বিশেষ প্রতিনিধি:
উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক ভোটে নানা পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। ভোটের দিন সকাল থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন মনিটর করবে ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতিতে নজর রাখার পাশাপাশি দলীয় প্রার্থী এবং দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবেন তারা। দেবেন প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। একই সঙ্গে নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেন ভোটের পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে, সে বিষয়েও কঠোর অবস্থানে দলটি। পাশাপাশি ভোটের দিন বিএনপিসহ বিরোধীদের কর্মকাণ্ডের বিষয়েও কড়া নজর থাকবে তাদের। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, তারা চান অবাধ, সুষ্ঠু, সহিংসতামুক্ত ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। এ লক্ষ্যে দলের সর্বস্তরের নেতাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তারা।
এ বিষয়ে শুক্রবার সংবাদ বিফ্রিংয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ৭ জানুয়ারি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া হবে। সবাই ভোটকেন্দ্রে আসবে, নির্ভয়ে ভোট দেবে। ভোট দিতে কেউ বাধা দিলে তাদের প্রতিহত করা হবে। নির্বাচনের দিন বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হরতাল এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি মরচে ধরা হাতিয়ার। হরতাল ও অবরোধ এখন বিএনপির কর্মসূচিতে আছে বাস্তবে নেই।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া যুগান্তরকে বলেন, ভোটের দিন সব ধরনের ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং সব উসকানি উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গণতন্ত্রের উৎসবে সতর্ক অবস্থানে থাকবে। একই সঙ্গে তারা পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী, বন্ধুসহ ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহিত করবেন। ভোটাররা যেন নিরাপদে ভোট দিতে পারে সে বিষয়ে তাদের সহযোগিতা করবে। ভোটের দিন তেজগাঁওস্থ ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগ নির্বাচন মনিটরিং করবে বলেও জানান দলটির এই নেতা।
ভোটের দিন তেজগাঁওস্থ ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ছাড়াও বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সকাল থেকে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। সারাদিন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নির্বাচন মনিটরিং করবেন এবং সারা দেশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। নির্বাচনি পরিবেশ যেন কেউ বিঘ্নিত করতে না পারে সে বিষয়ে তৃণমূল নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের দেবেন প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। পাশাপাশি ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে গণমাধ্যকেও অবহিত করা হবে।
দলটির দপ্তর সেল থেকে জানানো হয়েছে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের জন্য তেজগাঁওস্থ ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে মিডিয়া সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। শুক্রবার থেকে এটি চালু হয়েছে। নির্বাচনের দিন পর্যন্ত এটা চালু থাকবে। নির্বাচন পর্যন্ত সব ব্রিফিং তেজগাঁওস্থ ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ভবন থেকে করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিএনপি ও তাদের মিত্ররা ভোট বর্জন করেছে। জনগণকে নির্বাচনবিমুখ করতে প্রচারণাও চালাচ্ছে তারা। ফলে ভোটারদের নির্বাচনমুখী করতে শুরু থেকেই নানা পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ভোটের দিন ভোটারদের কেন্দ্রে নিতে নানান চেষ্টা থাকবে ক্ষমতাসীনদের।
অন্যদিকে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরায়নি আওয়ামী লীগ। ফলে নির্বাচনে অনেক আসনেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। বিভিন্ন আসনে দল ও দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। নানা কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আন্তর্জাতিক মহলের নজর রয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল চাইছেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, সহিংসতামুক্ত ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। যেন দেশি-বিদেশি কেউ ভোট নিয়ে সমালোচনা করতে না পারে। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সংযত রাখতে কঠোর অবস্থানে থাকবে ক্ষমতাসীনরা। ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে কেউ ভোটের পরিবেশ নষ্টের অপচেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে দলটি। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ দলের তৃণমূল নেতাদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
ভোটের দিন ঘিরে বিএনপির নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা ক্ষমতাসীনদের। ফলে এদিন বিএনপির হরতাল কর্মসূচিতেও কড়া নজর রাখবে আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভোট উৎসবে অংশগ্রহণের পাশাপাশি নির্বাচনের আগের দিন ও নির্বাচনের দিন ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত তাদের রাজপথে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন ঘিরে বিএনপির নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা সজাগ ও সতর্ক আছি। নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জেতার জন্য কিছুই করতে হবে না। তাহলে কেন শুধু শুধু আমরা বদনামে জড়াব। নির্বাচনের দিন আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব থাকবে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো ও ভোটে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখায়।