কাগজ ডেস্ক:::
স্বাধীনতার অনেক আগেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি অনুষ্ঠানে কুঁড়ি থেকে ফুল হতে যাওয়া এই দেশটির নাম দিয়েছিলেন ‘বাংলাদেশ’। ১৯৬৯ সালের এই দিনে (৫ ডিসেম্বর) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় ‘বাংলাদেশ’ নামটি চূড়ান্ত করেন বঙ্গবন্ধু নিজেই। বর্তমানে এই দিনটি ‘বাংলাদেশ দিবস’ বা ‘বাংলাদেশের নামকরণের দিবস’ হিসেবেই পালিত হয়।
ইতিহাস বলছে, ১৯৬৯ সালের পাঁচ ডিসেম্বরের পর মৌখিকভাবে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের নাম হয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর থেকে কাগজে-কলমে পূর্ব-পাকিস্তান লিখলেও মুখে সবাই এই অঞ্চলকে বাংলাদেশই বলতেন। সেদিনের বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং তৎকালীন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘‘বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত ওই স্মরণসভায় বঙ্গবন্ধু জানান, দেশ স্বাধীনের পর নাম ‘বাংলাদেশ’ রাখা হবে। এমনকী তিনি সেদিন স্লোগানও দিয়েছিলেন ‘আমার দেশ, তোমার দেশ-বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’।’’ তোফায়েল আহমেদ জানান, বঙ্গবন্ধু কখনও পূর্ব-পাকিস্তান বলতেন না, তিনি সবসময় ‘পূর্ব-বাংলা’ বলতেন।
তোফায়েল আহমেদের এই কথার সত্যতা উঠে আসে ১৯৫৮ সালের একটি ঘটনায়। ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন অবসানের পর ১৯৪৭ সালে বঙ্গ-প্রদেশ ভারত ও পাকিস্তানে বিভক্ত হল। সে সময় পাকিস্তানিরা পূর্ব-বাংলার নাম দিতে চাইলো পূর্ব-পাকিস্তান। কিন্তু এ নিয়ে সেই সময় থেকেই বিতর্ক শুরু হয়। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায় বাংলা। এরপর ১৯৫৭ সালে করাচিতে পাকিস্তানের গণপরিষদের তরুণ সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান বক্তৃতা দেওয়ার সময় ‘পূর্ব-পাকিস্তান’ নামটির প্রতিবাদ করে বলেন যে, পূর্ব-বাংলা নামের একটি ইতিহাস ও ঐতিহ্য আছে। আর যদি পূর্ব-পাকিস্তান নাম রাখতেই হয়, তাহলে বাংলার মানুষের জনমত যাচাই করতে হবে। তারা নামের এই পরিবর্তন মেনে নিবে কিনা- সেজন্য গণভোট করতে হবে।’’
বিবিসি’র ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ‘বাংলাদেশ’ শব্দের উৎপত্তিগত ব্যাখ্যা দেন তাদের কাছে। এতে তিনি বলেন, ‘‘যেখানে ‘বাংলা’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃত শব্দ ‘বঙ্গ’ থেকে। আর্যরা ‘বঙ্গ’ বলে এই অঞ্চলকে অভিহিত করতো বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। তবে বঙ্গে বসবাসকারী মুসলমানরা এই ‘বঙ্গ’ শব্দটির সঙ্গে ফার্সি ‘আল’ প্রত্যয় যোগ করে। এতে নাম দাঁড়ায় ‘বাঙাল’ বা ‘বাঙ্গালাহ্’। ‘আল’ বলতে জমির বিভক্তি বা নদীর ওপর বাঁধ দেওয়াকে বোঝাতো।’’
ইতিহাসবিদ আবুল ফজলের উদ্ধৃতি দিয়ে সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মুসলমান শাসনামলে বিশেষ করে ১৩৩৬ থেকে ১৫৭৬ সাল পর্যন্ত সুলতানি আমলে এবং ১৫৭৬ সালে মোঘলরা বাংলা দখল করার পরে এই অঞ্চলটি বাঙাল বা বাঙালাহ নামেই পরিচিতি পায়।’
জানা যায়, সোহরাওয়ার্দীর ওই স্মরণসভায় এই নাম দেওয়ার কারণ হিসেবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ১৯৫২ সালে সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাংলা ভাষা থেকে-বাংলা। এরপর স্বাধীন দেশের আন্দোলন সংগ্রাম থেকে-দেশ। এই দুটি ইতিহাস ও সংগ্রামকে এক করে ‘বাংলাদেশ’ নামকরণ করা হয়।
এ সম্পর্কে ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ে বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার উদ্ধৃতি রয়েছে। ওইদিন আলোচনায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এক সময় এই দেশের বুক হইতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে বাংলা কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকু চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে।একমাত্র বঙ্গোপসাগর ছাড়া আর কোনও কিছুর নামের সঙ্গে বাংলা কথাটির অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই।জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম পূর্ব-পাকিস্তান এর পরিবর্তে হবে শুধুমাত্র বাংলাদেশ।’
ধর্মভিত্তিক ধারণা
‘রোয়ার মিডিয়া’ নামে একটি অনলাইন ভিত্তিক ম্যাগাজিনের আট ডিসেম্বর, ২০১৯ এ প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ নামটি যেভাবে আমাদের হলো’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে ‘বাঙালির ইতিহাস’ বইয়ে ড. মোহাম্মদ হাননান, ১৭৬৮-১৭৮৮ সালের মধ্যে গোলাম হোসায়ন সলীম জইদ পুরী রচিত ‘রিয়াজ-উস-সালাতীন’ গ্রন্থ হতে ‘বঙ্গ’ নামের উৎপত্তি নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, মহাপ্লাবন পরবর্তী সময়ে হযরত নূহ (আঃ) তার স্ত্রী, সন্তানসহ ৮০ জন নর-নারী আল্লাহর হুকুমে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েন, সেখানে বংশবৃদ্ধি শুরু করেন, এবং তাদের বংশধররাই পৃথিবীকে নতুনভাবে সাজান। নূহ (আঃ) এর এক পুত্র হাম এশিয়া অঞ্চলে বংশবৃদ্ধির কাজে নিয়োজিত হন। তারই এক পুত্র হিন্দের নামানুসারে ‘হিন্দুস্থান’, সিন্ধের নামানুসারে ‘সিন্ধু’, আর বঙ্গের নামানুসারে ‘বঙ্গদেশ’ নামের উৎপত্তি হয়।
আবার বঙ্গ নামকরণের পেছনে হিন্দুদের পৌরাণিক তত্ত্বও বিদ্যমান। পৌরাণিক মতে, বঙ্গের নাম এসেছে রাজা বালির পুত্রের নাম থেকে। সেখানে দাবি করা হয়, রাজা বালির এক পুত্র অঙ্গ শাসন করতেন পশ্চিমবঙ্গ, খুলনা ও বরিশাল অঞ্চল। আরেক পুত্র বঙ্গ শাসন করতেন ঢাকা, ময়মনসিংহ ও ত্রিপুরা অঞ্চল। সর্বশেষ পুত্র পুন্ড্র শাসন করতেন উত্তরবঙ্গ ও আসাম অঞ্চল। এই পুত্রের নামানুসারেই তাদের শাসনকৃত অঞ্চলগুলো অঙ্গ, বঙ্গ ও পুন্ড্র নাম লাভ করে।
ইতিহাসবিদের মতামত ও ভৌগলিক ব্যাখ্যা
‘বঙ্গ’ থেকে ‘বাংলা’ নামটি কিভাবে এলো সে প্রসঙ্গে সম্প্রতি ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। তার মতে, ‘বাংলা’ শব্দের উচ্চারণ হয়েছে ‘বঙ্গ’ থেকেই, যেটি মূলত ছিল একটি সংস্কৃত শব্দ। আর্যরা নাকি অঞ্চলকে ‘বঙ্গ’ হিসেবে অভিহিত করতো। পরবর্তীতে এই অঞ্চলে বসবাসকারীরা বঙ্গ-এর সঙ্গে ফার্সি ‘আল’ প্রত্যয় যোগ হয় ‘বাঙাল’ বা ‘বাঙ্গালাহ্’। এক্ষেত্রে সৈয়দ আনোয়ার হোসেন মূলত ইতিহাসবিদ আবুল ফজল (আইন-ই-আকবরীর রচয়িতা) বর্ণিত ইতিহাসকে গ্রহণ করেছেন।
তিনি সেই সূত্র ধরে বলেছেন, ‘মুসলমান শাসনামলে বিশেষ করে ১৩৩৬ থেকে ১৫৭৬ সাল পর্যন্ত সুলতানি আমলে এবং ১৫৭৬ সালে মোঘলরা বাংলা দখল করার পরে এই অঞ্চলটি বাঙাল বা বাঙ্গালাহ্ নামেই পরিচিতি পায়।
‘আইন-ই-আকবরী’ গ্রন্থে আবুল ফজল লিখে
ছিলেন, ‘‘বঙ্গ শব্দের অর্থ জলাভূমি। এর সঙ্গে আল যুক্ত হয়ে হয়েছে বাঙ্গালাহ্। আল মানে শুধু চাষের খেতের (জমির) আলই নয়, ছোট-বড় বাঁধ অর্থেও এটি ব্যবহৃত হতো। প্রাচীনকালে রাজাগণ ১০ গজ প্রশস্ত উঁচু ২০ গজ বিশাল আকার আল নির্মাণ করতেন। বর্তমানেও বৃহত্তর বরিশাল ও ফরিদপুরের অনেক স্থানে ‘বাঙলা’ দেওয়া শব্দটি জলা ভূমিতে বাঁধ দেওয়া অর্থে ব্যবহৃত হয়। বাংলা বন্যা ও বৃষ্টির দেশ, বাংলার সঙ্গে তাই আল (বাঁধ) ঘনিষ্ঠে অনুষঙ্গ।’’
যেভাবে নামটি আমাদের
ইতিহাস মতে, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার, আসামের মতো কয়েকটি প্রদেশ নিয়ে গঠিত সাম্রাজ্যের নামকরণ করেছিলেন ‘বঙ্গ’। ব্রিটিশ শাসনামলে এই অঞ্চলের নাম হয় ‘বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি’। এরপর ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সময় গোটা বাংলায় একটা প্রশাসনিক বিভাজন হয়। বাংলার পশ্চিম অংশ হয়ে যায় ‘পশ্চিম বঙ্গ’ এবং পূর্ব অংশ হয়ে যায় ‘পূর্ব বাংলা’। আর ৪৭ এর দেশভাগের পর পাকিস্তানিরা এই অংশের নাম দেয় ‘পূর্ব-পাকিস্তান’।
১৯৬০-এর মাঝামাঝি থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ধারণাটি প্রকৃষ্ট রূপ ধারণ করতে থাকে। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে একটি স্লোগান নিয়মিতই দেওয়া হতো: ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।’ অর্থাৎ এই অঞ্চলকে অনেকেই মনে-প্রাণে বাংলাদেশ হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করে দিয়েছিল।
এই নামকরণের দাবি চূড়ান্ত রূপ লাভ করে ১৯৬৯ সালের ২৮ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের একটি ভাষণের পর থেকে। যারা ‘পূর্ব পাকিস্তান’ নামটি বদলাতে চাচ্ছিলেন তাদের যুক্তির প্রধান ভিত্তি ছিল, যেহেতু পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট ভেঙে গেছে এবং প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে সিন্ধ, বেলুচিস্তান, পাঞ্জাব এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলের সাবেক প্রাদেশিক নাম পুনর্জীবিত হচ্ছে, তাই পাকিস্তানের পাঁচটি প্রদেশের মধ্যে সবচেয়ে পূর্বে অবস্থিত প্রদেশের নাম আর ‘পূর্ব পাকিস্তান’ রাখা সঙ্গত হবে না।
এরপর আসে ৫ ডিসেম্বর, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা। সেখানে তৎকালীন নেতারা এই অঞ্চলের জন্য বিভিন্ন নাম প্রস্তাব করেন। যেমন: স্বাধীন পূর্ব বাংলা, বাংলা, বেঙ্গল, ইস্ট বেঙ্গল, বঙ্গ, বঙ্গ দেশ এবং বাংলাদেশ। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অধিকাংশ নেতাকর্মীই ছিলেন ‘বাংলাদেশ’ নামটির পক্ষে। শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু প্রস্তাবিত ‘বাংলাদেশ’ নামটিই সকলে একবাক্যে মেনে নেন।
এর পরদিন ৬ ডিসেম্বর বিভিন্ন পত্রিকায় ‘বাংলাদেশ’ নামকরণের খবর ছাপা হয় এবং আতাউর রহমান খান পাকিস্তান অবজার্ভার-এ বঙ্গবন্ধুর এই নামকরণের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দেয়। এছাড়া ন্যাপের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা ভাসানী ৭ ডিসেম্বর প্রকাশ্য জনসভায় পূর্ব পাকিস্তানের পুনঃনামকরণ সমর্থন করে বলেন, ‘ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ নামকরণই হবে সঠিক এবং যথার্থ। তিনিও যুক্তি দেন যে, যেহেতু এক ইউনিট ভেঙে গেছে, তাই বাংলাদেশ নামটি পুনরুজ্জীবিত হওয়া উচিত।’ সেই থেকে নথিপত্রতে পূর্ব-পাকিস্তান লেখা হলেও মুখে কেউ পূর্ব-পাকিস্তান উচ্চারণ করতেন না। সবাই বলতেন বাংলাদেশ।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা ঘোষণায়ও ‘বাংলাদেশ’ নামটি ব্যবহৃত হয়। বঙ্গবন্ধুর ইপিআর-এর বেতার বার্তা এবং পরবর্তীতে কালুরঘাট থেকে প্রচারিত স্বাধীনতার ঘোষণায়ও স্বাধীন দেশের নাম ‘বাংলাদেশ’ উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে মুজিবনগর সরকার স্বাধীনতার যে ঘোষণা প্রচার করে, তাতেও বলা হয় এই দেশটির নাম হলো ‘বাংলাদেশ’। দেশ স্বাধীনের পরে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর যখন প্রথম সংবিধান প্রণীত ও গৃহীত হয় সেই সময়ও সাংবিধানিক নাম দেওয়া হয় ‘বাংলাদেশ’।
জামায়াতে ইসলামীর বিরোধিতা
‘বাংলাদেশ’ নামটি নিয়ে বিরোধিতাও ছিল। ১৯৬৯ সালে বিভিন্ন বাঙালি রাজনীতিক শক্তিরা যখন নামকরণের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন, তখন জামায়াতে ইসলামী এর বিরোধিতা করেছিল। ১৯৬৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার তৎকালীন মার্কিন কনস্যুলেট ওয়াশিংটনকে একটি এয়ারগ্রাম বার্তায় জামায়াতের এই বিরোধিতার তথ্য জানিয়েছিল। মার্কিন কনস্যুলেটের ভাষ্যমতে, শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা ভাসানী, আতাউর রহমান খান প্রমুখ বাঙালি রাজনীতিক সমস্বরে ‘বাংলাদেশ’ নামকরণের দাবি তুলেছেন। আর জামায়াত বাঙালি রাজনীতিকদের প্রতি ইঙ্গিত করে উর্দুর পরিবর্তে বাংলা ভাষা প্রচলনে তাদের ভূমিকার সমালোচনা করেছে।
এছাড়া আতাউর রহমান খান যে পাকিস্তান অবজার্ভার পত্রিকায় ‘বাংলাদেশ’ নামকরণের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছিলেন, সেখানেই ১৫ ডিসেম্বর জামায়াতের ‘বাংলাদেশ’ ও বাংলা ভাষাবিরোধী একটি বিবৃতি ছাপা হয়। সেখানে সাবেক এমপি এবং তৎকালীন করাচি জামায়াতে ইসলামীর যুগ্ম-সম্পাদক মাহমুদ আজম ফারুকী অভিযোগ করেন যে, ‘বাংলাদেশ’ নামকরণের দাবি পাকিস্তানের অখণ্ডতা এবং সংহতির প্রতি হুমকি। এর মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদের অদেশপ্রেমিক সুর নিহিত।’ জামায়াতের নেতা ফারুকী আরও যুক্তি দেন, ‘অতীতে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা ভাষার প্রশ্ন তুলেছিলেন। তারা উর্দুর বিরোধিতা করেছিলেন। অথচ জাতীয় ভাষা হিসেবে উর্দু সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছিল। ওই নেতাদের ভূমিকার কারণে পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে বিভেদ আরও বিস্তৃত হয়।’
‘পাকিস্তান’ মুছে ‘বাংলাদেশ’
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর ভারত ও তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান সীমান্তে ৮ হাজারের বেশি পিলারে ‘ভারত-পাকিস্তান’ শব্দ দুটি লেখা হয়েছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও দেশের সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, সুনামগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে ভারতের সঙ্গে পিলারগুলোতে পাকিস্তান লেখা ছিল। অবশেষে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পিলারগুলো থেকে পাকিস্তান নাম মুছে ‘বাংলাদেশ’ লেখা হয়।