়ে নতুন প্রোডাক্ট ব্যবহারে ত্বকে অ্যালার্জিক র্যাশ, চুলকানো ও নানা ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হয়। আর বিয়ের পরেও এই স্কিন ও হেয়ার কেয়ার রুটিনগুলো মেনে চলার চেষ্টা করবেন। যদিও ব্যস্ততা বিয়ের পর বেড়ে যায় অনেকখানি, কিন্তু পুরো দিনে নিজের জন্য ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় তো দেয়াই যায়।
রিজুভা ওয়েলনেস এ কাপলরাও আসেন, আবার বর ও কনে আলাদা ভাবেও আসেন। সাধারণত তারা প্রশ্ন করে থাকেন যে, কতদিন আগে থেকে গ্রুমিং শুরু করতে হবে। অনেকে এক বছর আগে থেকেও শুরু করে। তবে কমপক্ষে ৩ মাস বা তা সম্ভব না হলে অন্তত ১ মাস আগে থেকে শুরু করা উচিত। হঠাৎ করে ১ সপ্তাহ আগে নতুন করে কোনো কিছু করা উচিত নয়।
রিজুভা ওয়েলনেস এ স্কিন, হেয়ার কেয়ারের পাশাপাশি স্ক্রিনিং টেস্ট করে বের করা হয় তাদের কোনো কিছুতে এলার্জি আছে কি না, প্রোডাক্ট কিম্বা খাবারে। সেই সাথে তাদের মিল (খাবার) প্ল্যানটি কেমন হবে। এক্ষেত্রে পারসোনালাইজ মিল প্ল্যানও করে দেয়া হয়।