Saturday, November 23, 2024
Homeসিলেট বিভাগমৌলভীবাজারকমলগঞ্জে মণিপুরীদের ঐতিহাসিক ‘চহি তারেৎ খুনতাকপা’ দিবস উদযাপন

কমলগঞ্জে মণিপুরীদের ঐতিহাসিক ‘চহি তারেৎ খুনতাকপা’ দিবস উদযাপন

 

মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি:

নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠি মণিপুরীদের আদি বাসস্থান বর্তমান উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুর রাজ্যে। ৩৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাজ্য হিসাবে ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই জনগোষ্ঠি মণিপুরে বংশপরম্পরায় বাস করে আসছিল। ব্রিটিশ ঔপনেবিশক শাসকরা ষড়যন্ত্রমূলক যুদ্ধের মাধ্যমে এই অঞ্চল করায়ত্ত করে নেয়।

১৭০৯-১৭৪৮ পর্যন্ত তদানীন্তন মহারাজ পামেইবা (গরীবনেওয়াজ) স্বাধীন শাসনামল ছিল মণিপুরীদের স্বর্ণযুগ। গৌড়ীয় প্রভাবাধীন ১৮২৬ সাল পর্যন্ত মহারাজা ভাগ্যচন্দ্র ব্যতীত তেমন উল্লেখযোগ্যভাবে রাজ্য শাসন সম্ভব হয়নি। ইতিহাসবিদরা ঐ সময়কার শাসন ব্যবস্থাকে অন্ধকার যুগ বলে গণ্য করেন।

ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয়, ১৭৫৫ সালে মহারাজ ভাগ্যচন্দ্রের শাসনামলে বার্মা-মণিপুর যুদ্ধের সময় মণিপুর রাজ্য উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। তখন রাজা ভাগ্যচন্দ্র পরাজিত হয়ে রাজ্য ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে তদানীন্তন আসাম রাজ্যের সহযোগিতায় রাজা ভাগ্যচন্দ্র মণিপুর পুনরুদ্ধার করেন। তখনকার বার্মা কর্তৃক মণিপুর উচ্ছেদ অভিযন স্বল্প সময় স্থায়ী ছিল। পরবর্তীতে ১৭৫৮ সালে তদানীন্তন বার্মা রাজা অলুংপায়া কর্তৃক পুনরায় মণিপুর রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে নির্বিচারে আক্রমণ শুরু করে। এভাবে বার বার বার্মা রাজার রাজ্য বিস্তারে মণিপুরীদের উচ্ছেদে যুদ্ধ অব্যাহত রাখে।

১৮১৯-১৮২৬ সনের দিকে বার্মার জালিম শাসক দ্বারা ভারতে মনিপুর অধিকৃত হয়। এ সময়ে মনিপুরীদের পুড়িয়ে শ্বাস বন্ধ করে হত্যা, শিশুকে পাথরের উপর ছুড়ে এবং চামড়া ছিঁড়ে লবন মাখিয়ে হত্যা করা হতো। এতে মণিপুর রাজ্যের অধিবাসীরা টিকতে না পেরে বাধ্য হয়ে রাজ্য ছাড়া হন। বার্মা শাসকরা তখন ১৮১৯-১৮২৬ পর্যন্ত সাত বছর ব্যাপী দখল করে রাখে।

মহারাজ গম্ভীর সিংহের নেতৃত্বে বর্মি দখলকাররা বিতাড়িত হওয়ার পর তিনি পুনরায় মণিপুরের রাজ সিংহাসনে আহরণ করেন। ১৯৩৪ সালের ৯ জানুয়ারি পরলোক গমন করেন তিনি। ইতিহাসে এ সাত বছর সময়কালকে মণিপুরীদের জাতীয় ইতিহাসে “চহি তরেৎ খুনতাকপা” অর্থাৎ‘ সাত বছর রাজ্যহীন ও গৃহহীন অধ্যায়’ হিসাবে অত্যন্ত বেদনাবিদূর স্মৃতি বলে সম্প্রদায়ের মানুষদের কাছে পরিচিত। যা পরবর্তীতে মণিপুরী জনগোষ্ঠি ৯ জানুয়ারিকে শোকাবহ দিবস হিসেবে পালন শুরু করে।

দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার চিতলীয়া মণিপুরী গ্রামে অবস্থিত মহারাজ গম্ভীর সিংহ মেমোরিয়াল এন্ড রিসার্চ সেন্টারে মহারাজ গম্ভীর সিংহের বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও তার জীবনী নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মহারাজ গম্ভীর সিংহের বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন অতিথিরা। পরে মধ্যাহ্নভোজ ও মহারাজ গম্ভীর সিংহের ১৯০তম স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মহারাজ গম্ভীর সিংহ মেমোরিয়াল এন্ড রিসার্চ সেন্টারের ম্যানেজমেন্ট কমিটির সহ-সভাপতি সুশীল সিংহের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ওইনাম পামহৈবা সিংহের পরিচালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্সের সভাপতি এল. জয়ন্ত সিংহ।

বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন,  হাওবম চন্দ্র কুমার সিংহ, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অরুণ কুমার সিংহ প্রমুখ।

আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, গম্ভীর সিংহ মেমোরিয়াল এন্ড রিসার্চ সেন্টারের ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য মণিভদ্র সিংহ।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, গম্ভীর সিংহ মেমোরিয়াল এন্ড রিসার্চ সেন্টারের ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য প্রদীপ কুমার সিংহ, গম্ভীর সিংহ মেমোরিয়াল এন্ড রিসার্চ সেন্টারের ম্যানেজমেন্ট কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সমরজিত্ সিংহ, কবি সনাতন হামোম, সমাজকর্মী বঙ্ক বিহারী, মণিপুরী ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি সুশীল সিংহ প্রমুখ।

এছাড়া মহারাজ গম্ভীর সিংহ মেমোরিয়াল এন্ড রিসার্চ সেন্টারেথ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যবৃন্দ সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments