লাইফস্টাইল:
শীতকালে কি একটু বেশি ঘুমান? উত্তরে অনেকেই বলবেন, হ্যাঁ। যদিও বিজ্ঞানীরা বলেন, ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে ঘুমের চাহিদা হ্রাস-বৃদ্ধি হওয়ার তেমন কোনো প্রমাণ নেই। মানবদেহে ঘুমের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় চাহিদা সব সময় ধ্রুব (কন্সট্যান্ট) থাকে, পরিবর্তন হয় না। তবে অনেকের জন্য বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে ঘুমানো অন্য সময়ের চেয়ে কিছুটা সহজ হতে পারে।
শীতে সহজেই ঘুম আসে কেন? কেন তা দীর্ঘ হয়?
যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার দুই গবেষকের এক গবেষণা বলছে, শীতে মার্কিনিদের ঘুম একটু বেশি লম্বা হয়। এ সময় তাঁদের ঘুমের দৈর্ঘ্য অন্য যেকোনো রাতের চেয়ে বেড়ে যায়। শীতে ঘুম কিছুটা ‘লম্বা’ হওয়ার এই ঘটনাকে আলো-আঁধারির প্রতি আমাদের শরীরের প্রতিক্রিয়া এবং প্রভাব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়।
মানবদেহে এক জৈবিক ছন্দ (সারকাডিয়ান রিদম) দিনের ২৪ ঘণ্টাজুড়ে কতটুকু আলো আমাদের চোখে প্রবেশ করে, কতটুকু সময় দিনের আলো থাকে না, অন্ধকার থাকে, তা হিসাব করে আমাদের ঘুমের চাহিদা, খাওয়াদাওয়া ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশও পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। বছরের শেষ দিকে উত্তর গোলার্ধে শীতকাল হয়। শীতকালে উত্তর গোলার্ধে দিনের আলো গ্রীষ্মকালের চেয়ে কম সময় ধরে পাওয়া যায়, আলোর তীব্রতাও বেশ কম থাকে।
শীতকালে কি একটু বেশি ঘুমান? উত্তরে অনেকেই বলবেন, হ্যাঁ
সারকাডিয়ান রিদমের ফলে সূর্য ডোবার পরপরই আমাদের শরীরে মেলাটোনিন হরমোন তৈরি হওয়া শুরু হয়ে যায়। এই মেলাটোনিন হরমোন আমাদের ঘুম আনার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। ফলে কারোর কারোর জন্য শীতকালে অল্পতেই ঘুমিয়ে পড়াটা খুব সহজ হয়ে যায়।
শীতের সময়ে র্যাম (র্যাপিড আই মুভমেন্ট) বেশি হয়। র্যাম হলো ঘুমের সবচেয়ে শেষ দিকের সময় যখন চোখ বন্ধ অবস্থায় বেশ নড়াচড়া করে। এটা স্তন্যপায়ী ও পাখিদের ঘুমের খুবই স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। ঘুমের মধ্যে র্যাম চলাকালেই মানুষ বেশি স্বপ্ন দেখে থাকে। জার্মানির পাঁচ গবেষকের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, শীতের সময় ঘুমের মধ্যে এই র্যাম বছরের অন্য সময়ের চেয়ে ৩০ মিনিটেরও বেশি দীর্ঘ হতে পারে। ফলে স্বাভাবিকভাবে ঘুমের দৈর্ঘ্যও বেড়ে যায়।
শীতের এই ঘুম কি অস্বাভাবিক
না, অস্বাভাবিক নয়। শীতে এই অতিরিক্ত ঘুম আমাদের স্বাভাবিক হিসেবেই মেনে নেওয়া উচিত। কেননা ঘুমের অপর্যাপ্ততা থেকে ডিমেনশিয়া, বিষণ্নতা, বহুমূত্র, হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও স্থূলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। রাতে সাত থেকে নয় ঘণ্টার খুব ভালো একটা ঘুম হওয়ার পরও দিনে যদি আপনি ক্লান্ত বোধ করেন, মেজাজ থাকে খিটখিটে এবং কাজে মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে বুঝে নিন আপনার আরও ঘুম প্রয়োজন। তাই পারলে শীতকালে আরও বেশি ঘুমিয়ে নিন।