Friday, November 8, 2024
Homeইসলামইসলামে বুদ্ধিজীবীদের মর্যাদা অসামান্য

ইসলামে বুদ্ধিজীবীদের মর্যাদা অসামান্য

 

ইসলামি জীবন:

ইয়াছিন আলী খান,

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে স্মরণ করা হয় বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী বুদ্ধিজীবীদের। বুদ্ধিজীবী বা আলেমরা যে কোনো জাতির সেরা সন্তান। আলেম শব্দের অর্থ জ্ঞানী-বুদ্ধিজীবী। ইসলাম জ্ঞানচর্চার আলোকবর্তিকা বুদ্ধিজীবীদের অতুলনীয় সম্মান দিয়েছে। ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলো মানুষ। আর মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো জ্ঞানী বা বুদ্ধিজীবীরা। জ্ঞানচর্চার প্রতি ইসলামের ইতিবাচক মনোভাবের উৎস আল কোরআন। কোরআনের প্রথম আয়াতেই আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘পড় তোমার প্রতিপালকের নামে; যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ আলো যেমন অন্ধকার দূরীভূত করে তেমনি জাহেলিয়া বা অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে জ্ঞান সত্য সুন্দর কল্যাণের পথকে আলোকিত করে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। ফেরেশতারা এবং ন্যায়নিষ্ঠ আলেমরাও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ইমানদার এবং যারা আলেম, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উচ্চ করে দেবেন।’ (সুরা মুজাদালা, আয়াত ১১) মহানবী (সা.) মুসলমানদের সবসময় জ্ঞান সাধনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘শিক্ষিত সম্প্রদায় নবীর উত্তরাধিকারী। যে জ্ঞানকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছে, সে তার এক বিরাট অংশ অধিকার করেছে এবং যে জ্ঞানার্জনের পথে নিজেকে নিয়োজিত করে আল্লাহ তার জন্য বেহেশতের পথ সুগম করেন।’ ‘জ্ঞানের অন্বেষণে যে তার বাসস্থান ত্যাগ করে সে আল্লাহর পথে ভ্রমণ করে।’ মহানবী (সা.) বিভিন্ন যুদ্ধে বন্দি অমুসলিম আলেম বা বুদ্ধিজীবীদের মুক্তিপণ হিসেবে আর্থিক বা বৈষয়িক সুবিধার বদলে তারা কোনো মুসলমানকে অক্ষরজ্ঞান দান করলে মুক্তি দেওয়া হবে এমন শর্ত নির্ধারণ করতেন। মহানবী (সা.)-এর এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘রাতে কিছু সময় জ্ঞানচর্চা করা সারা রাতের নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম।’ (দারিমির সুনান থেকে মিশকাতে)

 

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানি হানাদারদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ হত্যাকাণ্ড যে ইসলামের দৃষ্টিতে সাধারণ হত্যাকাণ্ডের চেয়ে জঘন্য তা বুদ্ধিজীবীদের প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই অনুমান করা যায়। ইসলাম যে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে জঘন্য অপরাধ বলে মনে করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদাররা বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালায়। ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ নানা অপরাধে তারা জড়িত ছিল। আমাদের দেশের কেউ কেউ এসব অপকর্মে মদদ জুগিয়েছে। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডেও তাদের ভূমিকা ছিল। ইসলাম কোনো অবস্থায়ই জালেমের সহায়তা করাকে অনুমোদন করে না।

 

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘সত্যকে পরাভূত করার জন্য যে ব্যক্তি জালেমকে সাহায্য করল সে মহান আল্লাহ ও তাঁর রসুলের হেফাজত-বহির্ভূত হয়ে গেল।’ ফলে মহান মুক্তিযুদ্ধকালে যারা জালেমের সহায়তা করেছে, যারা বুদ্ধিজীবী হত্যায় নিজেদের নিয়োজিত করেছে তারা ইসলামী অনুশাসনকেই লঙ্ঘন করেছে। আর সে জন্যই মহান আল্লাহ তাদের অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করেছেন লজ্জাজনক পরাজয়ের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বুদ্ধিজীবীসহ সব শহীদের জন্য আমরা আল্লাহর কৃপা কামনা করব। আল্লাহ তাঁদের জান্নাতের সুশীতল ছায়ায় ঠাঁই দিন। আমিন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments