বিশেষ প্রতিনিধি:::
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে সোমবার থেকে ভোটগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনি কাজে বাধা হতে পারে, এমন রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা-৬ এর সিনিয়র সহকারী সচিব হাবিবুল হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সরকারের এমন পদক্ষেপে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর নেতারা। সরকার পতনের একদফা দাবিতে নির্বাচনে অংশ না নিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে এসব দল। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যুগান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তা বিএনপি প্রত্যাখ্যান করছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করছে। মূলত একদলীয় নির্বাচনকে নিশ্চিত করতে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। এটি সংবিধান পরিপন্থি কাজ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অন্যায়ভাবে নিষেধাজ্ঞা দিলেও জনগণ মানবে না। অধিকার রক্ষার দাবিতে রাজনৈতিক কর্মসূচি চলছে, চলবে। কোনোভাবেই ঠেকাতে পারবে না।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, প্রথমত নির্বাচন কমিশন যে নির্দশনা দিয়েছে সেটা অন্যায়। সংবিধান পরিপন্থি। রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ করার তাদের কোনো এখতিয়ার নেই। নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়া জনগণের অধিকার। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা নাগরিক অধিকার। এটা সংবিধানের ২৯ ধারায় সুস্পষ্টভাবে বলা রয়েছে। অতীতে কোনো নির্বাচনের আগে কোনো নির্বাচন কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নেয়নি। জরুরি অবস্থা জারির ক্ষেত্রে ভিন্ন প্রেক্ষাপট হতে পারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে না। এটা অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, দেশে এখন পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি হয়নি। সেক্ষেত্রে এমন নিষেধাজ্ঞা জারি করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশন বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেই।
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৮ ডিসেম্বর থেকে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা ছাড়া নির্বাচনি কাজে বাধা হতে পারে বা ভোটাররা ভোটপ্রদানে নিরুৎসাহিত হতে পারে এরূপ কোনো প্রকার সভা-সমাবেশ বা অন্য কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা থেকে সবাইকে বিরত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এর আগে ১২ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা পাঠায় ইসি। ইসির উপসচিব আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন ৭ জানুয়ারি ধার্য করা রয়েছে। ১৮ ডিসেম্বর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে। এদিন থেকে ভোটগ্রহণ সমাপ্ত হওয়ার পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা ব্যতীত নির্বাচনি কাজে বাধা হতে পারে বা ভোটাররা ভোটপ্রদানে নিরুৎসাহিত হতে পারে এরূপ কোনো প্রকার সভা-সমাবেশ বা অন্য কোনো প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা থেকে সবাইকে বিরত রাখা বাঞ্ছনীয়।
এদিকে গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের সিদ্ধান্ত সঠিক কিনা? এটা সংবিধান পরিপন্থি হচ্ছে কিনা-জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার গণমাধ্যমকে বলেছেন, এটা তো সাধারণ বিষয়। একটা বিশেষ সময়ে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রত্যেক দল যার যার প্রার্থী নিয়ে প্রচার-প্রচারণা করবে। সে সময় এই দল সেই দল মুখোমুখি হতেই পারে যাতায়াতের পথে। সেখানে যদি আবার আরেকটা নতুন দল নির্বাচন ছাড়া অন্য কথা বলে, সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন বলছে স্বাভাবিক পরিস্থিতির ব্যাঘাত হতেই পারে।
তিনি বলেন-সুষ্ঠু, সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে যাতে নির্বাচন হয় আমার মনে হয় এজন্যই নির্দেশনাটা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তারা যখন একটি নির্দেশনা দিয়েছে, তারা তো সংবিধান দেখেই দিয়েছে। এখানে সংবিধান লঙ্ঘন হওয়ার কিছু নেই।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিজ্ঞপ্তির অনুলিপি নির্বাচন কমিশন সচিব, সব বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, উপপুলিশ মহাপরিদর্শক, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে দেওয়া হয়েছে।