Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the td-cloud-library domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/sylheterkagoj/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
ফুড আপ্পি নিয়ে কেন এত মাতামাতি কেন এত ছড়াছড়ি - Sylheter Kagoj : সিলেটের কাগজ |
Friday, April 18, 2025
Homeবিনোদনফুড আপ্পি নিয়ে কেন এত মাতামাতি কেন এত ছড়াছড়ি

ফুড আপ্পি নিয়ে কেন এত মাতামাতি কেন এত ছড়াছড়ি

 

 

বিশেষ প্রতিনিধি:

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কদিন ধরে ‘ফুড আপ্পি’ নিয়ে সরব অসংখ্য মানুষ। অনেকেই তাঁকে নিয়ে কথা বলছেন। কে এই ফুড আপ্পি? তাঁর নাম মূলত ফাবিহা হাসান মনীষা। তিনি মূলত একজন ফুড ভ্লগার। হোটেল-রেস্তোরাঁয় ঘুরে ঘুরে খাবার পরখ করেন, রিভিউ দেন এবং সেসব নিয়ে বানান ভিডিও।

 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই দুনিয়ায় ফুড ভ্লগার আলোচিত ও সুপরিচিত একটি নেশা বা পেশা হয়ে উঠেছে। ‘রাফসান দ্য ছোটো ভাই’, ‘খুধা লাগছে’, ‘পেটুক কাপল’—এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের ফুড ভ্লগিংয়ের ভক্ত লাখ লাখ মানুষ, বিশেষত তরুণ প্রজন্ম। ফুড আপ্পিও তাঁদের মধ্যে একজন। কিন্তু তাঁকে নিয়ে কেন এত আলোচনা?

 

ফুড আপ্পিকে কিছুদিন আগেও আমরা অনেকেই চিনতাম না। গত অক্টোবরে তিনি তাঁর নিজের পেজ থেকে একটি পোস্টে প্রকারান্তরে বলে দিলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অশ্লীলতা শেখানো হয়। এর মধ্য দিয়ে পুরো বেসরকারি শিক্ষা খাতকে তিনি বিশাল এক নেতিবাচক তকমা দিয়ে দিলেন। এ কারণে শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই নন, সচেতন মানুষও এমন ভাষ্যের বিরুদ্ধে সরব হলেন।

 

 

আরও পড়ুন

রাজনীতিতে তরুণদের হিস্যা কোথায়,

ফুড ভ্লগার হিসেবে ফুড আপ্পির তৈরি হয়েছে বিশাল এক ফ্যানবেজ বা অনুসারীর দল। তাঁকে আমরা অনেকে না চিনলেও লাখ লাখ মানুষের কাছে ঠিকই তিনি পৌঁছে গেছেন। ফলে এমন একটি কথা যখন তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবেই তা নিয়ে তুমুল প্রতিক্রিয়া হওয়ারই কথা এবং তা-ই হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তাঁকে আমরা যারা এত দিন চিনতাম না, তাদেরও চেনা হয়ে গেল। চেনা বলতে ফুড আপ্পি বলে একজন আছেন, যিনি ফুড ভ্লগিং করেন এবং তা লাখ লাখ মানুষ দেখেন।

 

এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন জনপ্রিয় উপস্থাপকের অনুষ্ঠানে এক মাসের ব্যবধানে দুবার সামনে আসেন ফুড আপ্পি, মানে মনীষা। প্রথম শোতে তিনি তাঁর সাবেক স্বামীর নামে নানা ধরনের অভিযোগ ও বিষোদ্‌গার করেন। সেখানে তাঁদের দাম্পত্য কলহ ও পারিবারিক সমস্যাগুলো খোলাখুলি প্রকাশ করেন তিনি, যা নিয়ে বেশ তর্কবিতর্ক তৈরি হয়।

 

তবে বিষয়গুলোর উপস্থাপনা এমন ছিল যে সেখানে আরেক পক্ষ, মানে তাঁর সাবেক স্বামীর উপস্থিতি বা তাঁর বক্তব্য শোনাটাও জরুরি হয়ে পড়েছিল। তখন সামাজিক মাধ্যমে তাঁর সাবেক স্বামী রুহুল আমিনের বক্তব্য শোনার দাবি ওঠে। এ কারণে পরবর্তী শোটি হয় দুজনকে নিয়েই। সেখানে দেখা যায়, আগের শোতে মনীষার অনেক বক্তব্যে গরমিল ছিল। অনেক নেটিজেনের মতে, মনীষা আসলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে অসত্য বলেছেন এবং নিজের দোষ সাবেক স্বামীর ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন।

 

 

 

দেশের অনেক পরিবার বা অনেকের দাম্পত্য জীবনের সমস্যার মতোই ছিল ব্যাপারটা; যেখানে নির্যাতন, যৌতুক, মোহরানা ইস্যু, প্রতারণা, মামলা, গ্রেপ্তার, বিচ্ছেদ, সন্তানের দায়িত্ব—সবকিছুই যুক্ত। স্বাভাবিকভাবেই কারও জীবনে এমন জটিলতা আমরা কেউই আশা করি না।

 

এর মধ্যে মনীষা পুনরায় বিয়ে করে বর্তমান স্বামীর সহায়তায় ফুড ভ্লগার হিসেবে নিজের সফল ক্যারিয়ার গড়েছেন, তাঁর দাবি সেখান থেকে মাসে তার আয় ১০/১১ লাখ টাকা, অন্যদিকে সন্তান নিয়ে এখনো একক বাবা হিসেবে জীবন চালিয়ে নিচ্ছেন রুহুল আমিন।

 

যাহোক, এই সবকিছু নিয়েই মূলত ফুড আপ্পিকে ঘিরে যত আলোচনা, লাখো মানুষের পক্ষে-বিপক্ষে ভাগ হয়ে যাওয়া। ভিকটিম ব্লেমিং ছাড়াও নানা সমালোচনা, ট্রল বা ঠাট্টা-তামাশায় মেতে ওঠেন সবাই। বসে যায় সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল—কে অপরাধী বা কে নিরাপরাধ?

 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগের নতুন এই প্রবণতা কতটা প্রবল হয়ে উঠেছে, এর আগেও আমরা বেশ কিছু ইস্যুতে দেখেছি। সবকিছু সবার সামনে ‘এক্সপোজ’ করে দিয়ে কাউকে শাস্তি দিয়ে একধরনের ‘পৈশাচিক আনন্দ’ খুঁজে পেতে চান অনেকে। সেখানে কে আসলে সত্য বলছেন বা লুকাচ্ছেন, তা যাচাই-বাছাই করার সুযোগ থাকে না।

 

 

দেশের রাজনীতিতে সংকট চলছে। কয়েক সপ্তাহ পর দেশে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচনটি কীভাবে হচ্ছে বা করা হচ্ছে, তা সবার কাছে পরিষ্কার। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চাপ পড়ছে সমাজের সব শ্রেণির মধ্যে, অর্থনীতিতে বিপদের ঝুঁকির কথাও আলোচিত হচ্ছে জোরেশোরে। এমন একটি পরিস্থিতিতে তরুণদের একাংশ কেন ফুড আপ্পিকে নিয়ে পড়ে আছেন?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই এক্সপোজ বা মুখোশ উন্মোচন করার তর্কবিতর্কে আসলে গভীরভাবে আরও কিছু বিষয় উন্মোচিত হয়ে যায়।

 

দেশের রাজনীতিতে সংকট চলছে। কয়েক সপ্তাহ পর দেশে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচনটি কীভাবে হচ্ছে বা করা হচ্ছে, তা সবার কাছে পরিষ্কার। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চাপ পড়ছে সমাজের সব শ্রেণির মধ্যে, অর্থনীতিতে বিপদের ঝুঁকির কথাও আলোচিত হচ্ছে জোরেশোরে। এমন একটি পরিস্থিতিতে তরুণদের একাংশ কেন ফুড আপ্পিকে নিয়ে পড়ে আছেন?

 

সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে এ ব্যাপারে তাঁদের মত জানতে চেয়েছিলাম। তাঁদের মতে, তরুণেরা রাজনৈতিকভাবে সচেতন নন, এমনটি নয়। কিন্তু এসব নিয়ে কথা বলে ঝামেলায় পড়তে চান না।

 

ফুড আপ্পির বিষয়ে তাঁদের মত হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একের পর এক ইস্যু আসে। এটিও তেমনই। মানুষ আসলে কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চায়। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইস্যুগুলোতে তরুণেরাই বেশি যুক্ত থাকেন। এভাবেই আসলে ফুড আপ্পির দাম্পত্য সমস্যা তরুণ প্রজন্মের একাংশের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

 

আরও পড়ুন

তরুণেরা কি সব দেশ ছেড়ে চলে যাবেন,

২০১৯ সালে প্রথম আলোর তারুণ্য জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৫৭ শতাংশ তরুণ রাজনীতির প্রতি অনাগ্রহী। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণ জীবনের লক্ষ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এ কয় বছরে এসব শতাংশ আরও বেড়েছে, তা বোঝা যায় গত ১৬ নভেম্বরে প্রকাশিত তরুণদের নিয়ে করা আরেকটি জরিপে।

 

বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস অ্যান্ড জাস্টিস সেন্টারের ‘‌ইয়ুথ ম্যাটার্স সার্ভে ২০২৩’ নামে সেই জরিপে দেখা যাচ্ছে, ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণ জনপরিসরে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশকে নিরাপদ মনে করছেন না এবং শিক্ষিত তরুণদের প্রায় অর্ধেক বা ৪২ শতাংশ দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে চান।

 

এর মানে তরুণদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এ দেশে থাকাটা বা থিতু হওয়াটাই নানা দিক থেকে অনিশ্চিত ও অনিরাপদ মনে করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে ১৬-৩৫ বছর বয়সীদের মধ্যে এ জরিপ চালানো হয়। ফুড আপ্পি ইস্যুতে সরব থাকা বেশির ভাগ মানুষকেই এমন বয়সসীমার মধ্যে ফেলা যায়।

 

৬ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন সিভিকাস মনিটর তাদের নতুন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

 

প্রতিবেদনটিতে ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলের নাগরিক সমাজের অবস্থা তুলে ধরা হয়। সেখানে বাংলাদেশকে সবচেয়ে খারাপ রেটিংয়ে ফেলেছে তারা। মূলত ক্ষমতাসীনদের বয়ান বা ন্যারেটিভের বাইরে ভিন্নমতাবলম্বী বা ভিন্ন রাজনৈতিক চিন্তা-মতাদর্শীরা কী রকম সংকটজনক পরিস্থিতিতে আছে, সে ব্যাপারে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।

 

সিভিকাস মনিটর বলেছে, বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের কথা বলার স্থান বন্ধ হয়ে গেছে। মানে এ দেশের মানুষ রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার নিয়ে নিজের বক্তব্য প্রকাশ করতে পারছেন না বা প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছেন।

 

এখন অনেকের মনে হতে পারে, এমন ‘দমবন্ধ’ পরিস্থিতিতে তরুণেরা ফুড আপ্পিকে নিয়ে কেন মেতে থাকবেন না? বিষয়টি আসলে তা-ই নয় কি?

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments