রাত পোহালেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট। সিলেটের ১৯টি আসনে ১০৫ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তবে তাদের মধ্যে হেভিওয়ে অনেক প্রার্থীদের আসনে অসম প্রতিদ্বন্দ্বি থাকায় একরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই বেরিয়ে আসতে পারেন। এরমধ্যে সিলেট-১ ও ৪ আসন। সুনামগঞ্জ -৩ আসন, মৌলভীবাজার-১, ৩ ও ৪ আসন।
এছাড়া বিভাগের কয়েকটি আসনে ঈগল, ট্রাক ও কেটলী প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এরমধ্যে সিলেটের তিন আসনে স্বতন্ত্র, মৌলভীবাজারে একটি স্বতন্ত্র, হবিগঞ্জের দু’টি ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটের মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকে ড. এ কে আব্দুল মোমেন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি। তার সঙ্গে আরো চার প্রার্থী থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কেউ নেই।
সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের শফিকুর রহমান চৌধুরী নৌকা প্রতীকের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে আরো ছয় প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকে পৌর মেয়র মহিবুর রহমান। এছাড়াও আলোচনায় আছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী সাবেক এমপি ইয়াহইয়া চৌধুরী এবং বর্তমান এমপি মোকাব্বির হোসেন।
সিলেট-৩ আসনে সাতজন প্রার্থী থাকলেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে আছেন ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ও বিএমএ’র মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক দুলাল, নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব এবং লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান।
সিলেট-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে তিনজন প্রার্থী থাকলেও ভোটের মাঠে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে আছেন।
সিলেট-৫ আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে এগিয়ে আছেন আঞ্জুমানে আল ইসলাহ’র সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দিন চৌধুরী, তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দলটির সিলেট মহানগরের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও ট্রাক প্রতীকে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. আহমেদ আল কবীর।
সিলেট-৬ আসনে ছয়জন প্রার্থী থাকলেও তিন প্রার্থী রয়েছেন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে। তারা হলেন-নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী বর্তমান এমপি নুরুল ইসলাম নাহিদ, সোনালী আঁশ প্রতীকে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপার্সন শমসের মবিন চৌধুরী ও ঈগল প্রতীকে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন। এ তিন প্রার্থীকে ঘিরে বিভক্ত নির্বাচনী এলাকা গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারের মানুষ।তবে আসনটিতে সাবেক শিক্ষামন্ত্রীকে এগিয়ে রাখছেন এ আসনের সাধারণ মানুষ।
মৌলভীবাজারের চারটি আসনের তিনটিতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় নৌকার বিজয়কে অনেকটা নিশ্চিত ধরে নিচ্ছেন স্থানীয়রা। এছাড়া একটি আসনে নৌকার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে।
মৌলভীবাজার-১ আসনে বর্তমান এমপি, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন লাঙ্গল প্রতীকে জাপার আহমেদ রিয়াজ। তবে লাঙ্গল প্রতীক থাকলেও প্রার্থী অধিকন্তু দুর্বল এবং আওয়ামী লীগ একাট্টা থাকায় নৌকার বিজয় নিশ্চিত ধরে নিচ্ছেন।
মৌলভীবাজার-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে এগিয়ে রাখছেন এলাকার মানুষ। কুলাউড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে ২ লক্ষাধিক ভোটারের মধ্যে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী ভোটে নৌকার পালে বিজয়রত উড়তে পারে। এছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়াও ওই এলাকার বিখ্যাত আলেম হযরত নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বিশকুটি ছাহেবের নাতি হিসেবে নাদেল আল ইসলাহ’র ভোট ব্যাংক নৌকার বিজয় তরান্বিত হতে পারে। এ আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম শফি আহমদ ছলমান। এছাড়া সাবেক এমপি এম এম শাহীন তৃণমূলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মৌলভীবাজার-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীকে মো. জিল্লুর রহমানের সঙ্গে নামকাওয়াস্তে প্রার্থীরা রয়েছেন। যে কারণে আসনটিতে নৌকার প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত ধরা হচ্ছে। একইভাবে মৌলভীবাজার-৪ আসনেও সাবেক হুইপ আব্দুস শহীদ নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয় অনেকটা নিশ্চিত ধরা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ জেলার ৫টি আসনের তিনটিতে নৌকা এবং দুইটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে, মনে করছেন স্থানীয়রা।
সুনামগঞ্জ-১ আসনে নৌকার সঙ্গে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা ধরা হচ্ছে। এ আসনে নৌকার প্রার্থী সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রনজিত সরকার, কেটলী প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এবং জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. সেলিম আহমদ ঈগল প্রতীকে শক্ত প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। তিনজনই একদলের হওয়াতে আওয়ামী লীগে বিভক্তি রয়েছে। তবে আম জনতার সমর্থন সেলিমের পক্ষে থাকায় তার বিজয়ের সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয়রা।
সুনামগঞ্জ-২ আসনে বর্তমান এমপি সুরঞ্জিত পত্মী জয়া সেন গুপ্তা কাঁচি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তার সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। বিগত দিনে উন্নয়ন বঞ্চিত হওয়ায় আসনটিতে নৌকার প্রার্থীর বিজয়ের সম্ভাবনা এগিয়ে রাখছেন জনতা। এ আসনে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান ঈগল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ভোটের মাঠে তার পরিচিতি নেই।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান এমপি ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এ এম মান্নান ভোটে অপ্রতিদ্বন্দ্বি। এ আসনে আরও চার প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বি জমিয়তে ছেড়ে তৃণমূলের ব্যানারে প্রার্থী হওয়া শাহিনুর পাশা স্থানীয়ভাবে বিতর্কিত অবস্থানের কারণে পিছিয়ে আছেন।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনে আসটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. সাদিকুর রহমানকে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বি বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে পীর ফজলুর রহমান। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগ একাট্টা হওয়ায় তার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, মনে করছেন স্থানীয়রা।
সুনামগঞ্জ-৫ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক আবারো নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন। এ আসনে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি ঈগল প্রতীকে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম আহমদ চৌধুরী। আসনটিতে আরও সাতজন প্রার্থী থাকলেও তারা আলোচনায় নেই। তবে বিগত দিনে নির্বাচনী এলাকা দোয়ারা বাজারে উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগায় নৌকা ডুবার কারণ হতে পারে আসনটিতে।
হবিগঞ্জ চারটি আসনে ২৯ জন প্রার্থী রয়েছেন ভোটের মাঠে। হবিগঞ্জ-১ আসনটি আওয়ামী লীগ জোটের ভাগে জাতীয় পার্টিকে দেয়। এ আসনে জাপার লাঙ্গল প্রতীকে এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু’র প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি ঈগল প্রতীকে সাবেক সংরক্ষিত আসনের এমপি আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া। গত ৫টি বছর তিনি মানুষের কাছাকাছি ছিলেন, যে কারণে ভোটের মাঠে তার আধিপত্যের কাছে জোটের হারতে পারেন।
হবিগঞ্জ-২ আসনে নৌকার প্রার্থী ময়েজ উদ্দিন শরীফ। তার বাবা বঙ্গবন্ধুরি সহচর ও সাবেক একাধিকবারের এমপি ছিলেন। যে কারণে তাকে ঘিরে একাট্টা আওয়ামী লীগ। এ আসনে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি আব্দুল মজিদ খান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটের বাজারে আসনটিতে নৌকাকে এগিয়ে রাখছেন জনতা।
হবিগঞ্জ-৩ আসনে অনেকটা অপ্রতিদ্বন্দ্বি বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগ মনোনীতে নৌকার প্রার্থী আবু জাহিদ। তার বিপক্ষে আরও ৮ প্রার্থীর ভীড়ে লাঙ্গল প্রতীকে জাপার ইঞ্জিনিয়ার এসএম মনিম চৌধুরী প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি। তবে এলাকায় জনপ্রিয় হিসেবে আবু জাহিদকে বেছে নিবেন ভোটাররা, এমনটি জানা গেছে।
হবিগঞ্জ-৪ আসনে ৮ প্রার্থীর মধ্যে নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী খানের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি ঈগল প্রতীকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। আসনটিতে ব্যারিস্টার সুমনের জনপ্রিয়তা রয়েছে।
এ আসনে ভোটের মাঠে চা শ্রমিকরা মূল ফ্যাক্টর। আর চা শ্রমিকদের আন্দোলনে অগ্রভাবে ছিলেন সুমন। যে কারণে তাকে এগিয়ে রাখা হচ্ছে ভোটের মাঠে। কিন্তু নৌকার প্রতিচ্ছবি চা শ্রমিকদের চোখে ভেসে ওঠলে ভেস্তে যেতে পারে সুমনের জনপ্রিয়তা, এমনটি জানান স্থানীয়রা।