Friday, November 8, 2024
Homeরাজনীতিবিএনপিভোটদানে নিরুৎসাহিত করার কৌশল খুঁজছে বিএনপি

ভোটদানে নিরুৎসাহিত করার কৌশল খুঁজছে বিএনপি

দলীয় সরকারের অধীনে হওয়ায় আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বয়কট করে একদফার আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে বিএনপি ও যুগপতে থাকা মিত্ররা। দল ও জোটের বিভিন্ন ফোরামে ৭ জানুয়ারির ভোট ঠেকানোর বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা থাকলেও বর্তমান বাস্তবতায় সেটা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন তাদের অনেকে। মিত্রদের পরামর্শ ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিএনপি এখন ভোট ঠেকানোর চেয়ে ভোটারদের ভোট বর্জন করানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

 

এ লক্ষ্যে আন্দোলন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ভোটারদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করার কৌশল খুঁজছে দলটি।

 

 

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতাবলয়ের বাইরে থাকায় এমনিতেই বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি অনেকখানি কমে গেছে, তার ওপর রয়েছে সরকারের নির্বিচার দমন-পীড়ন, গ্রেপ্তার। তাছাড়া গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার জেরে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানে অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে বিএনপি। ফলে তাদের পক্ষে ভোট ঠেকানো সম্ভব নয়। ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ভোট ঠেকাতে পারেনি।

 

 

 

বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ধারণা–বর্তমানে দৃশ্যমান তৎপরতা না থাকলেও বাংলাদেশে একটি অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাওয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব মোটেও সরেনি। তাই তাদের এখন চেষ্টা হচ্ছে, আসন্ন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। আর ভোটাররা বর্জন করলেই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। একই সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে না গেলে বিএনপিবিহীন নির্বাচনের প্রতি ভোটারদের চূড়ান্ত অনাস্থার বিষয়টিও প্রতীয়মান হবে। সেক্ষেত্রে পশ্চিমাসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বে নির্বাচন আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এমনটা হলে নির্বাচন করতে পারলেও আওয়ামী লীগের জন্য সরকারে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

 

 

 

বিএনপি নেতারা বলছেন, দেশের দুটি বড় রাজনৈতিক দলের একটি বিএনপি। সারা দেশে তাদের ব্যাপক জনসমর্থন এবং অসংখ্য নেতাকর্মী-সমর্থক রয়েছেন। তৃণমূলে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত কর্মী-সমর্থক রয়েছে। দলের সিদ্ধান্তে তারা একতরফা নির্বাচন বয়কট করবে। এখন অন্য দল ও নিরপেক্ষ ভোটারদের ৭ জানুয়ারি ভোটকেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত করা হবে।

 

জানা গেছে, জনগণকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে প্রচারের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি ও মিত্ররা। তাদের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ভোটারদের ভোট বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া আগামীতে সভা-সমাবেশ, মিছিল, মিটিং, মানববন্ধন, পোস্টার, লিফলেট বিতরণের মধ্য দিয়ে জনমতকে সংগঠিত করার পরিকল্পনা করছে দলটি। এ কাজে সারা দেশের জেলা, উপজেলা ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের লাগানো হবে। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জনগণকে অব্যাহতভাবে ভোট বর্জনের আহ্বান জানানো হবে। এ ছাড়া এ কাজে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেও ব্যবহার করা হবে, দেওয়া হতে পারে একক ও যৌথ বিবৃতি। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞায় সভা-সমাবেশ করতে না পারলে সেক্ষেত্রে ভোট বর্জনে জনগণকে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির পক্ষে থাকার আহ্বান জানানো হতে পারে।

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, রাজনৈতিক দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে বাইরে রেখে সরকার আবারও একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি ও যুগপতের শরিকদের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দেশবাসীকে ভোট বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে যেন ভোটার উপস্থিতি কম হয়, সেজন্য আমরা প্রচার-প্রচারণামূলক কর্মসূচি নেব।

 

বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র গণতন্ত্র মঞ্চ। ইতোমধ্যে মঞ্চ এবং মঞ্চভুক্ত দলগুলোর পক্ষ থেকে পৃথকভাবে ভোটারদের ভোট বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

 

এ প্রসঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক কালবেলাকে বলেন, সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন চলছে। ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত যদি এই সরকার টিকে থাকতে পারে, তাহলে মানুষ ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে এই একতরফা নির্বাচনের প্রতি তাদের চূড়ান্ত অনাস্থা প্রকাশ করবে। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়াটাই তো সবচেয়ে বড় অনাস্থা।

 

 

 

তিনি বলেন, মানুষকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করতে আমরা সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ, মিছিল, প্রচার অব্যাহত রাখব। একই সঙ্গে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও ব্যবহার করবে। একতরফা ভোটের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে লিফলেট বিতরণ করা হবে। একতরফা নির্বাচন যে দেশকে বিপদগ্রস্ত করতে পারে, এ সতর্কতা রেখে মানুষকে ভোট না দিতে আহ্বান জানানো হবে। এ ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ পথে গণতান্ত্রিক যতগুলো ফর্ম আছে, সবই তারা ব্যবহার করবেন। তারা যেখানে সভা-সমাবেশ করতে পারবেন, পাড়ায় পাড়ায় মিটিং, ছোট ছোট বৈঠকের মধ্য দিয়েও শান্তিপূর্ণভাবে জনমতকে সংগঠিত করবেন। গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতা জানান, তাদের বিশ্বাস, মানুষ একতরফা ষড়যন্ত্রের নির্বাচন মানবে না। জনগণ কোন প্রক্রিয়ায় তা প্রতিরোধ করবে, বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়ে সেই ফর্ম তারা নিজেরাই বের করবে।

 

জানতে চাইলে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ১২ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে এই সরকার ও নির্বাচনের প্রতি তাদের অনাস্থা ব্যক্ত করবে। জনগণের প্রতি ভোট বর্জনের আহ্বান অব্যাহত থাকবে।

 

জানা গেছে, প্রচারণার শুরু থেকে ভোট পর্যন্ত সময়কে চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য ‘মোক্ষম সময়’ হিসেবে বিবেচনা করছে বিএনপি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞায় সভা-সমাবেশ, মানববন্ধনের মতো নেতাকর্মীদের জমায়েতের কর্মসূচি করতে না পারলে হরতাল-অবরোধ অব্যাহত থাকবে। আগামীকাল মঙ্গলবার দেশব্যাপী হরতালের পর চলতি সপ্তাহের শেষ দুদিন অথবা শেষ দিন হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি আসতে পারে। তবে সেটা সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আচরণের ওপর নির্ভর করবে বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।

 

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের শেষ দিক থেকে ভোট পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি অত্যন্ত শক্তভাবে পালিত হবে। এই সময়ে জামায়াতে ইসলামী যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে পারে। এক দফার চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে সাংগঠনিক শক্তি বিবেচনায় দীর্ঘদিনের মিত্র এ দলটিকে পাশে চায় বিএনপি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments