বিশেষ প্রতিনিধি:
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিশেষ অনুগ্রহ আমাদের বিজয় ও স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল সাধারণ মানুষের উদ্দেশে প্রথম নির্দেশনামা, ‘স্বাধীন বাংলার সংগ্রামী জনগণের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনাবলি’র শিরোনাম শুরু হয় ‘আল্লাহু আকবর’ দিয়ে এবং শেষ হয় সুরা দুহার আয়াত দিয়ে, তা হলো, ‘অতীতের চেয়ে আগামী নিশ্চয়ই সুখকর।’
(সুরা : দুহা, আয়াত : ০৪)
এবং সুরা সফের ‘নাসরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন কারিব’ অর্থাৎ ‘আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় নিকটবর্তী।’ (সুরা : সফ, আয়াত : ১৩)-এর মাধ্যমে।
বাঙালির বিজয় আকাঙ্ক্ষায় সুরা ফাতহ খুব প্রাসঙ্গিক। ফাতহ শব্দের অর্থ বিজয়। হুদায়বিয়ার সন্ধির প্রেক্ষাপটে নাজিলকৃত সুরায় মহান আল্লাহ বলেন, ‘(হে রাসুল), নিশ্চয়ই আমি আপনাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়।’
(সুরা : ফাতহ, আয়াত : ১)
হিজরতের ছয় বছর পর মাতৃভূমির টানে প্রিয় নবী (স.) ও সাহাবিরা মক্কায় যাওয়ার ইচ্ছা করেন।
কিন্তু শত্রুপক্ষ হুদায়বিয়ায় মুসলমানদের গতিরোধ করলে, ঈমানি চেতনায় শাণিত মুসলমানরা প্রিয় নবী (সা.)-এর হাতে হাত রেখে শপথ করেন। এ শপথকে বাইয়াতুর রিদওয়ান বলে। তখন মহান রাব্বুল আলামিন সন্তুষ্ট হয়ে মক্কা বিজয়ের সুসংবাদ জানিয়ে বলেন, ‘হে রাসুল, আল্লাহ মুমিনদের ওপর সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা বৃক্ষতলে আপনার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করল, তাদের অন্তরে যা ছিল তা তিনি অবগত ছিলেন, তাদের তিনি দান করলেন প্রশান্তি এবং তাদের পুরস্কার দিলেন আসন্ন বিজয়।’ (সুরা : ফাতহ, আয়াত : ১৮)
ইসলামের চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বার উন্মোচন হয় হুদায়রিয়ার সন্ধিতেই।
৬৩০ খ্রিস্টাব্দের ২১ রমজান ১০ হাজার সাহাবিসহ বিজয়ীবেশে প্রিয় নবী (সা.) পবিত্র মক্কায় প্রবেশ করেন। তখন কণ্ঠে তাঁর উচ্চারিত হচ্ছিল : ‘বলো, সত্য সমাগত, মিথ্যা দূরীভূত, নিশ্চয়ই মিথ্যা তো বিলুপ্ত।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৮১)
প্রতিশ্রুত বিজয় ও সাহায্যের সত্যায়নে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন আল্লাহর পক্ষ েথকে সাহায্য ও বিজয় আসবে এবং দলে দলে লোকদের ইসলামে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন স্বীয় প্রতিপালকের প্রশংসার সঙ্গে তাসবিহ পড়ুন এবং আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করুন।’
(সুরা : নাসর, আয়াত : ১-৩)
এখানে পালনীয় তিনটি নির্দেশনা হলো :
বিজয়ের জন্য মহান আল্লাহর মহত্ত্ব, পবিত্রতা ও বড়ত্ব বর্ণনা করা।
মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।
মহান আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে আত্মনিবেদন ও ইস্তিগফার করা।
এ জন্যই মক্কায় প্রবেশ করে প্রিয় নবী (সা.) আট রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন। এ নামাজকে ‘বিজয়ের নামাজ’ বলে। অতএব, বিজয় দিবসে নফল নামাজ পড়া ইসলামের শিক্ষা।
পরিশেষে নিবেদন, মহান মুক্তিসংগ্রামে যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন মহান আল্লাহ যেন তাঁদের শাহাদাতের উচ্চ মর্যাদা নসিব করেন। যাঁরা স্বজন হারিয়ে, পঙ্গুত্ববরণ করে কষ্টে আছেন আল্লাহপাক যেন তাঁদের স্বস্তি দান করেন। যেসব বীর সন্তানেরা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে ছিনিয়ে এনেছিলেন বিজয় ও স্বাধীনতা, তাঁরা যেন সুস্থ থাকেন এবং দীর্ঘায়ু হন। আমিন।