Sunday, November 24, 2024
Homeজাতীয়শোকজেই ‘শেষ’ ইসির তৎপরতা

শোকজেই ‘শেষ’ ইসির তৎপরতা

বিশেষ প্রতিনিধি:

ঝালকাঠিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনুষ্ঠানে যোগ দিলে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হবে বলে জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার। এর পরও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও প্রবীণ সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু ৯ ডিসেম্বর সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে ওই অনুষ্ঠানে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোটও চাওয়া হয়।

 

ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমির হোসেন আমুর ওই কার্যক্রমে আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মনে করে ওই আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।

 

এসংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজসহ অন্যান্য তথ্য-প্রমাণ পাঠানো হয় নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। এর ভিত্তিতে তাঁকে তলব করে ইসি। ১৫ ডিসেম্বর ইসিতে উপস্থিত হয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দেন আমির হোসেন আমু। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে নির্বাচনী আচরণবিধি যাতে ভঙ্গ না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার আশ্বাস দেন তিনি।

 

তাতেই সন্তুষ্ট ইসি।

প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু ইসিতে উপস্থিত হয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দিলেও কেউ কেউ আমলেই নিচ্ছেন না। নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির শোকজের জবাবে দুঃখ প্রকাশ করে আবারও আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন কেউ কেউ। ফলে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির শোকজের পাশাপাশি সারা দেশে আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পড়েছে।

 

এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক প্রার্থী শোকজ নোটিশ পেয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের মনোনীত ও স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা। অনেকে বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য।

 

সূত্রগুলো জানায়, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরীকে দ্বিতীয়বার শোকজ করা হয়েছে। এর আগে তিনি দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে আচারণবিধি লঙ্ঘন না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

 

তাঁর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফায় বিধি ভঙ্গের তথ্য পাঠিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। অনুসন্ধান কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থী বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, ঢাকা-১৯ আসনের প্রার্থী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এবং মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের মৃণাল কান্তি দাস ও গাজীপুর-৫ আসনের মেহের আফরোজ চুমকিকে সতর্ক করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ইসি সচিবালয়ের উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠিতে তাঁদের ভবিষ্যতে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার জন্য বলা হয়েছে।

 

ইসি সূত্র জানায়, শোকজপ্রাপ্ত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় মিছিল, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সমাবেশ, সভা-সমাবেশে ভোট চাওয়া, মোটর শোভাযাত্রা ও শোডাউন, সাংবাদিকদের হেনস্তা, মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটানো এবং নির্বাচনী প্রচারে সরকারি যানবাহন ব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী পুলিশ প্রটোকল ও গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় তাঁকে শোকজ করে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।

 

আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে শোকজ নোটিশ পাওয়ার তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে সুনামগঞ্জ-৩ আসনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, নাটোর-৩ আসনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, গাজীপুর-২ আসনে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, ফরিদপুর-৪ আসনের কাজী জাফরুল্লাহ, ঢাকা-৯ আসনের সাবের হোসেন চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, ঢাকা-৮ আসনের বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ।

 

বিরোধী দল জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

 

ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসাররা আচরণবিধি কার্যকর করার ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এবার নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে নির্বাচনী আচরণবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য ৩০০টি সংসদীয় আসনে বিচার বিভাগীয় নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ২৮ নভেম্বর ওই কমিটি গঠনের পর থেকেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগে বিভিন্ন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়। তবে তা শোকজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। অথচ আইনে আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।

 

আইন অনুযায়ী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, রিটার্নিং অফিসার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিলে প্রার্থীরা আচারণবিধি মেনে চলতে বাধ্য হবেন।

 

নির্বাচনী আচরণবিধির ১৮ ধারায় বলা হয়েছে, প্রার্থীরা নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। এই ধারায় রাজনৈতিক দলগুলোকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করতে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও রয়েছে ইসির।

 

এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, আচরণবিধি কার্যকর করতে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি কাজ করছে। ওই কমিটির আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের জবাবদিহি চাওয়ার পাশাপাশি তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইসিকে সুপারিশ করার সুযোগ রয়েছে। এ ধরনের কোনো সুপারিশ পেলে ইসি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments