রাজধানীর গোলাপবাগে ট্রেনে আগুনের মধ্যে জানলায় শরীরের একাংশ বাইরে থাকা অবস্থায় এক ব্যক্তির পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য ছুঁয়ে গেছে মানুষকে।
সেই ব্যক্তিকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু তার স্ত্রী ও সন্তান পুড়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘বের হয়ে কী হবে?’
শুক্রবার রাতে যশোরের বেনাপোল থেকে ঢাকায় আসা বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি তার গন্তব্যস্থল কমলাপুর পৌঁছার কিলোমিটার দুয়েক আগে থেমে যেতে বাধ্য হয়। ট্রেনটির তিনটি বগি পুড়ে যায়।
বগি তিনটি থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এর মধ্যে তিনজনই একই পরিবারের, যারা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান।
গোপীবাগ এলাকার বাসিন্দা মাসুদ রানা নামক একজন ব্যক্তি জানান তিনি আগুন লাগার পর উদ্ধার কাজেও অংশ নেন।
তিনি বলেন, ‘‘আমার বাসা রেললাইনের পূর্ব পাশে। ঘুমাইতে ছিলাম। ফোন দিয়ে একজন খবর দিছে আগুন লাগছে বেনাপোল এক্সপ্রেসে। খবর শুইন্যা বের হই। তখন দেখি ‘চ’ বগির এক লোক জানালায় আটকে ছিল। আমি তারে ধরে বের করতে চাইছিলাম।’’
মাসুদ বলেন, ‘‘তার (জানলায় থাকা সেই ব্যক্তি) ঘাড়ের উপর জানলা নেমেছিল। জানালা ভেঙে তাকে বের করার চেষ্টা করছিল। তখন ওই ব্যক্তি বললেন, ‘আমার বাচ্চা ও বউ অলরেডি পুইড়া গেছে। আমারও ৯০ পারসেন্ট পুইড়া গেছে। আমি আর বের হয়েই বা কী করব। থাইকাই বা কী লাভ?’’
ততক্ষণে বগিটির বেশিরভাগ অংশই পুড়ে গিয়েছিল। আগুনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছিল উত্তাপ। এক সময় উদ্ধারের চেষ্টায় থাকা মানুষদেরকে সরে আসতে হয় নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে।
মাসুদ রানা তিনি বলেন, ‘‘গরমে ট্রেনের কিছুই ধরা যাচ্ছিল না। তারে টাইনা নামানোর চেষ্টা করছি, বের করতে পারি নাই।’’
জানালায় আটকে থাকা অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করার একাধিক ভিডিও করেছেন পথচারীরা। তাতে দেখা যায়, ট্রেনের বগির নিচের অংশে ভর করে জানলা ধরে পুড়তে থাকা ব্যক্তিকে উদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন অনেকে। কিন্তু তাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।
মাসুদ রানা বলেন, “স্থানীয় মানুষ পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। আগুন এত বড় ছিল যে হাতে পানি দিয়ে তা নেভানো সম্ভব ছিল না।”
পরে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে পানি ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এলেও ততক্ষণে নাম না জানা সেই ব্যক্তি ও তার স্ত্রী-সন্তানের জীবন প্রদীপও নিভে যায়।