বিশেষ প্রতিনিধি:
আজ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন ঘিরে গত ৭১ দিনে ৩০৬টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছেন আটজন।
এছাড়া ভাঙচুর-হামলাসহ বেশকিছু নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। আরও নাশকতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব দিক মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়ে সাত লাখ সদস্য কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সদস্যের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
৪২ হাজার ১৪৯ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৭ হাজার ৩০০ কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের দিকে বেশি নজর থাকবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের।
নাশকতার পরিকল্পনার তথ্য পেয়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ, র্যাব ও ডিবি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, নির্বাচনি মাঠে রয়েছে ৬৫৩ জন ম্যাজিস্ট্রেট। রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে পরামর্শ করে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে সেনাবাহিনী। এবারের নির্বাচনে পরিস্থিতি অন্যবারের চেয়ে ভিন্ন মনে করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।
র্যাব, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপির সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা ছক সাজানো হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে এক ধরনের নিরাপত্তা এবং বাইরে অন্য ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভোট গ্রহণ ঘিরে নাশকতা ও গোলযোগ হলে কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে, এ নিয়ে মাঠ পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছে সদর দফতর। বাড়ানো হয়েছে টহল।
কেআইপির নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। কেউ যাতে সড়ক অবরোধ করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ‘৯৯৯’-এর কলগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে সব থানায় বার্তা দেওয়া হয়েছে। বিজিবি ও র্যাব কেন্দ্রের আশপাশে টহলে রয়েছে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন বলেছেন, নাশকতার ঘটনা ঘটতে পারে এমন গোয়েন্দা তথ্য ছিল। কিন্তু কোথায় হবে এটা বলা কঠিন। তবে নজরদারি অব্যাহত ছিল বলেই তৎক্ষণাৎ কিছু ধরেছি। তদন্ত চলছে, দেখি কি পাওয়া যায়। ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি তদন্তাধীন।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, স্বাভাবিকভাবেই ভোট যারা বয়কট করেছেন বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের কথা আমরা জানি। শুক্রবার তিনজনকে আটক করেছি। তাদের কাছে পেট্রোল বোমা পাওয়া গেছে ২৮টি, ককটেল পাওয়া গেছে ৩০টি। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, নাশকতার বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা নিরাপত্তা ছক প্রণয়ন করেছি। তিনি বলেন, তিনদিনের ছুটি থাকার কারণে অনেক লোক গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। এ কারণে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের তুলনায় গ্রামে ভোটার উপস্থিতি বেশি হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিএমপির ২১৪৬টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১৬৬৮টি কেন্দ্র অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন ঘিরে ডিএমপির পক্ষ থেকে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই। ভোটাররা নির্বিঘ্নেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
এদিকে নির্বাচন উপলক্ষ্যে অনভিপ্রেত পরিস্থিতি এড়াতে ভোট কেন্দ্র, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং ভবনের নিরাপত্তা জোরদার ও নজরদারি বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, সম্পাদক বা অনুরূপ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষের সঙ্গে সভা করে বা যোগাযোগের মাধ্যমে অথবা দায়িত্ব দিয়ে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও নজরদারি বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার যুগান্তরকে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে সেন্ট্রাল মনিটরিং অ্যান্ড কো-অর্ডিনেটর সেল গঠন করা হয়েছে। সব স্টাফের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রোববার সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ফুলটাইম ইউনিফর্মে থাকবে।
জেলা প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যেক মনিটরিং সেলে ফায়ার সার্ভিসের একজন করে সদস্য দায়িত্ব পালন করবে।
ফায়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৭১ দিনের অগ্নিকাণ্ডে ৩০৪টি যানবাহন ও ২৪টি স্থাপনা পুড়ে গেছে। এসব ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের দুজন সদস্যসহ মোট পাঁচজন নিহত হয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায়, যানবাহনের মধ্যে ১৭৮টি বাস, ৪৯টি ট্রাক, ২৫টি কাভার্ড ভ্যান, ২১টি মোটরসাইকেল, পিকআপ ১০টি, ট্রেন পাঁচটি, সিএনজি ৩টি, প্রাইভেটকার ৩টি, মাইক্রোবাস তিনটি, লেগুনা ৩টি, নছিমন ১টি, ফায়ার সার্ভিসের পানিবাহী গাড়ি একটি, পুলিশের গাড়ি একটি ও একটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। অপরদিকে ২৩টি স্থাপনার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১০টি, বিএনপি অফিস ৫টি, আওয়ামী লীগ অফিস ১টি, পুলিশ বক্স ১টি, কাউন্সিলর অফিস ১টি, বৌদ্ধ মন্দির ১টি, বিদ্যুৎ অফিস ২টি, বাস কাউন্টার ১টি, শোরুম ২টি রয়েছে।
প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা সিটিতে ১৩৭টি, ঢাকা বিভাগে ৫৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৫টি, রাজশাহী বিভাগে ৩৮টি, বরিশাল বিভাগে ৯টি, রংপুর বিভাগে ১০টি, খুলনা বিভাগে ৫টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬টি, সিলেট বিভাগে ৬টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। জেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, গাজীপুরে ৩০টি, চট্টগ্রামে ১৮টি, বগুড়া ১৫টি, নারায়ণগঞ্জ ৭টি, সিরাজগঞ্জ ৬টি, নাটোর ৬টি বরিশাল ৫টি, মানিকগঞ্জ ৪টি, ফরিদপুর ৪টি, লালমনিরহাট ৪টি করে আগুনের সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। উপজেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গাজীপুর সদর উপজেলায় আগুনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি। গাজীপুর সদরে ১৪টি, বগুড়া সদরে ১০টি, কালিয়াকৈর উপজেলায় ৮টি, নারায়ণগঞ্জ সদরে ৫টি, ফেনী সদরে ৫টি করে আগুনের ঘটনা ঘটে।